ভেষজ উদ্ভিদ কাকে বলে?
ভেষজ উদ্ভিদ কাকে বলে?
ভেষজ উদ্ভিদ বা ঔষধি উদ্ভিদ হলো এক প্রকার উদ্ভিদ যার যেকোনা অংশ রোগ নিরাময়ে বা উপশমে সক্ষম। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার পেছনে ভেষজ উদ্ভিদের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ লোকের নিকট ঔষধি বৃক্ষের মাধ্যমে রোগ নিরাময় অতি জনপ্রিয়। কারণ, ঔষধি উদ্ভিদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য, সস্তা ও তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে ঔষুধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা বিশ্বের মারাত্মক ব্যাধি ক্যান্সার নিরাময়ের উপকরণ ঔষধি উদ্ভিদে রয়েছে।
ভেষজ বা ঔষধি উদ্ভিদ যেমনঃ থানকুনি, তুলসী, কালোমেঘ, বাসক, সর্পগন্ধা, অর্জন, হরিতকি, আমলকি, বহেরা, ঘৃত কুমারী, তেলাকুচা, নিম, উলঠকম্বল, মেহেদি ইত্যাদি।
রোগ নিরাময়ে সক্ষম এমন কিছু উদ্ভিদ মানুষ সদূর অতীত কাল থেকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। এ সমস্ত উদ্ভিদকে ভেষজ উদ্ভিদ বলে।
রোগ নিরাময়ে এসব উদ্ভিদের উপকারতিা অনস্বীকার্য। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদসমূহের বিলুপ্তির প্রধান কারণ সমূহের অন্যতম কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা। ভেষজ উদ্ভিদ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।
সুতরাং আমাদের এসব ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা, চেনা এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত।
ভেষজ উদ্ভিদ (উইকিপিডিয়া)
ভেষজ উদ্ভিদ (ইংরেজি :Herb) হচ্ছে এমন গাছ, যা সাধারণত খাদ্য, স্বাদ বৃদ্ধি, ওষুধ অথবা সুগন্ধের জন্য ব্যবহূত হয়। রান্না করতে এসব ভেষজ উদ্ভিদ থেকে মসলা উৎপাদন করা হয়। সাধারণত গাছের সতেজ অথবা শুকনো পাতা আর ফুলের অংশ এই কাজে ব্যবহার করা হয়। আর গাছের বীজ, ফল, বাকল, গোটা এবং শিকড় থেকে মসলা তৈরি হয়। ভেষজ উদ্ভিদ নানা কাজে লাগে যেমন- রান্নায়, ওষুধ তৈরিতে এবং কখনো কখনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে। ওষুধ তৈরিতে ব্যবহূত উদ্ভিদগুলোকে ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে যাই বলা হোক না কেন, ওই উদ্ভিদের নাম দ্বারা তার পাতা, ফুল, ফল, শিকড়, বীজ, ছাল-বাকল, কষ, ফলের খোসা সবকিছুকেই নির্দেশ করা হয়। যতদূর জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে সুমেরীয়রা ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করত। প্রাচীন মিসরীয়রা মিষ্টি সজ, ধনে সজ ও থাইম ব্যবহার করত ১৫৫৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। প্রাচীন গ্রিসে ১৬২ খ্রিষ্টাব্দে গালেন নামের এক চিকিৎসক ছিলেন, যিনি প্রায় ১০০ ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে বানানো এক জটিল ভেষজ ওষুধ আবিস্কারের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।
রান্নায় ব্যবহূত ভেষজ উদ্ভিদ রান্নায় ব্যবহূত ভেষজ উদ্ভিদ সবজি থেকে আলাদা, এরা সামান্য মাত্রায় ব্যবহূত হয় কিছুটা মসলার মতো। এসব উদ্ভিদ খাবারে আলাদা স্বাদ ও গন্ধ ছড়িয়ে দেয়।
