কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারের সাথে সংযােগ ব্যবস্থাকেই টপোলজি বলে। তবে, নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলােকে তার দিয়ে যুক্ত করলেই হয় না। বরং, তারের ভিতর দিয়ে নির্বিঘ্নে ডেটা যাওয়া আসার জন্য যুক্তি নির্ভর সুনিয়ন্ত্রিত একটি পথের প্রয়ােজন আছে।
নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলােকে তারের মাধ্যমে যুক্ত করার যে নকশা এবং এর পাশাপাশি
সংযােগকারী তারের ভিতর দিয়ে ডেটা যাওয়া আসার জন্য যুক্তি নির্ভর পথের পরিকল্পিত এ সমন্বিত ধারণাকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপােলজি। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সাধারণত নিম্নলিখিত আকারে বিভক্ত।
1. বাস টপোলজি (Bus topology)
বাস টপোলজি একটি সংযােগ লাইনের সাথে সবগুলো নােড (কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস) যুক্ত থাকে। সংযােগ লাইনকে সাধারণত বাস বলা হয়। এর দুই প্রান্তে দুটি টার্মিনেটর থাকে। একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটার নােডের সংযােগ লাইনের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। অন্যান্য কম্পিউটারগুলি তাদের নােডে সেই সংকেত পরীক্ষা করে এবং কেবলমাত্র প্রাপক নােড সেই সংকেত গ্রহণ করে।
সংযুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারে আলাদা আলাদা এড্রেস থাকে। প্রেরিত তথ্য গমন পথে প্রত্যেকটি কম্পিউটার পরীক্ষা করে এবং ঠিকানাযুক্ত কম্পিউটারই শুধু সেটি গ্রহণ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি কম্পিউটার নােডের সঙ্গে আলাদাভাবে সংযুক্ত থাকে। তাই যে কোনাে কম্পিউটার থেকে বিছিন্ন করা যায়।
2. রিং টপোলজি (Ring topology)
রিং নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলাে নােড (কম্পিউটার যে বিন্দুতে যুক্ত থাকে তাকে নােড বলে) এর মাধ্যমে বৃত্তাকারপথে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তােলে। নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার ডেটা তথ্য (সংকেত) পাঠালে তা পরবর্তী নােডের দিকে প্রবাহিত করে। এভাবে তথ্যের একমুখী প্রবাহ পুরাে চক্রাকার পথ ঘুরে আসে এবং চক্রাকার পথের বিভিন্ন নোডে সংযুক্ত কম্পিউটার প্রয়ােজনে উক্ত সংকেত গ্রহণ করতে পারে।
কোনাে কম্পিউটারের সংকেত ও বৃত্তাকার জালের মধ্যে ঘুরতে থাকে, তবে শুধু ঠিকানা যুক্ত কম্পিউটারই তা গ্রহণ করতে পারে। কোনাে কম্পিউটার নােড থেকে বিছিন্ন হলে সমগ্র নােডটিই অকেজো হয়ে পড়বে। আবার নতুন কোনাে নােড জালে সৃষ্টি করতে হলে জাল ভেঙ্গে তা করতে হয়।
3. স্টার টপোলজি (Star topology)
স্টার নেটওয়ার্কে প্রত্যেকটি নােডে (কম্পিউটার, প্রিন্টার বা অন্য কোন ডিভাইস) একটি হাব (Hub) বা সুইচের (Switch) মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত থাকে। সংযুক্ত কম্পিউটার বা ডিভাইস সমূহ হাব এর মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করে ও ডেটা আদান-প্রদান করে। Hub টি এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের কম্পিউটারে সংকেত প্রেরণে সহায়তা করে থাকে। হাব অকেজো হলে সমগ্র ব্যবস্থাটি বিকল হয়ে পড়ে। কিন্তু কোনাে কম্পিউটার কাজ না করলে সমগ্র ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে।
4. ট্রি টপোলজি (Tree topology)
ট্রি টপােলজি এমন একটি নেটওয়ার্ক টপােলজি যাতে একটি (Root) নােডের সাথে সার্ভার বা বিশেষ কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে। এই রুট নােডের সাথে হায়ারারর্কি অনুসারে বিভিন্ন স্তরের ডিভাইস নেটওয়ার্ক হাব বা সুইচের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। ট্রি টপােলজিকে হায়ারার্কিক্যাল টপােলজিও বলা হয়। এ ব্যবস্থায় যাবতীয় কম্পিউটারকে কোনাে অন্তর্বতী মাথায় যুক্ত করা হয়। পরে এ মাথাকে উচ্চগতি সম্পন্ন সংযােগ পথ দ্বারা কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত করা হয়।
5. মেস টপোলজি (Mesh topology)
মেস টপোলোজিতে একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। এই নেটওয়ার্কের সুবিধা হলাে যে কোনাে দুটি নােডের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সংকেত আদান-প্রদান করা যায়। তাছাড়া কোনাে কম্পিউটার বা সংযােগ লাইন নষ্ট হয়ে গেলে তেমন কোনাে অসুবিধা হয় না। তবে, সংযােগ লাইনগুলাের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় খরচ একটিু বেশি হয়।
6. হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid topology)
স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে বলা হয় হাইব্রিড
নেটওয়ার্ক বলে।