দক্ষিণ এশিয়া : সংজ্ঞা ও ভৌগলিক সীমানা

দক্ষিণ এশিয়ার সংজ্ঞা 

দক্ষিণ এশিয়া হল এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, বর্তমানে এই অঞ্চলটি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। ভৌগোলিকভাবে, এটি ভারতীয় প্লেটে অবস্থিত এবং এর দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে হিমালয়, কারাকোরাম ও পামির পর্বত।
দক্ষিণ এশিয়া নামটি মূলত ব্রিটিশ রাজের প্রশাসনিক সীমানা থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মূল অঞ্চল ছিল এই দক্ষিণ এশিয়া।
বিশ্বের ৭টি মহাদেশের মধ্যে এশিয়া সবচেয়ে বড়। এর ভৌগলিক সীমানা, রাজনৈতিক ইউনিট এবং জাতিগত গোষ্ঠী উভয়ই বিস্তৃত। এশিয়া মহাদেশ আয়তনে বিশাল হওয়ায় এর ভৌগলিক সীমানা কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভক্ত যেমন দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।

দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগলিক সীমানা

দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া মহাদেশের মূল অংশ থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান সীমানা হল ভারত মহাসাগর থেকে, হিমালয় এবং আফগানিস্তান পর্যন্ত। পশ্চিমে আরব সাগরের তীরবর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। পূর্বে বঙ্গপসাগরের সাথে ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা।
দক্ষিণ এশিয়া প্রায় ৫.২ মিলিয়ন বর্গ কিমি (২ মিলিয়ন বর্গ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত, যা এশীয় মহাদেশের ১১.৭১% বা পৃথিবীর স্থলভাগের ৩.৫%। দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১.৮৯১ বিলিয়ন যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল।
ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ল্যান্ডমাস(ভূমিরূপ) তৈরি হয়। এই ক্রিয়াটি প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং যা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী (হিমালয়) জন্ম দিয়েছে। দক্ষিণ এশীয় ল্যান্ডমাসের অধিকাংশই মূল ভারতীয় প্লেটের ভূমি থেকে গঠিত।
“ভারতীয় উপমহাদেশ” ও “দক্ষিণ এশিয়া” শব্দ দুটি কখনও কখনও একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘‘ভারতীয় উপমহাদেশ’’ মূলত একটি ভূতাত্ত্বিক শব্দ, যা প্রাচীন গন্ডোয়ানা থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাওয়া ভূমি খণ্ডকে নির্দেশ করে। এই ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলে মূলত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অন্তর্ভুক্ত। ঐতিহাসিক ক্যাথরিন অ্যাশার ও সিন্থিয়া টালবট বলেন যে ‘‘ভারতীয় উপমহাদেশ” শব্দটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রাকৃতিক ভৌত ভূমির বর্ণনা প্রদান করে, যা বাকী ইউরেশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত বিচ্ছিন্ন ছিল।’’
দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরাঞ্চলে হিমালয় পর্বতমালা, যেখান থেকে তিনটি প্রধান নদী (সিন্ধু নদ, গঙ্গা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ) দক্ষিণ এশিয়া অতিক্রম করেছে। সিন্ধু নদী, যা হাজার হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতার কেন্দ্রস্থল, যা তিব্বতে শুরু হয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রস্থল দিয়ে প্রবাহিত হয়। গঙ্গা নদী উত্তর ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদী তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পূর্ব দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তটি এমনভাবে অবস্থিত, যার সঙ্গে সামুদ্রিক ও স্থলপথে অন্যন্য অঞ্চল সংযুক্ত। কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে পূর্ব এশিয়া। পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হলো চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া। এছাড়াও রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা

Similar Posts