সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) হল একটি ইউরেশীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্থা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ, জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন এই সংস্থায় অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এটি একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা যা চীনের সাংহাইতে ১৫ জুন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৯টি সদস্য রাষ্ট্র (যথাক্রমে- চীন, রাশিয়া, ভারত, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান) নিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা গঠিত। সংস্থাটির সদর দপ্তর চীনের রাজধানী বেইজিং শহরে অবস্থিত। বর্তমান মহাসচিব হলেন চীনের ঝাং মিং, যিনি ১ জানুয়ারী ২০২২ -এ তাঁর কার্যভার গ্রহণ করেন।
এটির ৩টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র (আফগানিস্তান, মঙ্গোলিয়া, বেলারুশ) এবং ৯টি “ডায়ালগ পার্টনার” (আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, সৌদি আরব, মিশর, কাতার, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক) রয়েছে।
উদ্দেশ্য
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উদ্দেশ্য হল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং পারস্পরিক আস্থা জোরদার করা; আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো; সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সংগঠিত অপরাধ এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা; রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং শক্তি, সেইসাথে পরিবেশগত সমস্যাগুলোতে সহযোগিতা জোরদার করা।
এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে চীন ও রাশিয়ার প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ রয়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে দুই দেশের মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে চীনের সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং রাশিয়ার ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নসহ (ইইইউ) ইউরেশিয়ায় বহুপক্ষীয় সংযোগ প্রকল্পের সঙ্গে এসসিওর উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে সংযুক্ত করা। অর্থাৎ সিল্ক রোড উদ্যোগ ও ইইইউর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করার মাধ্যমে এসসিওকে একটি বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারি হিসেবে গড়ে তোলা।
পটভূমি
চীন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া এবং তাজিকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে উত্সাহিত করার জন্য ২রা এপ্রিল ১৯৯৬ সালে ‘‘সাংহাই ফাইভ’’ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি করতে, সীমান্ত অঞ্চলগুলিকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে উত্সাহিত করার জন্য “সাংহাই ফাইভ” এর আবির্ভাব।
১৫ জুন ২০০১ সালে, সাংহাই ফাইভ এর সদস্য দেশগুলোর নেতারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সাথে একটি নতুন সংস্থা তৈরি করতে সাংহাইতে মিলিত হন।পরবর্তীতে, সাংহাই ফাইভের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ নামের একটি আঞ্চলিক সংস্থা। ছয়টি সদস্য দেশ (চীন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিম্তান, রাশিয়া এবং তাজিকিস্তান) সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। এছাড়াও, বৈঠকে “সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থা মোকাবিলায় সাংহাই কনভেনশন” স্বাক্ষরিত হয়।
SCO সনদটি ৭ জুলাই ২০০২-এ স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৩-এ কার্যকর হয়। ভারত ও পাকিস্তান ৯ জুন ২০১৭-এ যোগদান করেছে। ২০২১ সালে ইরান সংস্থাটির সদস্যপদ লাভ করে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশ ৯টি।
গঠন
১. রাষ্ট্রপ্রধানদের কাউন্সিল (Council of Heads of State)
রাষ্ট্রপ্রধানদের কাউন্সিল হল সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এই কাউন্সিল এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়, যা প্রতি বছর সদস্য রাষ্ট্রের রাজধানী শহরগুলোর একটিতে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র প্রধানদের বর্তমান কাউন্সিল নিম্মোক্ত ব্যাক্তিদের নিয়ে গঠিত যেমন,
শি জিনপিং (চীন)
ভ্লাদিমির পুতিন (রাশিয়া)
নরেন্দ্র মোদি (ভারত)
কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ (কাজাখস্তান)
সাদির জাপারভ (কিরগিজস্তান)
শেহবাজ শরীফ (পাকিস্তান)
ইমোমালি রহমান (তাজিকিস্তান)
শভকাত মিরজিওয়েভ (উজবেকিস্তান)
২. সরকার প্রধানদের কাউন্সিল (Council of Heads of Government)
সরকার প্রধানদের কাউন্সিল হল সংস্থার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিষদ। এই পরিষদ বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনও করে, যে সময়ে সদস্যরা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এই পরিষদ সংগঠনের বাজেট অনুমোদন করে। বর্তমান সরকার প্রধানদের কাউন্সিল নিম্মোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত।
লি কেকিয়াং (চীন)
নরেন্দ্র মোদি (ভারত)
আলিহান স্মাইলভ (কাজাখস্তান)
আকিলবেক জাপারভ (কিরগিজস্তান)
শেহবাজ শরীফ (পাকিস্তান)
মিখাইল মিশুস্টিন (রাশিয়া)
কোহির রসুলজোদা (তাজিকিস্তান)
আবদুল্লাহ আরিপভ (উজবেকিস্তান)