ফরজ গোসল না করার শাস্তি
পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতা বলতে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে। যেমন— গোসল, অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখতে মেসওয়াক করা, শরীরে ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি।
শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক জীবনেও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখতে ইসলাম নির্দেশ দেয়।
রাতে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে ভোরে ফজরের নামাযের আগে আগেই এবং দিনে সহবাস করলে পরবর্তী নামাজের পূর্বেই স্বামী-স্ত্রী দুজনে গোসল করে নেয়া আবশ্যক। এ গোসলকে জানাবতের গোসল বলে এবং গোসল না করা পর্যন্ত নাপাকী অবস্থায় থাকাকে জানাবতের অবস্থা বা জুনুবী হওয়া বলা হয়। জানাবত তথা ফরজ গোসলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যৌনাঙ্গের পবিত্রতার ব্যাপারে খুবই যত্নবান হতে হবে। স্বামী তার অঙ্গকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিবে যেনো চামড়ার মধ্যে বীর্য আটকে থাকতে না পারে।
অনুরূপভাবে স্ত্রীও নিজের গোপন অঙ্গকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবে। জানাবাত হতে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতিকে বলে ফরজ গোসল।
ফরজ গোসল:
ফরজ গোসল ওই গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে অর্থাৎ কারো স্বপ্নদোষ হলে বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগীদ দিয়ে আল্লাহ বলেন: যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। [সূরা মায়েদাহ: ৬]।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক প্রতিবেশীর জানাযাতে যোগদান করি। তার লাশ কবরে নামানোর সময় বিড়ালের ন্যায় একটি অদ্ভুত জানোয়ার কবরের ভিতরে বাইরে লম্বঝম্প করে লাশ কবরে নামাতে বাধার সৃষ্টি করতে লাগল।
সেটিকে তাড়াবার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন প্রকারই দুর করা গেল না। ব্যর্থ হয়ে অন্যত্র গিয়ে কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়ে জন্তুটি ভয়ানক উৎপাত করতে লাগল। সেটিকে মারতে গিয়েও সর্ব প্রকার চেষ্টা ব্যর্থ হল।
অগত্য বাধ্য, হয়ে অন্যত্র গিয়ে তৃতীয় কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়েও জন্তুটি আরও বেশী উপদ্রব শুরু করল। অনন্যোপায় হয়ে আমরা তাড়াতাড়ি তৃতীয় কবরেই তাকে দাফন করে সভয়ে দ্রুতপদে সেখানে হতে প্রস্থান করলাম। দফনান্তে কবর হতে বজ্রবৎ ভীষণ এক আওয়াজ বের হয়েছিল। আমি জানার জন্য তার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তার স্ত্রী উত্তর দিল, সহবাসের পর তিনি ফরয গোসল অবহেলা করতেন।
এতে তার ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যেত। এছাড়া তার অন্য কোন পাপ আমি কখনো দেখি নাই।
ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি –
এই আলোচনার মাধ্যমে আজ আমরা তুলে ধরবো বহুকাল আগে থেকেই
একটি কথা প্রচলিত ভূল ধারনা। বিশেষ করে আমাদের যারা মা বোন আছে তাদের মোধ্য এই ধারণা আরো বেশি প্রচলিত
ছিল। যেমন কেউ কেউ গোসল ফরজ হলে কাজ করাতো দূরের কথা মাটি দিয় হাটা চলা পর্যন্ত করতে চাইতোনা। আবার
কেউ কেউ দানা পানি পর্যন্ত স্পর্শ করতো না। কিন্তু প্রচলিত এই ধারণা গুলো ভূল। আমাদের সঠিক হাদিস ও কুরআনের
ব্যাখা না জানার কারণে এই ধরনের কথা প্রচলিত হয়ে আসছিল। আজ আমি এখানে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো
ইনশাল্লাহ। আর তার জন্য আমার এই লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন তবেই জানতে পারবেন। আসল তথ্য
অর্থাৎ যখন আপনার গোসল ফরজ হবে তখন আপনাকে কি করতে হবে। গোসল ফরজ হওয়ার পরেও আপনি কিকি কাজ
করতে পারবেন। আর এই অবস্থায় কিকি কাজ করতে পারবেন না । এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আমার এই ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি লেখায়।
ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি
যখন একজন মানুষের জন্য গোসল ফরজ হয়ে যায় তখন তার জন্য গোসল করা একান্ত অপরিহার্য। যদি আমাদের
শারীরিক কোন বড় ধরনের সমস্যা না থাকে তবে কোন ভাবেই ফরজ গোসল বাদ দেয়া যাবেনা। তবে আপনার যদি ফরজ
নামাজ বা স্পর্শ করে কোরআন পড়ার প্রয়োজন না পড়ে তবে আপনি সাময়িকভাবে শরীরের না পাক দূর করে সকল
অন্যান্য সকল কাজ করতে পারবেন। যেহেতু গোসল ফরজ তাই যদি শারীরিক সমস্যা না থাকে তবে কেউ যদি ইচ্ছা কৃত
গোসল ছেড়ে দেয় তাহলে সে ফরজ তরফ করার অপরাধে দন্ডিত হলো। ফরজ কাজ না করার জন্য যে শাস্তি হবে এক্ষেত্রে
তার একই ধরনের শাস্তি হবে।
ফরজ গোসল করার পদ্ধতি
প্রতিটি কাজের যেমন কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে তেমনি ফরজ গোসল করারও কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। আর তাই
যখন আমরা এই ধরনের গোসল করবো তখন অবশ্যই এই নিয়ম গুলো মেনে আমাদের গোসল করতে হবে। অন্যথায়
আমাদের ফরজ গোসল করা হবেনা। আর এ্রর জন্য যে নিয়ম রয়েছে তাহলো নিম্নরুপ-
- না পাকের জায়গা আগে উত্তম রুপে ধৌত করা ।
- গোসলের আগে ওযু করা।
- গোসলের দোয়া পড়ে গোসল করা।
- শরীরের সকল জায়গা উত্তম রুপে পরিস্কার করা।
ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি শেষ উপদেশ
আশা করি উপরোক্ত ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি লেখার তথ্যগুলো আপনাদের কাজে লাগবে। এর সাথে এই
লেখাটির তথ্য গুলো আপনাদের প্রত্যাহিক জীবনে কাজে লাগাবেন এ প্রত্যাশা সবার কাছে করি। কারণ জানার নাম ইসলাম
নয় মানার নাম হচ্ছে ইসলাম। আমরা অনেক বেশি জানি কিন্তু কিছুই মানিনা তবে লাভ নেই। তাই আমরা যেন আমাদের
প্রত্যহিক জীবনে এই নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলি তাহলে একদিকে যেমন আমরা সুস্থ সবল থাকতে পারবো, অন্যদিকে
সুস্থ সবল জাতি গঠন করে ইসলামের আলো সারা পৃথীবিতে ছড়িয়ে দিতে পারব। এছাড়াও একই বিষয়ে আমাদের আরও
অনেক গুলো লেখা আছে, সেই লেখাগুলোও আপনি পড়তে পারেন। আশাকরি সকল লেখাই ভালোলাগবে। আর লেখাটা
যদি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই অনুরোধ রইলো, সবার সাথে শেয়ার করার জন্য। কারন আপনার একটি শেয়ার
আরেকজনকে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং সেও যদি এই বিষয়গুলো জানে তবে তার নিজের
জীবনে ও পারিবারিক জীবনে পালন করতে পারবে। ধন্যবাদ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইসলামে ফরজ গোসল না করার শাস্তি লেখা টি পড়ার জন্য।