নিষ্ক্রিয় গ্যাস কি? বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার

১৮ শতকের শেষের দিকে, হেনরি ক্যাভেন্ডিশ নিষ্ক্রিয় গ্যাস সমূহ আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে, এগুলোকে IUPAC দ্বারা পর্যায় সারণির ১৮ তম গ্রুপ বা শূন্য গ্রুপে স্থান দেওয়া হয়।
 

নিষ্ক্রিয় গ্যাস কি?

রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং কক্ষ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় মৌলিক গ্যাসকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে।
অর্থাৎ পর্যায় সারণির যেসব মৌলের পরমাণু ইলেকট্রন আদান, প্রদান বা শেয়ারের মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে না, তাদেরকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়। একে নোবেল গ্যাস বা বিরল গ্যাসও বলা হয়।
পর্যায় সারণির ১৮ নম্বর গ্রুপে বা শূন্য গ্রুপে নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের অবস্থান। নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহ হচ্ছে হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (Xe), রেডন (Rn) এবং ওগানেসন (Og)।

এই গ্যাসগুলো রাসায়নিকভাবে খুবই নিষ্ক্রিয়, কারণ এদের পরমাণুর সর্ববহিরস্থ কক্ষপথে ইলেকট্রনের সংখ্যা পরমাণুর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার সমান অর্থাৎ ৮টি। সাধারণ অবস্থায় নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো বর্ণহীন, গন্ধহীন উচ্চ আয়নিক বিভব সম্পন্ন এবং এক পরমাণুক গ্যাস। এদের তরলীকরণ বেশ কষ্ট সাপেক্ষ। এগুলো পানিতে সামান্য পরিমাণে দ্রবণীয়।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস সমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস
He (2) : 1s²
Ne (10) : 1s² 2s² 2p⁶
Ar (18) : 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶
Kr (36) : 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d¹º 4s² 4p⁶
Xe (54) : 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d¹º 4s² 4p⁶ 4d¹º 5s² 5p⁶
Rn (86) : 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d¹º 4s² 4p⁶ 4d¹º 5s² 5p⁶ 4f¹⁴ 5d¹º 6s² 6p⁶

নিষ্ক্রিয় গ্যাসের বৈশিষ্ট্য

নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম নিম্মে দেওয়া হল।
  • সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো এক পরমাণুক গ্যাস।
  • নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর বর্ণ, স্বাদ বা গন্ধ নেই।
  • এগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অত্যন্ত কম।
  • দুর্বল আকর্ষণ বল থাকার কারণে এদের গলনতাপ ও বাষ্পীয়ভবন তাপ কম।
  • আকর্ষণ বল কম থাকার কারণে নিস্ক্রিয় গ্যাসগুলোকে তরলে পরিণত করা অনেক কঠিন।
  • গ্যাসগুলো গন্ধহীন, অদাহ্য, বর্ণহীন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া কম অংশগ্রহণ করে।
  • নিষ্ক্রিয় গ্যাস সমূহ জলে অদ্রবণীয়।
  • নিয়ন ছাড়া সমস্ত নিষ্ক্রিয় গ্যাস বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
  • এদের ঘনত্ব কম।
  • কক্ষ তাপমাত্রা এবং চাপে গ্যাসীয় অবস্থায় বিদ্যমান।
  • খুব কম ইলেক্ট্রোনেগেটিভিটি।
  • এগুলো দাহ্য নয়।
  • সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ বা দান করে না।
  • বৈদ্যুতিক প্রবাহে বিভিন্ন রঙের আলো নির্গত করে।

নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ব্যবহার

দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে নিস্ক্রিয় গ্যাস সমূহ ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন,
১. হিলিয়াম (Helium)
  • বেলুন ও আকাশ যানে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।
  • অক্সিজেনের সাথে হিলিয়াম মিশ্রিত করে ডুবুরীরা তাদের শ্বাসকার্য চালায়। এতে সমুদ্রের তলদেশে উচ্চ চাপে বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাসের যে অসুবিধা হয় তা দূরীভূত হয়।
  • নিম্ন তাপমাত্রার গবেষণাকার্যে তরল হিলিয়াম (স্ফুটনাঙ্ক ৪.১ K) ব্যবহৃত হয়।
  • নিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপে ব্যবহৃত গ্যাস থার্মোমিটারে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।
  • বায়ু অপেক্ষা হিলিয়াম হাল্কা বলে এটি বৃহদাকার আকাশ যানের টায়ারে ব্যবহৃত হয়।
  • এটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, টিউব লাইট ও রেডিও টিউবে ব্যবহৃত হয়।
২. নিয়ন (Neon)
  • নিয়ন প্রধানত আলোক উৎপাদন ও আলোকসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। নিয়ন আলো কুয়াসার মধ্যেও দেখা যায় -এই জন্য বৈমানিকগণ আলোক-সংকেতরূপে এই আলো ব্যবহার করে থাকেন।
  • ভোল্টমিটার, রেকটিফায়ার প্রভৃতি যন্ত্র সংরক্ষণে হিলিয়াম-নিয়ন গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
৩. আর্গন (Argon)
  • আর্গন প্রধানত ইলেকট্রিক বাল্বে ব্যবহৃত হয়। বাল্বে আর্গন থাকার কারণে টাংস্টেন ফিলামেন্ট সহজে বাষ্পীভূত হয় না।
  • রেডিও-এর বাল্ব ও রেকটিফায়ার-এ আর্গন ব্যবহৃত হয়।
  • ঝালাই-এর কাজে নিষ্ক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে আর্গন ব্যবহৃত হয়।
  • গ্যাস ক্লোমাটোগ্রাফীতেও এর ব্যবহার আছে।
  • তেজস্ক্রিয়তা মাপার যন্ত্র আর্গন গ্যাস ব্যবহার হয়।
৪. ক্রিপটন (Krypton)
  • আর্গনের মত ক্রিপটনও টিউব বাতিতে ব্যবহৃত হয়।
  • কসমিক রশ্মি পরিমাপে আয়নীকরণ প্রকোষ্ঠে  ক্রিপটন ব্যবহৃত হয়।
  • খনি-শ্রমিকদের ‘ক্যাপ-ল্যাম্পে’ ক্রিপটন ব্যবহার করা হয়।
  • তীব্র আলো সৃষ্টির জন্য ফটোগ্রাফিক ফ্ল্যাশ বাল্বে  ক্রিপটন ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপক যন্ত্রে ক্রিপটন ব্যবহার  করা হয়
৫. জেনন (Xenon)
  • দ্রুত গতিসম্পন্ন ফ্লাশ-লাইটে জেনন ব্যবহার করা হয়।
  • গামা রশ্মি, নিউটন ও অন্যান্য নিউক্লিয় কণা শনাক্তকরণের জন্য বুদবুদ প্রকোষ্ঠে জেনন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
৬. রেডন (Radon)
  • রেডিও-থ্যারাপি চিকিৎসায় শরীরে ক্ষতিকর বৃদ্ধি নাশে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার কাজে রেডন ব্যবহার করা হয়।
  • তেজস্ক্রিয় গবেষণার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়।
৭. ওগানেসন (Oganesson)
যদিও এর অস্তিত্ব প্রকৃতি নেই। ফলে, এর গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, ঘনত্ব, ভৌত উপাদান ইত্যাদি অজানা।

Similar Posts