২৬ শে মার্চ এর কবিতা (৩০ টি+) | স্বাধীনতা নিয়ে ছন্দ /স্বাধীনতা কবিতা আবৃত্তি|ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
২৬ শে মার্চ এর কবিতা
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, বাঙ্গালীদের জীবনে এক অনন্যসাধারণ দিন। স্বাধীনতার ৫১ বছরের স্বর্ণময় মুহূর্তে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা নিয়ে ছন্দ /স্বাধীনতা কবিতা আবৃত্তি|ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
সংগ্রাম চলবেই – সিকান্দার আবু জাফর
রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো
অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে
দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত
সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া
পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা
আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে
তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা
কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি
আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা
তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো
তুমি বাংলা ছাড়ো
একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি
ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি
বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি
আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা
যোগ বিয়োগে মিলিয়ে
নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো
আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো
আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা
আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া
কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি
আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা
তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো
তুমি বাংলা ছাড়ো।
মা ও মাটির প্রতি
——রিয়েল আবদুল্লাহ
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ বুকের দরাজ খুলে
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ পিপীলিকার মতো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে,
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ংকর কিছুর প্রত্যাশা করে,
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ নতুন করে জন্ম নেয় কৃষ্ণগহ্বর থেকে,
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ রক্তগঙ্গাকে ভাবে একটা মামুলি পুকুর ,
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ বিনা অস্ত্রেই হয়ে ওঠে একেকটি আণবিক বোম–সে হলো মা ও মাটি।
যে দুটি শব্দের জন্য মানুষ নিমিষেই আঁকে আপ্লুত আলপনার মানচিত্র –সে শব্দ দুটিও মা কিংবা মাটি।
এই মা কিংবা মাটিই পৃথিবীর তাবৎ মানুষের আশ্রয়স্থল।
নিশ্বাসের শুরু কিংবা শেষ।
বিরতিহীন কর্মযজ্ঞের প্রারম্ভিকতা বা সমাপনী।
এক মা জন্ম দিয়ে আরেক মায়ের হাতে তুলে দেয়
আর সেই মা আলো বাতাস খাদ্য দিয়ে লালন করে আমৃত্যু।
শব্দদুটি থাকে আত্মার গভীরে
যেখান থেকে নেমে আসে অমৃতধারা
আর সে অমৃতধারা বিনে কেউ কখনোই বাঁচতে পারে না।
মা ও মাটির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি চিরদিন।
কবিতাঃ স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা
কবিঃ সালমান আহমদ
প্রকাশঃ ১৭ ই সেপ্টেম্বর ২০২১।
স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা
লেখকঃ সালমান আহমদ
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা!
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
লাখো জনতার হৃদয়বিদারক
স্মৃতিকথা তুমি স্বাধীনতা ।
যেদিন বাংলা বলাতে ছিল যত বাধা
সেদিন স্বাধীনতা ।
সেই কালো রাতের অস্থির অবস্থা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৫ শে মার্চের করুন স্মৃতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৬ শে মার্চের ডাক দেয়া জনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
