তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

যে সমাসে পূর্বপদের কারকের বিভক্তিচিহ্ন বা বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গের লোপ হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয় , তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে |

 

যেমন:–

  • রথকে দেখা = রথদেখা
  • লোককে দেখানো=লোকদেখানো

তৎপুরুষ সমাসের অর্থ কী?

‘তৎ’ শব্দাংশের অর্থ হল – তার এবং তৎপুরুষ শব্দের অর্থ হল – ‘তার সম্বন্ধীয় পুরুষ’ বা ‘তার পুরুষ’ বা ‘তস্যপুরুষ’।

তৎপুরুষ সমাসের নাম তৎপুরুষ সমাস হল কেন?

তৎপুরুষ শব্দটি, তার পুরুষ (তস্য পুরুষ:) পদগুলির একপদীকরণে সৃষ্ট। শব্দটি গঠনে পূর্বপদের (তার) সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। এই শ্রেনীর সমাসের অধিকাংশ দৃষ্টান্তইই পুর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত হয়। তাই তৎপুরুষ শব্দানুসারে এই শ্রেনীর সমাসের নাম তৎপুরুষ সমাস।

তৎপুরুষ শব্দটি ব্যাকরণের কোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় এবং কেন?

তৎপুরুষ শব্দটি ব্যাকরণের সমাস প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। তৎপুরুষ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘তার পুরুষ’ (তস্য পুরুষ:) পদদ্বয়ের একপদীকরণে। শব্দটি পূর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত এবং পরপদের অর্থ প্রধান।

সমাসের এক বিশেষ শ্রেনীতে অধিকাংশ দৃষ্টান্তই বা পূর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত, সেই জন্য তৎপুরুষ শব্দানুসারে উক্ত প্রক্রিয়ার নামকরণের জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়।

তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায় কী?

  • (ক) প্রথমেই তৎপুরুষ সমাস ও তার ভাগগুলিকে পড়ে নিতে হবে।
  • (খ) ক্রমাগত ব্যাসবাক্য করার অভ্যাস করতে হবে।
  • (গ) পূর্বপদের পরনিপাত অনেক ক্ষেত্রেই হবে।
  • (ঘ) বহুব্রীহি ও তৎপুরুষ সমাসের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য জেনে নিতে হবে।
  • (ঙ) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাসে কোন না কোন সময়কাল বোঝাবেই।
  • (চ) না তৎপুরুষ ও না বহুব্রীহি সমাসের মধ্যেকার পার্থক্য জেনে নিতে হবে।

প্রকারভেদ

ক) কর্ম তৎপুরুষ সমাস

এই সমাসে পূর্পদের কর্মকারকের বিভক্তিচিহ্ন ( যেমন ‘কে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ:–

  • লুচিকে ভাজা=লুচিভাজা
  • মালাকে বদল = মালাবদল
  • ছেলেকে ভুলানো = ছেলেভুলানো

খ) করণ তৎপুরুষ সমাস

এই সমাসে পূর্বপদের করণকারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘য়’, ‘তে’)/ অনুসর্গ ( ‘দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

  • আশা দ্বারা আহত=আশাহত
  • প্রথার দ্বারা বদ্ধ =প্রথাবদ্ধ
  • জরায় জীর্ণ=জরাজীর্ণ

গ) অপাদান তৎপুরুষ সমাস

এই সমাসে পূর্বপদের অপাদান কারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘তে’ ) / অনুসর্গ ( ‘হইতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

  • জল হইতে আতঙ্ক= জলাতঙ্ক
  • দল থেকে ছাড়া =দলছাড়া
  • মৃত্যুতে ভয়=মৃত্যুভয়

অপাদান তৎপুরুষ সমাসকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে কেন?

