দর্পণ কি?
পদার্থ বিজ্ঞানে দর্পন বা আয়না হল এমন একটি মসৃণ তল যেখানে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। অর্থাৎ যে মসৃণ তলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে, তাকে দর্পণ বলে।
সাধারণত কাচের বিপরীত পৃষ্ঠে সিলভারিং বা ধাতুর প্রলেপ লাগিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়। বিপরীত পৃষ্ঠকে দর্পণের পৃষ্ঠ বা প্রতিফলক পৃষ্ঠও বলা হয়। আলো দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠে আপতিত হওয়ার সময় বেশ কিছুটা আলো তল কর্তৃক শোষিত হয় এবং বাকিটা প্রতিফলিত হয়। ফলে দর্পণে বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখা যায়। আয়না ছাড়াও যেকোন মসৃণ পৃষ্ঠ, স্থির পানি, মসৃণ বরফ ইত্যাদি দর্পণের মত কাজ করে।
দর্পণের প্রকারভেদ
দর্পণ প্রধানত দু প্রকার। যথা, সমতল দর্পণ এবং গোলীয় দর্পণ।
১.সমতল দর্পণ (Plane mirror)
যখন কোন সমতল পৃষ্ঠ মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে, তাকে সমতল দর্পণ বলে। উদাহরণস্বরুপ, চেহারা দেখার জন্য যে আয়না ব্যবহার করা হয়, তা মূলত একটি সমতল দর্পণ।
২.গোলীয় দর্পণ (Spherical/Curved mirror)
প্রতিফলক পৃষ্ঠ যদি মসৃণ ও গোলীয় হয় অর্থাৎ কোন গোলকের অংশবিশেষ হয় এবং আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে, তখন তাকে গোলীয় দর্পণ বলে। গোলীয় দর্পণ আবার দুই প্রকার। যথা: উত্তল দর্পণ এবং অবতল দর্পণ।
- উত্তল দর্পণ (Convex Mirror): যদি কোন গোলকের উত্তল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় কাজ করে, তবে তাকে উত্তল দর্পণ বলে। অর্থাৎ গোলীয় দর্পণের বাইরের উত্তল পৃষ্ঠটি উত্তল দর্পণ হিসেবে কাজ করে। উত্তল দর্পণ একটি অপসারী দর্পণ, কারণ সমান্তরাল আলোকরশ্মি উত্তল দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলিত হওয়ার পর অপসারী রশ্মিগুচ্ছে পরিণত হয়।
- অবতল দর্পণ (Concave Mirror): যদি কোন গোলকের অবতল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় কাজ করে, তবে তাকে অবতল দর্পণ বলে। অর্থাৎ আলোর নিয়মিত প্রতিফলন যদি গোলকীয় দর্পণের অবতল পৃষ্ঠ থেকে সংঘটিত হয়, সে দর্পণকে অবতল দর্পণ বলে। এটি একটি অভিসারী দর্পণ, কারণ সমান্তরাল আলোকরশ্মি অবতল দর্পণে আপতিত হওয়ার পর প্রতিফলিত হয়ে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়।
দর্পণের ব্যবহার
আমরা বিভিন্ন কাজে দর্পণ ব্যবহার করে থাকি। নিম্মে দর্পণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার দেওয়া হল।
সমতল দর্পণের ব্যবহার
- চেহারা দেখার জন্য সমতল দর্পণ ব্যবহার হয়।
- চোখের ডাক্তারগণ রোগীর দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করার জন্য সমতল দর্পণ ব্যবহার করে থাকে।
- এটি দিয়ে পেরিস্কোপ তৈরি করা হয়।
- পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে বাঁকে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন আলোকীয় যন্ত্রপাতি যেমন- টেলিস্কোপ, প্রজেক্টর, লেজার তৈরি করতে সমতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
- চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদির সুটিং এর সময় সমতল দর্পণ দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে কোন স্থানের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করা হয়।
অবতল দর্পণের ব্যবহার
- রূপচর্চা ও দাঁড়ি কাটার সুবিধার জন্য অবতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়। কারণ সুবিধাজনক আকৃতির অবতল দর্পণ ব্যবহার করে মুখমণ্ডলের বিবর্ধিত এবং সোজা প্রতিবিম্ব তৈরি যায়।
- অবতল দর্পণ ব্যবহার করে দাঁতের চিকিৎস করা হয়।
- স্টিমার বা লঞ্চের সার্চলাইটে অবতল দর্পণ ব্যবহার করে গতিপথ নির্ধারণ করা হয়।
- অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোকশক্তি, তাপশক্তি ইত্যাদি কেন্দ্রীভূত করে কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত বা আগুন জ্বালাতে ব্যবহার করা হয়।
- এটি রাডার এবং টিভি সংকেত সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়।
- ডাক্তাররা চোখ, নাক, কান ও গলা পরীক্ষা করার সময় এ দর্পণ ব্যবহার করেন। কারণ অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোক রশ্মিগুচ্ছকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা যায়।
উত্তল দর্পণের ব্যবহার
- উত্তল দর্পণ সর্বদা অবাস্তব, সোজা এবং খর্বিত প্রতিবিম্ব গঠন করে বিধায় পেছনের যানবাহন বা পথচারী দেখার জন্য গাড়িতে ভিউ মিরর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- উত্তল দর্পণের সাহায্যে বিস্তৃত এলাকা দেখতে পারা যায় বলে দোকান বা শপিংমলে নিরাপত্তার কাজে উত্তল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
- প্রতিফলক টেলিস্কোপ তৈরিতে এ দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
- বিস্তৃত এলাকায় আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেয় বলে রাস্তার বাতিতে প্রতিফলক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।