বিশ্বগ্রাম কি? সংজ্ঞা, উপাদান, সুবিধা ও অসুবিধা

বিশ্বগ্রাম কি?

বিশ্বগ্রাম (Global village) হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করে। পৃথিবীব্যাপী স্বল্প সময়ের যোগাযোগ সুবিধার ফলেই বিশ্বকে একটি গ্রাম হিসেবে তুলনা করা হচ্ছে।
মার্শাল ম্যাকলুহান গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব গ্রামকে এমন একটি পরিস্থিতি হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে বিশ্বব্যাপী সমস্ত মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি সংযুক্ত হবে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ফলে বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে।
বিশ্বগ্রামের সংজ্ঞায় ম্যাকলুহান বলেন, গ্লোবাল ভিলেজ (global village) শব্দটি এই ধারণাটি প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে যে সারা বিশ্বের মানুষ নতুন মিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত।
১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে, তিনি “global village” শব্দটি প্রবর্তন করেন। তার মতে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশ্বব্যাপী মানুষকে দ্রুত সংযুক্ত করছে এবং পৃথিবীকে একটি গ্রামে রূপান্তরিত করছে। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত তার The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man বইটিতে এই শব্দটি প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে ‘Understanding Media: The Extensions of Man’  বইয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি সকলের সামনে প্রকাশ করেন।  এই জন্য মার্শাল ম্যাকলুহানকে বিশ্বগ্রামের জনক বলা হয়।
ম্যাকলুহান ছিলেন একজন যোগাযোগ তত্ত্ববিদ যিনি ব্যাপকভাবে গণমাধ্যম অধ্যয়ন করেছিলেন, বিশেষ করে কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং টেলিভিশনের মতো ক্ষেত্রে। তিনি ১৯১১ সালে কানাডার আলবার্টাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৪ সালে ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি কেমব্রিজে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তারপর, তিনি কানাডায় বিভিন্ন পদে কাজ করেন। বিখ্যাত টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ১৯৪৬ সালে নিয়োগ দেয় এবং তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সেখানে কাজ করেন।

বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদান

বিশ্বগ্রামের প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদানগুলো হলো,
১. হার্ডওয়্যার (Hardware)
২. সফটওয়্যার (Software)
৩. ইন্টারনেট কানেকটিভিটি
৪. ডেটা (Data)
৫. সক্ষমতা (Capacity)
১. হার্ডওয়্যার: বিশ্বগ্রামে যে কোনো ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রী। হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটার, যন্ত্রপাতি, মোবাইল, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ডিভাইস।
২. সফটওয়্যার: বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সফটওয়্যারের অবদান অপরিসীম। সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েব ব্রাউজ, মিডিয়া সফটওয়্যার, ওয়ার্ড সফটওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফ্টওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা।
৩. ইন্টারনেট কানেকটিভিটি: বিশ্বগ্রামের জন্য নিরাপদ রিসোর্স শেয়ার গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট কানেকটিভিটির মাধ্যমে বিভিন্ন উপাত্ত ও তথ্য একে অপরের সাথে আদান প্রদান করতে পারছে। এক্ষেত্রে টেলিকমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
৪. ডেটা বা ইনফরমেশন: বিশ্বগ্রামে বিভিন্ন তথ্য থাকবে যা কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করে পাওয়া যায়। বিশ্বগ্রামে ডেটা ও তথ্যকে মানুষ তার প্রয়োজন একে অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে শেয়ার করতে পারে।
৫. সক্ষমতা: বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলোর মধ্যে ব্যবহারকারীর জ্ঞান বা সক্ষমতা অন্যতম। বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্যওপ্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের সক্ষমতার ওপর এর সুফল নির্ভর করছে।

বিশ্বগ্রামের সুবিধা অসুবিধা

সুবিধাসমূহ
  • মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোনো স্থানে যোগাযোগ করা যায়।
  • ভৌগোলিক দূরত্ব কমে আসে।
  • অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বই পড়া যায়।
  • ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণ করে বিদেশি ডিগ্রি লাভ করা যায়।
  • বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
  • টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের নামি-দামি চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব এবং অন্যন্য মাধ্যম ব্যবহার করে বিনোদন উপভোগ করা যায়।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জন করা যায়।
  • অনলাইনে প্রচুর কাজ থাকায় বেকারত্ব হ্রাস পায়।
  • সময় এবং অর্থ
অসুবিধাসমূহ 
  • হ্যাকিং এর মাধ্যমে তথ্য চুরি হয় এবং তথ্যের গোপনীয়তায় নষ্ট হয়।
  • মিথ্যা তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
  •  সত্যিকারের বন্ধুর চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে কাছের মানুষের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।
  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হতে পারে।
  • পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়।
  • অত্যাধিক প্রযুক্তি আসক্তির কারণে শারীরিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফলে অনেক কাজ সহজ হওয়ায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
  • সাইবার আক্রমণের শিকার হতে হয়।
  • সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যায়।