মহাকাব্য কি? মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ

মহাকাব্য কি

মহাকাব্য হলো একটি দীর্ঘ বর্ণনামূলক বা আখ্যানমূলক কবিতা। মহাকাব্যের আখ্যানবস্তু, সুর, শৈলী উন্নত এবং মর্যাদাপূর্ণ। সাহিত্যিক শব্দ হিসাবে, মহাকাব্য বীরত্বপূর্ণ কাজ এবং ঐতিহাসিক (বা মহাজাগতিক) গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা  করে।
মহাকাব্য সাধারণত এমন একজন নায়কের দুঃসাহসিক কাজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যার অতিমানবীয় বা ঐশ্বরিক গুণাবলী রয়েছে। এবং যার ভাগ্য প্রায়শই একটি উপজাতি, জাতি বা কখনও কখনও সমগ্র মানব জাতির ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। ইলিয়াড (The Iliad)ওডিসি (the Odyssey) এবং এনিডকে (the Aeneid) সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাকাব্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এপিক (Epic) শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ epos থেকে, যার অর্থ গল্প, শব্দ, এবং কবিতা। আনুমানিক ২১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় প্রথম মহাকাব্য রচিত হয়েছিল।
মহাকাব্যের সংজ্ঞা
 
এরিস্টটলের মতে, ‘মহাকাব্য হচ্ছে আদি, মধ্য, ও অন্তসম্বলিত বর্ণাত্মক কাব্য যাতে বিশিষ্ট কোন নায়কের জীবন কাহিনী অখন্ডরুপে একই বীরোচিত ছন্দের সাহার্যে কীর্তিত হয়।’

মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য

মহাকাব্যের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে সাহিত্যিক আকৃতি এবং কাব্যিক রূপ উভয় হিসাবে চিহ্নিত করে। নিম্মে একটি মহাকাব্যের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হল:
  • মহাকাব্যে সর্গবিভাগ থাকবে যার সংখ্যা হবে অষ্টাধিক।
  • সমগ্র সর্গ এক ছন্দে রচিত হবে। তবে, সর্গান্তে ছন্দের পরিবর্তন ঘটতেও পারে।
  • মহাকাব্যের উপজীব্য হবে পুরাণ, ইতিহাস, এবং কোন সত্য ঘটনা।
  • মূল কাহিনীর পাশে শাখা কাহিনী থাকতে পারে এবং কাহিনীতে থাকবে নাটকীয়তা।
  • এটি আনুষ্ঠানিক, সমুন্নত, এবং মর্যাদাপূর্ণ শৈলীতে লেখা।
  • সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর সাথে তৃতীয় ব্যক্তির বর্ণনা থাকবে।
  • মহাকাব্যের ভাষা হবে প্রসাদগুণসম্পন্ন, ওজস্বী, এবং অনুপ্রাস উপমা প্রভৃতি অলঙ্কারসমৃদ্ধ।
  • একজন কেন্দ্রীয় নায়ক থাকে যিনি অবিশ্বাস্যভাবে সাহসী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে।
  • নায়কের বিরুদ্ধে প্রায় অসম্ভব প্রতিকূলতা তৈরি করার জন্য অতিপ্রাকৃত বা অন্য জাগতিক বাধা থাকবে।
  • একটি সভ্যতা বা সংস্কৃতির ভবিষ্যত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রতিফলিত করে।
  • নায়কের জয়ের মধ্যদিয়ে মহাকাব্যের সমাপ্ত ঘটবে।

মহাকাব্যের উদাহরণ

মহাকাব্যগুলো ইউরোপ এবং এশিয়ার মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় এবং তাই সাহিত্যের প্রাচীনতম রচনাগুলোর মধ্যে এটি একটি। এখানে কিছু বিখ্যাত সাহিত্যিক মহাকাব্যের উদাহরণ দেওয়া হল:
১. দ্য ইলিয়াড এবং দ্য ওডিসি (The Iliad and The Odyssey): মহাকাব্যগুলো ৮৫০ এবং ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে গ্রীক কবি দ্বারা রচিত হয়েছে। এই কবিতাগুলো ছিল ট্রোজান যুদ্ধের ঘটনা এবং রাজা ওডিসিয়াসের ট্রয় থেকে প্রত্যাবর্তন যাত্রার বর্ণনা নিয়ে।
২. মহাভারত (The Mahābhārata): সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য।
৩. The Aeneid: মহাকাব্যটি ২৯ এবং ১৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে রোমান কবি ভার্জিল দ্বারা ল্যাটিন ভাষায় রচিত হয়েছে। এটি একটি আখ্যানমূলক কবিতা যা রোমানদের কাছে একজন ট্রোজান বংশোদ্ভূত এবং পূর্বপুরুষ অ্যানিয়াসের গল্পের সাথে সম্পর্কিত।
৪. বেউলফ (Beowullf): ৯৭৫ এবং ১০২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পুরানো ইংরেজিতে( Old English) লেখা মহাকাব্য। এটির লেখকের নাম জানা যায়নি, তবে বিউলফ ছিলেন একজন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান নায়ক যিনি দানব গ্রেন্ডেলের মধ্যে সংঘর্ষের জন্য পরিচিত।
৫. দ্য ডিভাইন কমেডি (The Divine Comedy): এটি দান্তে আলিঘিয়েরির একটি মহাকাব্য যা ১৩২০ সালে রচিত হয়েছিল। এর বিষয় হল নরক, পার্গেটরি এবং স্বর্গের মধ্য দিয়ে ভ্রমণকারী চরিত্র হিসাবে দান্তের একটি বিশদ বিবরণ।
৬. দ্য ফায়েরি কুইন (The Faerie Queene): এডমন্ড স্পেন্সারের একটি মহাকাব্য যা ১৫৯০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। মহাকাব্যটি রাণী প্রথম এলিজাবেথকে দেওয়া হয়েছিল।
৭. প্যারাডাইস লস্ট (Paradise Lost): জন মিল্টন খালি শ্লোক আকারে লেখা কাব্যটি ১৬৬৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এর বিষয়বস্তু হল স্বর্গ থেকে অ্যাডাম, ইভ এবং দেবদূত শয়তান বহিষ্কার করা।

Similar Posts