শত মা বোনের মানহানির যত কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা ।
দামাল ছেলের প্রাণের অস্থিরতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
বাঙালির থাবায় শত্রুদের পরাধীনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
এক ঝাক তরুনের জেগে ওঠার কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
১৬ ডিসেম্বরের ইতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
কবিতার নাম-আমার দেশ স্বাধীনতা
কলমে-মিলি কবিরাজ
মানুষের অনুভূতি যত গুলো
সুন্দর অনুভূতি ভালোবাসা
যা কিছু করণীয় পৃথিবীতে
মাতৃভূমির জন্য মধুর সবচেয়ে
এই ভালোবাসা হয়নি যাদের অনুভব
নেইতো কিছু তারমধ্যে দুর্ভোগ ্
হয়েছিল একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ
মাতৃভূমিকে বাঁচাবার জন্য
জানবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
স্বাধীন বাংলার ইতিহাস
গর্বে ফুলবে বুক বীরত্বআত্মত্যাগ
জাগবে ভালোবাসা দেশের জন্য
সোনালী ঊষালগ্নে নব কিশলয় নন্দিত
হিমসকালে তুষার স্নিগ্ধা কুমারী
কুড়ায় আঁচলে স্বাধীনতা অঞ্জলী ভরি
গণহত্যা ২৫ শে মার্চের রাতে
স্বাধীনতা ২৬ শে মার্চের প্রভাতে
গণযুদ্ধ নেই কোন মানবতা
গ্লানি নিঃশংস নিষ্ঠুরতা
ঝরে পরলো তাজা প্রাণ লক্ষ লক্ষ
রঞ্জিত হল বিদেশি অস্ত্র
বাঙালি বক্ষ রক্ত
লক্ষ শহীদ প্রাণ দিয়
দেখেছেন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন
প্রিয় মাতৃভূমিতে মুক্তিযোদ্ধার হাতে
হাত রেখে নতুন প্রজন্ম
বলবে এনেছ স্বাধীনতা প্রিয় ভাই বন্ধু
তাইতো এনেছি অনেক ভালোবাসা
শুধুই তোমাদের জন্য
বলবে মধুর স্বরে
যে স্বপ্ন তোমরা দেখেছিলে
গড়ে তুলবো সেই সোনালি বাংলাদেশআঁকবো সবুজের রংগে লাল পতাকা
সবুজ-শ্যামল ধানক্ষেত
গড়ে তুলবো সেই বাংলাদেশ
গরবো সেই সোনালী বাংলা
শোধ করবো তোমাদের রক্তের ঋণ।
২৬ শে মার্চ
মোঃ শরিফুল ইসলাম
অমর পিতা (২৬ শে মার্চের কবিতা)
অতীত নিয়ে বর্তমানের কথা
স্বাধীনতা
লেখাঃ সাব্বির রহমান
অগ্নিঝরা স্বাধীনতার মাস
নাম ছিলো তার মার্চ,
এই মাসেতেই পাকিস্তানিরা
করেছিলো অপারেশন সার্চ।
রাঁওফরমান আর টিক্কা খাঁন
ছিলো তাদের নেতা,
ঢাকা সহ পূর্ব পাকিস্তানে
করলো নর হত্যা।
বাঙালি নিধনে সেদিন তারা
হয়েছিলো উম্মাদ,
কেউ তো শোনেনি সেদিন এই
বাঙালির আর্তনাদ।
মুজিব নামটি সবাই জানে
ছিলো বাংলার ছেলে,
২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে
ভরলো তাকে জেলে।
তার আগেই হয়েছিলো পূরণ
সুপ্ত বাসনা,
বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলো
স্বাধীনতার ঘোষণা।
স্বাধীনতা তুমি-শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
একটি পতাকা পেলে-হেলাল হাফিজ
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না
বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,‘পেয়েছি,পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।
বিজয় মানে স্বাধীনতা-হারুনুর রশীদ খান ( ব্রাক্ষণবাড়িয়া )
বিজয় মানে খাঁচা ভাঙা
স্বাধীন পাখি নীল আকাশে ওড়া
বিজয় মানে আম কুড়ানো
এলোকেশী কিশোরীর অবাধ চপলতা
বিজয় মানে মাঝির কণ্ঠে
ভাটিয়ালী গান গাওয়া
বিজয় মানে শাপলা বিলে
টুপ টুপ ডুব শলুক খোঁজা
বিজয় মানে গগণচারী
একাত্তরের স্মৃতির মিনার
বিজয় মানে ধানের ঘ্রাণে
সবুজ প্রাণে স্বপ্ন বিলাস
বিজয় মানে লক্ষ তারার নিয়ন আলোয়
যেমন খুশি স্বপ্ন দেখা
বিজয় মানে স্বাধীনতা
বিজয় মানে ভালোবাসা
স্বাধীনতা-জাহিদুল ইসলাম (শ্যামলী ,ঢাকা।)
স্বাধীনতা আমার
পিতাহীন জননীর সন্তান!
স্বাধীনতা আমার
কিশোরী বোনের ধর্ষিত মুখ!
স্বাধীনতা আমার
বিধবা মায়ের চোখের জল!
স্বাধীনতা আমার
পঙ্গু বাবার হুইল চেয়ার।
স্বাধীনতা তুমি
বিকেলের আকাশে ধবল বক,
স্বাধীনতা তুমি
নিশ্চিন্তে উড়া সোনালি-ডানা চিল।
স্বাধীনতা তুমি
কোকিলের কণ্ঠে মিষ্টি সুর,
স্বাধীনতা তুমি
ভোরের আকাশে সোনাঝড়া রোদ্দুর।
স্বাধীনতা তুমি
বিদ্রোহী কবি নজরুলের চির উন্নত-মম-শীর,
স্বাধীনতা তুমি
জাদুঘরে ঝুলে থাকা রক্তমাখা আসাদের শার্ট!
