কিয়োটো প্রটোকল

কিয়োটা প্রটোকল কি?
জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতারোধে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাধ্যতামূলকভাবে হ্রাসকরণের আন্তর্জাতিক চুক্তি হচ্ছে কিয়োটো প্রটোকল।
কিয়োটো প্রোটোকল হল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার লক্ষ্য হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে অবদানকারী গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ চুক্তি হিসাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিল। কিয়োটো প্রটোকলটি ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটোতে স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এটি কার্যকর হয়। কিয়োটো প্রোটোকল, পুরো নাম Kyoto Protocol to the United Nations Framework Convention on Climate Change।
কিয়োটো প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারীরা বৈশ্বিক উষ্ণতার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কমাতে জাতীয় কর্মসূচি তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। প্রোটোকলভুক্ত দেশগুলোকে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন উপায় প্রদান করা হয়, যেমন ক্লিন ডেভেলপমেন্ট, মেকানিজম এবং নির্গমন বাণিজ্য।
কিয়োটো প্রোটোকল জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) এর প্রথম সংযোজন হিসাবে ১৯৯৭ সালে গৃহীত হয়। স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ তাদের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে জাতীয় কর্মসূচি বিকাশের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), পারফ্লুরোকার্বন (PFCs), হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs), এবং সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (SF6), যা বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার সামগ্রিক বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত।
বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের মধ্যে রয়েছে,
  • সারা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হবে, যার ফলে নিম্ন অঞ্চল সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। উপকূলীয় অঞ্চল এবং কিছু দ্বীপ রাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিমজ্জন।
  • হিমবাহ, সামুদ্রিক বরফ এবং আর্কটিক পারমাফ্রস্টের গলে যাওয়া।
  • চরম জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয় যেমন বন্যা এবং খরা, এবং জলচ্ছাস।
  • এবং সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির ২০ থেকে ৩০ শতাংশের বিলুপ্তির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কিয়োটা সম্মেলনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত ১৯১টি দেশ উপস্থিত ছিল (কানাডা, দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া)। চুক্তির ভিত্তিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১২ সালের মধ্যে ৫.২ শতাংশ কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত অনুযায়ী বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫৫ শতাংশ উৎপাদনকারী দেশগুলোর স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ নিজ দেশে উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ কিয়োটো প্রটোকল চুক্তি অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০১ সালের ২২ অক্টোবর এবং কার্যকর হয় ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।

Similar Posts