ধাতু কাকে বলে? ধাতুর প্রকার ও উদাহরণ

ধাতু কাকে বলে?

বাংলা ব্যাকরণে ধাতু বলতে ক্রিয়ার মূল অংশকে বোঝায়। আমরা জানি, ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায় যেমন, ক্রিয়ামূল এবং ক্রিয়াবিভক্তি। ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে, তাই ধাতু। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে “√” চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
যেমন- ‘পড়ে’ একটি ক্রিয়াপদ। এতে দুটো অংশ রয়েছে পড়্+এ; এখানে ‘পড়্’ ধাতু এবং ‘এ’ বিভক্তি। সুতরাং ‘পড়ে’ ক্রিয়ার মূল বা ধাতু হলো ‘পড়্’ আর ক্রিয়া বিভক্তি হলো ‘এ’।

ধাতুর প্রকারভেদ

বাংলা ব্যাকরণে ধাতু প্রধানত তিন প্রকার। যেমন–মৌলিক ধাতু, সাধিত ধাতু এবং যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু।

১. মৌলিক ধাতু

যেসকল ধাতুকে আর বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, সেইসব ধাতুকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন–√ খা, √ কর্, √ চল্, √ পড়্ ইত্যাদি। মৌলিক ধাতুগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় না। বাংলা ব্যাকরণে মৌলিক ধাতু তিন প্রকার। যেমন– বাংলা ধাতু, সংস্কৃত ধাতু, এবং বিদেশী ধাতু।
  • ক. বাংলা ধাতু: যেসব ধাতু সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তাকে বাংলা ধাতু বলে। যেমন– নাচ্ + অন= নাচন। কাদ্ + না = কান্না।
  • খ. সংস্কৃত ধাতু: তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতুকে সংস্কৃত খাতু বলে। যেমন– কৃ + তব্য = কর্তব্য।
  • গ. বিদেশী ধাতু: প্রধানত হিন্দি, আরবী, ফারসি থেকে যেসব ধাতু বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, তাকে বিদেশী ধাতু বলে। যেমন–ডাক্, ডর্, ফির্, টান্ চাহ্ ইত্যাদি।

২. সাধিত ধাতু

মৌলিক ধাতু বা নাম শব্দের সঙ্গে আ–প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন–দেখ্‌ + আ = দেখা, পড়্+আ = পড়া, বল্+আ = বলা ইত্যাদি। বাংলা ব্যাকরণে
সাধিত ধাতু ৩ প্রকার যেমন–নাম ধাতু, প্রযোজ্য বা ণিজন্ত ধাতু, এবং কর্মবাচ্য ধাতু।
  • ক. নাম ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে নাম ধাতু বলে। যেমন– ঘুম্ + আ = ঘুমা, হাত্‌ + আ = হাতা।
  • খ. প্রযোজ্য বা ণিজন্ত ধাতু: মৌলিক ধাতুর পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে প্রযোজ্য বা ণিজন্ত ধাতু বলে। যেমন–পড়্ + আ = পড়া, কর্ + আ = করা, নাচ্ + আ = নাচা ইত্যাদি।
  • গ. কর্মবাচ্য ধাতু: মৌলিক ধাতুর সাথে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে কর্মবাচ্য ধাতু বলে। যেমন–কর্ + আ = করা, হার্ + আ = হারা ইত্যাদি।
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু 
বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে কর্, দে, পা, খা, ছাড়, হ ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে নতুন যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু বলে।
যেমন–সাবধান (বিশেষ্য) + হ (ধাতু) = সাবধান হ (যৌগিক ধাতু)। যোগ (বিশেষ্য) + কর (ধাতু) = যোগ কর (যৌগিক ধাতু)। এছাড়া কষ্ট পা, শাস্তি দে ইত্যাদি যৌগিক ধাতু।