স্বাধীনতা আমার
বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তোলার অধিকার,
স্বাধীনতা আমার
কোটি বাঙালী’র জেগে উঠার উদ্যম গতি।
স্বাধীনতা তুমি
২১শে ফেব্রুয়ারি’র প্রভাত ফেরির গান,
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে ফুলের সমাহার।
স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের ভালবাসার সোনার বাংলা,
স্বাধীনতা তুমি
জীবনানন্দ’র ধানসিড়ির তীরে ফিরে আসার আর্তনাদ।
স্বাধীনতা তুমি
কিশোরির হাতে বর্ষাবরণ কদম ফুল,
স্বাধীনতা তুমি
গ্রীষ্মের দুপুরে জ্বলে উঠা কৃষ্ণচূড়া’র আগুন।
স্বাধীনতা আমার
সবুজ ঘাসের চাদরে রক্তমাখা পতাকা,
স্বাধীনতা আমার
কোটি বাঙালীর হৃদয় জুড়ানো ভালবাসা।
স্বাধীনতা তুমি
কাঁশফুলের শুভ্র ঝড়,
স্বাধীনতা তুমি
আমার হৃদয়ে চির অমর।
লিখেছি তোমারই নাম স্বাধীনতা
লিখেছি তোমারই নাম স্বাধীনতা
রক্তে রক্তে লিখে যাই
তোমার উজ্জ্বল নাম
তুমি পুষ্ট পুণ্য প্রাণ ধন্য হয়ে ওঠে
তুমি এক স্রোতস্বিনী
পাহাড়ে –পাথরে জন্ম
দূরগামী সমুদ্রের সন্নিধানে
শুধু চলা শুধুমাত্র বেগ
উৎকণ্ঠা ও বিসর্জন আশঙ্কা উদ্বেগ
প্রতিকুল পথ পাড়ি দিয়ে তুমি
সাগর সন্ধানে ছোট
অমৃতের সুধারসে পুষ্প হয়ে ফোটো
অগণিত প্রাণবীজ,ত্যাগের অঙ্কুর
রক্তমূল্যে অর্জিত সে প্রগতির নাম
লাখো প্রাণ বিসর্জনে
ইতিহাসে আমরা সেই কীর্তিগাথা
অহঙ্কারে দুর্বিনীত লিখে রাখলাম
তোমাকে পাওয়ার জন্যে,হে স্বাধীনতা-শামসুর রাহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে,হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে,হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে,হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে,ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে,বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে,হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে,হে স্বাধীনতা,তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা,তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন -তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক,বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা,তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়রি এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে
নডবডে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।
স্বাধীনতা,তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী,শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস,জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া,মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
রুস্তম শেখ,ঢাকার রিকশাওয়ালা,যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে —
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে,হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উডিয়ে,দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে,হে স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা -তাপস ঠাকুর
আমাকে কবি বলো না,
আমি কবিতা লিখিনি,
কবিতা পড়িনি,
শুধু কবিতাকে ঝড়ে পরতে দেখেছি,
শুকনো পাতার মত পুড়ে মরে যেতে দেখেছি ।
ঐ কবিতাকে দেখেছি শ্বশানের পথে-ক্ষুধার্ত।
যেন দুরবিক্ষে তলিয়ে গেছে তার ভিটে-মাটি।
সেই কবিতাকে আমি,
বুকে আগলে রাখতে পারিনি,
অবজ্ঞা-অবহেলা আর অনাদরে সে এখন অন্ধ।
সেই কবিতা আমি বুঝিনি,জানিনি কোনদিন,
শুধু তার চোখে বার্তা পেয়েছি নতুন দিনের-নতুন আলোর ।
হ্যা,আমি সেই বার্তা বাহক ।
কালের খেয়ায় আবার এসেছি
এই অর্ধমৃত পৃথিবীতে ।
ঐ পায়ে ফেসা ফুল ,
ডাস্টবিনের পাশে পরে থাকা
অসহায় নবজাতকের চোখ,
যেন হয় ধুসর অন্ধকার পৃথিবীর -ছোট ছোট আলোকময় দ্বীপ ।
অথবা এই অসভ্য পৃথিবীর বাগিচা।
অথচ, তারা পরে আছে পথে-ধুলোয়,
তাদের ভবিষ্যৎকারো মুঠোয় বন্দী।
আমি কী লিখব তার প্রতি-উত্তর ?
