যে সমাসে সমস্যমান পদগূলির কোনোটির অর্থই প্রধান ভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোনো অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় , তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে |
আরও পড়ুন : তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
যেমন
- বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি ( সরস্বতী )
বহুব্রীহি সমাস প্রকারভেদ
ক) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় |এখানে উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি থাকায় এর নাম সমানাধিকরণ |
যেমন:–
- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যাহার= দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
- ছিন্ন হয়েছে শাখা যার = ছিন্নশাখা (বৃক্ষ)
- সমান পতি যাদের= সপত্নী
ব্যতিক্রম
কখনও আবার বিশেষ্যপদটি পূর্বেও বসে |
যেমন:–
- লক্ষ্মী ছাড়িয়াছে যাকে= লক্ষ্মীছাড়া
- বুক ফাটে যার দ্বারা= বুকফাটা ( কান্না )
- স্বার্থই পর ( পরম ) যার = স্বার্থপর
কখনও আবার দুটি পদই বিশেষ্য / পূর্বপদটি বিশেষণ ভাবাপন্ন |
যেমন:–
- চন্দ্র হয়েছে শেখর যার= চন্দ্রশেখর ( শিব )
- পদ্ম আসন যাহার= পদ্মাসন
- নদী মাতা যাহার= নদীমাতৃক
খ) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :
এই বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদটি বিশেষণ নয়|এখানে সমস্যমান পদ দুটি পৃথক বিভক্তিযুক্ত হওয়ায় এর নাম ব্যধিকরণ বহুব্রীহি |
যেমন:–
- মিলন অন্তে যার= মিলনান্তক
- অন্য বিষয়ে মন যার = অন্যমনস্ক
- আশীতে (দন্তে) বিষ যার= আশীবিষ (সর্প)
- রত্ন গর্ভে যাহার= রত্নগর্ভা
- অন্তঃ (অন্তরে) অপ্ যার= অন্তরীপ
গ) নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস :
নঞর্থক বা নাবাচক পদের সঙ্গে বিশেষ্যপদের যে বহুব্রীহি সমাস তাকেই নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন:–
- নেই অর্থ যার = নিরর্থক
- নিঃ (নাই) রদ (দন্ত) যার= নীরদ
- বে (নাই) তার যাতে= বেতার
- নিঃ (নাই) সহায় যার = নিঃসহায়
ঘ) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস :
ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদের লোপ হয় এই বহুব্রীহি সমাসে |এই সমাসে বেশিরভাগভাগ স্থানে উপমানের সঙ্গে সমাস হয়, তাই একে উপমানাত্মক বহুব্রীহি ও বলা হয় | আবার ব্যাসবাক্যটি ব্যাখ্যামূলক হওয়ায় এর অপর একটি নাম ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহি সমাস |
যেমন:–
ধর্মের(আদর্শের) উদ্দেশে ঘট স্থাপন পূর্বক যে আন্দোলন= ধর্মঘট
- বিম্বের ন্যায় রঞ্জিত অধর যে নারীর= বিম্বাধরী
- মীনের অক্ষির মতো অক্ষি যে নারীর= মীনাক্ষী
- কাঞ্চনের প্রভার ন্যায় প্রভা যা=কাঞ্চনপ্রভ
ঙ) ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস :
পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হয় |
যেমন:–
- কেশে কেশে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ= কেশাকেশি
- পরস্পরের মধ্যে আড়ি= আড়াআড়ি
- পরস্পরকে জানা= জানাজানি
- হেসে হেসে যে আলাপ = হাসাহাসি
চ) সহার্থক বহুব্রীহি সমাস :
পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে, সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন:–
- শ্রদ্ধার সহিত বর্তমান= সশ্রদ্ধ
- প্রতিভার সহিত বর্তমান= সপ্রতিভ
- বেগের সহিত বর্তমান = সবেগ
- চকিতের সহিত বর্তমান= সচকিত
পূর্বপদ যদি বিশেষণ হয় , তবে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয় না |
ছ) সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাস :
এই বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় |
যেমন:–
- একদিকেই চোখ যার= একচোখা
- দশ আনন যার= দশানন
- ত্রি নয়ন যার= ত্রিনয়ন / ত্রিনয়না (স্ত্রীবাচক)
- সে (তিন) তার যার= সেতার
- দুই দিকে অপ্(জল) যার= দ্বীপ |