দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ইউরোপকে আর্থিক সাহায্য করার যে প্রস্তাব করেন, তা মার্শাল প্ল্যান (Marshall Plan) নামে পরিচিত। মার্শাল প্লানের অধীনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। এতে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠে। পরিকল্পনাটি ইউরোপীয় পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম (European Recovery Program (ERP) হিসাবে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত হয়।
১৯৪৭ সালের জুন মাসে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক ভাষণে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ইউরোপ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাটি সমর্থন লাভ করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেন। এদের মধ্যে উইলিয়াম ক্লেটন ও জর্জ কেনান অন্যতম। সিনেটরদের মধ্যে আর্থার এইচ ভ্যান্ডারবার্গ এ প্রকল্প প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
৫ জুন ১৯৪৭ সালে, ইউরোপীয় দেশসমূহের একটি সভায় এ পুনর্গঠন প্লানটি উত্থাপিত হয়। পরিকল্পনা মতে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউরোপীয় দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়।
যদিও প্রথম অবস্থায় মার্শাল পরিকল্পনা ছিল একটি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম কিন্তু পরবর্তীতে এটি সমস্ত ইউরোপীয় জাতির সহযোগিতার বৃহত্তর ঐক্যের দিকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনার ভিত্তিটি উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠনের দিকে পরিচালিত করেছিল যা ভবিষ্যতের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক সামরিক জোট হিসাবে ভূমিকা পালন করবে। ফলস্বরুপ, ন্যাটো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার সামরিক জোটে প্রদার্পন করে।
জর্জ সি. মার্শাল তার এই প্রচেষ্টার জন্য ১৯৫৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে। আমেরিকান সাহায্যের উপর নির্ভরতা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পথ খুলে দিয়েছে। পরবর্তীতে, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারণা তৈরি করেছিল। ফলে, আমেরিকান হস্তক্ষেপ ছাড়া ইউরোপের রেলপথ, মহাসড়ক এবং বিমানবন্দরের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।
প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ‘‘বিজিতদের খাওয়ানো এবং সমর্থন করার জন্য প্রথম মহান জাতি।’’ মার্শাল প্ল্যানকে আমেরিকার সবচেয়ে সফল বৈদেশিক নীতি এবং সবচেয়ে কার্যকর বৈদেশিক সাহায্য কর্মসূচির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলোকে $13 বিলিয়নেরও বেশি সাহায্য দেওয়া হয়। যার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তি বা পরাজিত দেশ জার্মানি এবং ইতালি রয়েছে।