ঐ বঞ্চিত চোখ, ঐ পায়ে ফেসা ফুলগুলি
কেবলই একটি কবিতা খুঁজে প্রতিদিন-প্রতিমুহূর্তে,
যেন কবিতা এই অন্ধকার পৃথিবীতে মৃত,
যেন কোন এক বিশেষ শ্রেণীর আলোক উজ্জ্বল রঙমহলে,
অথবা বাজার অর্থনীতির লোভী চক্ষুতেবন্দী এই কবিতা ।
যদি আমার একক পৃথিবী
ভেসে যায় কোনদিন জনতার জোয়ারে ,
তবে শহরের আনাচে কানাচে
প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি প্রানে,
বিশাল অক্ষরে ।
তোমাদের প্রিয় কবিতাটি
আমি লিখে দিয়ে যাব !!
যার নাম- স্বাধীনতা ।
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়-হুমায়ুন আজাদ
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো,পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো,তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
আমি স্বাধীনতা বলছি-মোঃ আখতার হোসেন মশুল (ঢাকা)
আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি
আমাকে ছাড়া তুমি পরিচয়হীন
সত্তাবিহীন। দেশমাতা শৃংখলিত,
তুমি শংকিত বিহঙ্গ, পিঞ্জরে আবদ্ধ ।
আমার জন্য রয়েছো রক্ত গঙ্গা,
ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছো জয়গান,
সয়েছো জুলুম, বুলেট, বেয়োনেট
আরও কত মারণাস্ত্র।
রাজপথ, মাঠ-ঘাট প্রান্তর
করেছো রক্তে প্লাবিত,
কত নারী হারিয়েছে সম্ভ্রম
পুড়ে ছারখার স্থাপনা গঞ্জ গ্রাম ।
তোমরা দুর্জয়, বিশ্বের বিস্ময়
যুদ্ধ জয়ে এনেছো আমায়
তোমাদের স্বকীয় সত্তা, প্রিয় স্বাধীনতা।
রিপোর্ট ১৯৭১-আসাদ চৌধুরী
প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত,চঞ্চল
বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ,মনোরম
আমাদের নারীদের কথা বলি,শোনো।
এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে
বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-
বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে
তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে
শুধু মুখ টিপে হাসে।
প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে
কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম,পেয়ারা,চালিতা-
সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী।
অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার
সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা
সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে-
আমি তার সুরকার-তার রক্তে স্বরলিপি লিখি।
মরিয়ম,যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী
গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়
মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে-ঝিয়ে
খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,
অস্ফুট গোলাপ-কলি লহুতে রঞ্জিত ক’লে
কার কী বা আসে যায়।
বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা-বাঁকা পবিত্র হরফ
বোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটের ক্ষুধা,
মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।
পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে-চেয়ে নিবিড় আদর
সারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।
এদেশে যে ঈশ্বর আছেন তিনি নাকি
অন্ধ আর বোবা
এই ব’লে তিন কোটি মহিলারা বেচারাকে গালাগালি করে।
জনাব ফ্রয়েড,
এমন কি খোয়াবেও প্রেমিকারা আসে না সহজ পায়ে চপল চরণে।
জনাব ফ্রয়েড,মহিলারা
কামুকের,প্রেমিকের,শৃঙ্গারের সংজ্ঞা ভুলে গ্যাছে।
রকেটের প্রেমে পড়ে ঝ’রে গ্যাছে
ভিক্টোরিয়া পার্কের গীর্জার ঘড়ি,
মুসল্লীর সেজদায় আনত মাথা
নিরপেক্ষ বুলেটের অন্তিম আজানে স্থবির হয়েছে।
বুদ্ধের ক্ষমার মূর্তি ভাঁড়ের মতন
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প’ড়ে আছে,তাঁর
মাথার ওপরে
এক ডজন শকুন মৈত্রী মৈত্রী ক’রে
হয়তো বা উঠেছিলো কেঁদে
প্রিয় স্বাধীনতা-শামসুর রাহমান
মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।
আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।
গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।
দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।
বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।
ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।
ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।
বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।
হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।
ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।
শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।
সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।
মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,
পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।
কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প-রুদ্র মুহান্মদ শহীদুল্লাহ
তাঁর চোখ বাঁধা হলো।
বুটের প্রথম লাথি রক্তাক্ত
করলো তার মুখ।
থ্যাতলানো ঠোঁটজোড়া লালা –
রক্তে একাকার হলো,
জিভ নাড়তেই দুটো ভাঙা দাঁত
ঝরে পড়লো কংক্রিটে।
মা…মাগো….. চেঁচিয়ে উঠলো সে।
পাঁচশো পঞ্চান্ন মার্কা আধ-
খাওয়া একটা সিগারেট
প্রথমে স্পর্শ করলো তার বুক।
পোড়া মাংসের উৎকট গন্ধ
ছড়িয়ে পড়লো ঘরের বাতাসে।
জ্বলন্ত সিগারেটের স্পর্শ
তার দেহে টসটসে আঙুরের
মতো ফোস্কা তুলতে লাগলো।
দ্বিতীয় লাথিতে ধনুকের
মতো বাঁকা হয়ে গেলো দেহ,
এবার সে চিৎকার করতে পারলো না।
তাকে চিৎ করা হলো।
পেটের ওপর উঠে এলো দু-জোড়া বুট,
কালো ও কর্কশ।
কারণ সে তার পাকস্থলির কষ্টের
কথা বলেছিলো ,
বলেছিলো অনাহার ও ক্ষুধার কথা।
সে তার দেহের বস্ত্রহীনতার
কথা বলেছিলো –
বুঝি সে-কারণে ফর ফর
করে টেনে ছিঁড়ে নেয়া হলো তার সার্ট।
প্যান্ট খোলা হলো। সে এখন
বিবস্ত্র ,বীভৎস।
তার দুটো হাত-মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত
মিছিলে পতাকার
মতো উড়েছে সক্রোধে,
যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে,
বিলিয়েছে লিফলেট,
লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত
ভাঙা হলো।
সেই জীবন্ত হাত ,জীবন্ত মানুষের
হাত।
তার দশটি আঙুল-
যে-আঙুলে ছুঁয়েছে সে মার মুখ,
ভায়ের শরীর,
প্রেয়সীর চিবুকের তিল।
যে -আঙুলে ছুঁয়েছে সে সাম্যমন্ত্রে দীক্ষিত
সাথীর হাত ,
স্বপ্নবান হাতিয়ার,
বাটখারা দিয়ে সে-আঙুল পেষা হলো।
সেই জীবন্ত আঙুল,মানুষের
জীবন্ত উপমা।
লোহার সাঁড়াশি দিয়ে,
একটি একটি করে উপড়ে নেয়া হলো তার
নির্দোষ নখগুলো।
কী চমৎকার লাল রক্তের রঙ।
সে এখন মৃত।
তার শরীর ঘিরে
থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতো
ছড়িয়ে রয়েছে রক্ত ,
তাজা লাল রক্ত।
তার থ্যাতলানো একখানা হাত
পড়ে আছে এদেশের মানচিত্রের ওপর,
আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের
দুর্বিনীত লাভা……..
স্বাধীনতার ফুল-বাপ্পী সাহা (ঢাকা)
বায়ান্নোতে রক্ত দিয়ে
বাংলাভাষার মান কিনেছি
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের দামে
স্বাধীনতার মুখ চিনেছি ।
একাত্তরে দেখেছিলাম
রক্ত দিয়ে হোলি খেলা
বীর বাঙালি বুঝিয়ে দিল
নয় তারা তো হেলাফেলা।
প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে
লড়লো তারা বীরের বেশে,
স্বাধীনতার ফুল ফুটেছে
লাল সবুজের বাংলাদেশ ।
স্বাধীনতা-সৈয়দ আবদুর রহমান (টাঙ্গাইল)
স্বাধীনতা আমাদের অধিকার আদায়ের ভাষা
স্বাধীনতা আমাদের অহংকার
স্বাধীনতা আমাদের মাতৃভূমি,
স্বাধীনতা আমদের লাল সবুজের পতাকা ।
যে স্বাধীনতার জন্য বাংলার দামাল
ছেলেরা যুদ্ধে গিয়েছিল,
স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে
মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য।
মায়ের ছেলে যুদ্ধে গিয়ে
আজও ফিরে আসেনি,
তাই মায়ের চোখ আজ অশ্রুতে ভিজে ।
