মন্ট্রিল প্রটোকল (Montreal Protocol) হলো বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর রক্ষা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি বা প্রটোকল, যার পুরো নাম Montreal Protocol on Substances that Deplete the Ozone Layer। ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, কানাডার মন্ট্রিলে প্রটোকলটি গৃহীত হয় এবং কার্যকর হয় ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি।
মন্ট্রিল প্রটোকলের লক্ষ্য হলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন স্তরের ক্ষয়কারী রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। প্রাথমিকভাবে, প্রটোকলটিতে ৪৬টি দেশ স্বাক্ষর করে, এই চুক্তিতে এখন পর্যন্ত বর্তমানে ১৯৭ টি দেশ এই প্রোটোকলের সাথে চুক্তিবদ্ধ আছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট মন্ট্রিল প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করে।
প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। মন্ট্রিল প্রোটোকল এ পর্যন্ত ৫ বার (১৯৯০, ১৯৯২, ১৯৯৭, ১৯৯৯ এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে) সংশোধিত হয়।
পটভূমি
বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর পুরো পৃথিবীকে একটি আবরণের মত ঢেকে রেখেছে যা আমাদের পৃথিবীকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করছে।
১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে, আমেরিকান রসায়নবিদ এফ. শেরউড রোল্যান্ড এবং মারিও মোলিনা তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি) যৌগগুলো সৌর বিকিরণের সাথে একত্রিত হয় এবং স্ট্রাটোস্ফিয়ারে গলে যায়, ক্লোরিন এবং ক্লোরিন মনোক্সাইডের পরমাণুগুলোকে নির্গত করে যা পৃথকভাবে বৃহৎ সংখ্যক মোলজোন ধ্বংস করতে সক্ষম। এই ক্লোরিন পরমাণুগুলো স্ট্রাটোস্ফিয়ারে প্রচুর পরিমাণে ওজোন (O3) ভেঙে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে এন্টার্কটিকা মহাদেশের উপরের ওজন স্তরে বিশাল এক ছিদ্র আবিষ্কৃত হয়। এই স্থান দিয়ে সহজেই সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করছে যা আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে ওজোন স্তর রক্ষা বিষয়ক মন্ট্রিল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮৭ সালে CFC এবং ২০১০ সালের মধ্যে HCFC উৎপাদন কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০-২০৭০ সালের মধ্যে ওজন স্তর আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। ডাচ রসায়নবিদ পল ক্রুটজেনের সাথে, রোল্যান্ড এবং মোলিনাকে এই কাজের জন্য ১৯৯৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।