ভেষজ উদ্ভিদ বহুবর্ষজীবী হতে পারে, যেমন থাইম বা ল্যাভেন্ডার। দ্বিবর্ষজীবী হতে পারে যেমন পার্সলে, ধনেপাতা অথবা একবর্ষজীবীও হতে পারে যেমন তুলসী। বহুবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ গুল্মও হতে পারে যেমন রোজমেরি আবার বৃক্ষও হতে পারে যেমন তেজপাতা, দারুচিনি। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি মসলা এবং ভেষজ উদ্ভিদ দু’ভাবেই ব্যবহার করা হয়। যেমন ধনেগাছের পাতা এবং নরম কাণ্ড ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহূত হয়। আবার এর বীজ ব্যবহার করা হয় মসলা হিসেবে। মিন্ট পরিবারের কিছু গাছ আছে যাদের ব্যবহার রান্নায়ও হয় আবার ভেষজ চিকিৎসাতেও হয়, যেমন- তুলসী, পুদিনা ইত্যাদি।
ঔষধি ভেষজ উদ্ভিদ
কিছু উদ্ভিদে ফাইটো কেমিক্যাল থাকে, যা শরীরে কিছু বিশেষ প্রভাব ফেলে। মসলাও আমাদের দেহে নানা রকম প্রভাব ফেলে। অনেক উদ্ভিদ বিষাক্তও হয়ে থাকে। যেমন ধুতরা (Datura metel ) গাছের ফুল এবং ফল পরিমাণমতো ব্যবহারে ওষুধের মতো কাজ করে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে বিষক্রিয়া ঘটায়। এরকম আরও অনেক গাছ আছে, যা ভেষজ উদ্ভিদ হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে তা নানারকম শারীরিক জটিলতা এবং কখনো কখনো বিষক্রিয়া ঘটায়।
বাগানে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ
অনেক দিন ধরে চীন দেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহূত হয়ে আসছে। ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ভিত্তি এসব ভেষজ উদ্ভিদ। পশ্চিমা দেশে এই ভেষজ চিকিৎসার সূচনা হয়েছিল গ্রিক হিপ্পোক্র্যাটিক চিকিৎসাশাস্ত্রের মাধ্যমে। বিখ্যাত ভেষজ চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইবনে সিনা (পারসীয়), গ্যালেন (রোমান), প্যারাসেলসাস (জার্মান সুইস), কালপেপার (ইংরেজ) এবং ১৯ ও ২০ শতকের প্রথমভাগের উদ্ভিদবিজ্ঞানে পারদর্শী জন মিল্টন স্কাডার, হার্ভে উইক্স ফেল্টার, জন উরি লয়েড প্রমুখ। যদিও আধুনিককালে ভেষজ চিকিৎসার প্রচলন নেই বললেই চলে, তবু এখনো চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক ওষুধ ভেষজ উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুত করা হয়। কিছু কিছু ভেষজ উদ্ভিদে নেশার উপাদানও থাকে। হলোসেনা যুগ থেকে এগুলো ধর্মীয় এবং মানসিক চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়ে আসছে। বিশেষত গাঁজা এবং কোকো গাছ। উত্তর পেরুভিয়ান সমাজের লোকেরা ৮০০০ বছর আগের থেকে কোকো গাছের পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে গাঁজা গাছের ব্যবহার হতো এর নেশা ধরানোর গুণের জন্য প্রথম শতাব্দীতে চীন ও উত্তর আফ্রিকায়। বাংলায়ও এর ব্যবহার দেখা যায়। এ ছাড়া তামাক পাতাও একই কাজে ব্যবহূত হতো। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা তাদের আশপাশের গাছগাছড়া ব্যবহার করে ভেষজ চিকিৎসার প্রভূত উন্নয়ন ঘটিয়েছিল। তাদের বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে যে তাদের ওষুধ অনেক কম মারাত্মক অসুখের জন্য বানানো হয়েছিল, পশ্চিমা রোগের সঙ্গে তারা পরিচিত ছিল না। রিভার মিন্ট, ইউক্যালিপটাস ও ওয়াটল এগুলো ব্যবহার করা হতো সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া ও মাথাব্যথার জন্য।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ভেষজ উদ্ভিদ কাকে বলে?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।