অপাদান তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে,চেয়ে,থেকে প্রভৃতি) লোপ পায়, তাই একে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। সাধারণত চ্যুত, ভীত, জাত, গৃহীত, ভ্রষ্ট, বিরত, আগত প্রভৃতি পরপদের সাথে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।

ঘ) নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস

এই সমাসে পূর্বপদের নিমিত্ত / জন্য / উদ্দেশ্য প্রভৃতি নিমিত্তবাচক অংশগুলির লোপ হয় |

উদাহরণ—

  • স্বদেশের জন্য প্রেম =স্বদেশপ্রেম
  • তীর্থের উদ্দেশ্যে যাত্রা = তীর্থযাত্রা
  • শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য =শিশুসাহিত্য

ঙ) অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস

এখানে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তিচিহ্ন (‘এ’, ‘য়’, ‘এতে’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ—

  • গীতায় উক্ত= গীতোক্ত
  • ওষ্ঠে আগত= ওষ্ঠাগত
  • স্বার্থে পর (আসক্ত) = স্বার্থপর

অধিকরণ তৎপুরুষ সমাসকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে কেন?

অধিকরণ তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি ( এ,য়,তে) লোপ পায় বলে,একে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।

চ) সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস

এই সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধের বিভক্তিচিহ্ন ( ‘র’, ‘এর’, ‘দের’ ) লোপ পায় |

উদাহরণ–

  • বসন্তের সখা= বসন্তসখ (কোকিল)
  • মন্ত্রীদের সভা =মন্ত্রীসভা
  • রোগের রাজা =রাজরোগ

ছ) ব্যাপ্তার্থক তৎপুরুষ সমাস

এখানে ‘ব্যাপিয়া’ বা বিস্তার অর্থ বোঝায় |

উদাহরণ–

  • চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
  • চিরকাল ব্যাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর

জ) উপপদ তৎপুরুষ সমাস

উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে |

কৃদন্ত পদ কী?

কৃদন্ত পদের বুৎপত্তি হল – কৃ-দম্+ক্ত ;অর্থাৎ যে পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়।

উপপদ শব্দের অর্থ কী?

উপপদ শব্দের অর্থ হল ‘সমীপবর্তী পদ’।

উপপদ কাকে বলে?

কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী পদকে ব্যাকরণে উপপদ বলে।

যেমন –

জলচর পদের ‘চর’ (অর্থাৎ চরা) কৃদন্ত পদটির পূর্বপদ ‘জল’ পদটি হল উপপদ।

উদাহরণ–

  • পঙ্কে জন্মে যে =পঙ্কজ
  • মুখে থাকে যা =মুখস্থ
  • গণিত জানেন যিনি =গণিতজ্ঞ

ঝ) নঞ তৎপুরুষ সমাস

নঞ অব্যয় কে পূর্বপদ করে, উত্তরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে এই সমাস হয় | উত্তরপদের প্রথমবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হলে ‘নঞ’ স্থানে ‘অ’ হয় | আর স্বরবর্ণ হলে ‘অন্’ হয় |

উদাহরণ–

  • আবশ্যক নয়= অনাবশ্যক
  • আস্থা নেই =অনাস্থা
  • শুভ নয় =অশুভ
  • স্থির নয়= অস্থির

ঞ) অকারক তৎপুরুষ / উপকারক তৎপুরুষ সমাস

এখানে ‘গত’, ‘প্রাপ্ত’, ‘আপন্ন’, ‘আশ্রিত’, ‘আরূঢ়’, ‘অতীত’ ইত্যাদি শব্দযোগে পূর্বপদের ‘কে’ বিভক্তিচিহ্ন লোপ পায় |

উদাহরণ–

  • যৌবনকে প্রাপ্ত= যৌবনপ্রাপ্ত
  • অশ্বে আরূঢ় =অশ্বারূঢ়
  • দেবকে আশ্রিত =দেবাশ্রিত

ট) উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস :যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ উপসর্গের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্য বা বিশেষনের সমাস হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে।

উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে প্রাদি সমাস বলে কেন?

প্রাদি শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় – ‘প্র+আদি’। অর্থাৎ উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসে প্র, প্রতি, উপ, অনু প্রভৃতি উপসর্গের সাথে কৃদন্ত পদ বা নাম পদের সমাস হয় বলে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে প্রাদি সমাস বলে।

উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে চেনার উপায় কী?

  • (ক) সমস্তপদের প্রথমেই উপসর্গ আছে কিনা দেখে নাও।
  • (খ) পরপদে বিশেষ্য বা বিশেষন আছে কিনা দেখে নাও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *