তাসখন্দ চুক্তি কি
তাসখন্দ চুক্তি হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তি। ঐতিহাসিক এই চুক্তির ফলে ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে রক্তক্ষয়ী ১৭ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটে। তাসখন্দ চুক্তি সম্পাদিত হয় ১০ জানুয়ারী, ১৯৬৬।
চুক্তিটি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রি পাকিস্তান ও ভারতকে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে যুদ্ধ বন্ধে আমন্ত্রণ জানান। উক্ত আলোচনায় উভয় দেশ তাদের সমস্ত সশস্ত্র বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে, কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, অর্থনৈতিক, উদ্বাস্তু এবং অন্যান্য প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়।
তাসখন্দ চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা, একে অপরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয় থেকে দূরে থাকা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করা।
তাসখন্দ চুক্তি পটভূমি
১৯৪৭ – ১৯৪৯ সালে সংগঠিত হয় প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যা প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধটি ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঠিক পরেই সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ডি ফ্যাক্টো সীমান্ত হিসাবে নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control) প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৬৫ সালের আগস্টে, কাশ্মীর অঞ্চলকে ঘিরে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সংগঠিত হয়। যুদ্ধটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শীতল যুদ্ধের অন্যতম দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাস্ট্র উভয় যুদ্ধরত দেশকে আলোচনার টেবিলে আনতে প্রতিটি কূটনৈতিক উপায় ব্যবহার করে।
শেষ পর্যন্ত, ২২শে সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ সমাপ্তির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার পর, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সমস্ত শত্রুতা বন্ধ করতে সম্মত হয়।
যুদ্ধ বন্ধের মধ্যস্থতাটি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রির মাধ্যমে করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি তৈরির জন্য ১৯৬৬ সালের ৪ থেকে ১০ জানুয়ারী তাসখন্দে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। সোভিয়েত অ্যালেক্সি কোসিগিনের পরিচালনায় এই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আইয়ুব খানের মধ্যে শান্তি আলোচনা হয়।
তাসখন্দ চুক্তির শর্ত
তাসখন্দ ঘোষণাপত্র অনুসারে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উভয় দেশকে অনুসরণ করতে হবে-
- ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।
- কেউই অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
- যুদ্ধবন্দীদের সুশৃঙ্খলভাবে স্থানান্তর করা হবে।
- দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি সাধনে কাজ করবে।
- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হবে।