কথা বলতে শিখিয়েছে ।
স্বাধীনতা আমাদের স্বতন্ত্র ভূখন্ড দিয়েছে
স্বাধীনতা চির ভাস্বর থাকুক
আমাদের সবার হৃদয়ে ।
স্বাধীনতা তুমি-গুলশান-ই ইয়াসমিন
স্বাধীনতা তুমি-
আমার মায়ের –
ঘুম পড়ানি নাক
আসবে বলে-
মার্চের হাওয়ায়-
দে-দোলা দে ছেলে –
আকাশে বাতাসে
গাইছে মা যখন
বর্গী এলো কোমর বেঁধে
ঘুম ভাঙতে তখন
সন্তানের ঘুম ভেঙে
যায় যুদ্ধ ক্ষেত্রের আগে
যুদ্ধ শেষে-
পাক সেনারা ভাগে।
স্বাধীনতা-তুলি আলম
স্বাধীনতা তোমার আগমন দেখিনি আমি
তবে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি,
কিভাবে এসেছিলে আর কোথায় ছিলে তুমি
সবটুক জানি যখন ইতিহাস পড়ি।
তুমি যে হাজার নদীর রক্ত-স্রোত পেরিয়ে
এসেছো অবুঝ শিশুর মতো রাজপথে,
তুমি এসোছো লক্ষ লাশের মিছিল মাড়িয়ে
লাল সবুজর স্বাধীন পতাকা হাতে ।
সালাম তোমায় হাজার সালাম স্বাধীনতা
তুমি অনন্ত অসীম, দির্ঘজীবী হও,
শুধু তোমাতেই চিরদিন নোয়াবো এমাথা
তুমি গর্ব, তুমি মহান হয়ে রও।
স্বাধীনতা-ইসমত জাহান লিমা ( দিনাজপুর )
স্বাধীনতা মানে
একটি মুখের সংগ্রামী কবিতা
স্বাধীনতা মানে
নিজ ভূখন্ডে উদিত রবিটা।
স্বাধীনতা মানে
এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাস
স্বাধীনতা মানে
মাতৃভূমিতে স্বাধীন বসবাস।
স্বাধীনতা মানে
পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গা,
স্বাধীনতা মানে
লাল-সবুজ সদা জয়গান।
স্বাধীনতা -জাহিদুল ইসলাম
স্বাধীনতা আমার
ফুটপাতে প’রে থাকা অনাহারী শিশু!
স্বাধীনতা আমার
ভাইয়ের বুকে বিদ্ধ বুলেট!
স্বাধীনতা আমার
মুক্ত বাতাসে ধর্ষিত গণতন্ত্র!
স্বাধীনতা আমার
বিবেকের দরোজা তালাবদ্ধ!
স্বাধীনতা আমার
রক্তমাখা ফসলের ক্ষেত!
স্বাধীনতা আমার
রোদেপোড়া কৃষকের ক্ষুধার্ত পেট!
স্বাধীনতা আমার
মুখোশের আড়ালে ভন্ড রাজা!
স্বাধীনতা আমার
বুরজোয়া’র ঘরে নাচে নগ্ন নর্তকী!
স্বাধীনতা তুমি
বেশ্যার পেটে অনাকাক্সিক্ষত ভ্রুণ!
স্বাধীনতা তুমি
অর্ধউলঙ্গ রমণীর মুখে শালীনতার বয়ান!
স্বাধীনতা তুমি
কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানি’র লাশ!
স্বাধীনতা তুমি
স্বজনহারা প্রমিকার বোবা আর্তনাদ।
স্বাধীনতা আমার
দন্ডিত মানবতা!
স্বাধীনতা আমার
নতজানু জাতির পতাকা!
স্বাধীনতা,এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে,‘কখন আসবে কবি?‘
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি,সেদিনের সব স্মৃতি,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত ৷তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ।
হে অনাগত শিশু,হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান,-এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম,সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা,সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক
হাতের মুঠোয় মৃত্যু,চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিন্ম মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী,নারী,বৃদ্ধ,বেশ্যা,ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে,তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?“কখন আসবে কবি ?’’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা,জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের
২১
অস্ত্র সমর্পণ
হেলাল হাফিজ
মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে,কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে,আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ,আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে,বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে,ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
Tag:২৬ শে মার্চ এর কবিতা (৩০ টি+) | স্বাধীনতা নিয়ে ছন্দ /স্বাধীনতা কবিতা আবৃত্তি|ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা