২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস

২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস

২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস সেটা আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা। 26 শে মার্চে স্বাধীনতা দিবসের পেছনে রয়েছে লক্ষ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ের গল্প বা ইতিহাস। স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস এবং গৌরবময় গল্প সম্পর্কে আমরা আজকে জানব। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস যেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু কেন 26 শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস সেটা অনেকেই জানিনা। এটার পিছনে রয়েছে এক লম্বা ইতিহাস রয়েছে হাজার হাজার শহীদের ত্যাগ এবং প্রতীক্ষার ইতিহাস।

১৯৪৭ সালে যখন ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করে ঠিক তখনই বাংলাদেশ যেন স্বাধীন হয়েও হতে পারল না। উপমহাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্মকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যেখানে একভাগ মুসলমানদের জন্য এবং অন্য ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তান হচ্ছে বর্তমান পাকিস্তান।

পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর তুলনামূলক হারে পশ্চিম পাকিস্তান একটু বেশি  ক্ষমতাশীল ছিল। রাজনৈতিকভাবে শিক্ষার অধিকার দিক থেকে বিভিন্নভাবে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা বিভিন্নভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশের উপর অবিচার করতে থাকে। অবিচার এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একটা সময় এই দ্বন্দ্ব বেশ জটিল আকার ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার জন্য ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস । ২৬ শে মার্চ কি দিবস

ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পাকিস্তান যখন ধর্মের ভিত্তিতে ভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করল তখন থেকেই মূলত এই সমস্যা চলতেই থাকে। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাধ্যমে বিজয় লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তরে বিঘ্নতা ঘটায়। এ ধরনের নানা ঘটনা পরিক্রমায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি সর্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করে।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করার আগে 25 মার্চ কালো রাত ইতিহাসের জঘন্যতম একটা রাত যেদিন পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের নির্দেশে বাংলাদেশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালি উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাজার হাজার মানুষ এ সময় হত্যার শিকার হন। ২৫শে মার্চ এই গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করেন।

অবশ্যই এর আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মাইকে মাইকে ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এবং পরের দিন ২৭ শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এভাবেই ইতিহাসে পাতায় ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়।

কবে থেকে স্বাধীনতা দিবসের শুরু হয়েছে?

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিবছর 26 শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রদানের পর দীর্ঘ ৯ মাস বিরতিহীন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর 1971 সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের সূচনা হয় অর্থাৎ এই দিন বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।

২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কবে?

আমরা অনেকেই জানি ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস কিন্তু এই ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কোন দিন স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেটা অনেকেই জানে না। দেখুন ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব

বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব অনেক বেশি। কেন এই দিনই স্বাধীনতার জন্য ঘোষণা পত্র জারি করা হয়। স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র জারি করার পর থেকেই বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয় এবং দীর্ঘ ৯ মাস বিরত হীন যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। এই বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের একটি নতুন দেশের আবির্ভাব হয় বিশ্ব মানচিত্রের মাঝে। আর আমরা বাঙালিরা বাংলাদেশি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দিতে পারি। স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের একটা নতুন রাষ্ট্রের সূচনা হয়। সেজন্যই এই দিনটির গুরুত্ব অনেক বেশি। এই দিনটিকে গুরুত্বসহকারে দেখে প্রতি বছর সরকার বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। মার্চ মাস বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা দিবস অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *