অনুসর্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ব্যাকরণে বর্ণিত অব্যয় পদের একটি বিভাগ বিশেষ। এই জাতীয় অব্যয় অন্য পদের পরে পৃথকভাবে বসে পদটিকে বাক্যের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্কিত করে বা বিভক্তির ন্যায় আচরণ করে। এদের অন্যান্য নাম পরসর্গ, কর্মপ্রবচনীয় (post position)।

 

প্রকারভেদ

অনুসর্গ কোন পদের পরে বসে বাক্যের সাথে ওই পদকে সম্পর্কিত করতে পারে, তার প্রকৃতি বিচার করে ৩টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

  • বিশেষ্য অনুসর্গ
  • সর্বনাম উপসর্গ
  • বিশেষণ উপসর্গ

১. বিশেষ্য অনুসর্গ : এই জাতীয় বিশেষ্য পদের পরে বসে।

যেমন–

  • প্রাণের চেয়ে প্রিয়
  • ছাদের উপর খোলা আকাশ

২. সর্বনাম উপসর্গ : এই জাতীয় সর্বনাম পদের পরে বসে।

যেমন–

  • আমার চেয়ে সে বড়।
  • ওর কাছে বইটি আছে।

৩. বিশেষণ উপসর্গ : এই জাতীয় বিশেষণ পদের পরে বসে।

যেমন–

  • মন্দের চেয়ে একটু ভালো
  • খারাপের চেয়ে খারাপ

উৎসের বিচারে অনুসর্গ তিন প্রকার।

  • সংস্কৃত উপসর্গ
  • সংস্কৃত-বিবর্তিত
  • বিদেশী অনুসর্গ

১. সংস্কৃত উপসর্গ : সংস্কৃত শব্দ সরাসরি বসেছে এমন উপসর্গ।

যেমন–

  • অপেক্ষা, অভিমুখে, উপরে, কর্তৃক, ইত্যাদি।

২. সংস্কৃত-বিবর্তিত : সংস্কৃত শব্দের ক্রমবিবর্তনের মধ্য আগত কোন শব্দ যখন অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

যেমন–

  • সংস্কৃত অগ্রে>প্রাকৃত অগ্‌গে>বাংলা আগে।

এরূপ অন্যান্য অনুসর্গ হতে পারে কাছে, ছাড়া, পাশে

৩. বিদেশী অনুসর্গ : বাংলা, সংস্কৃত, সংস্কৃত থেকে ক্রমবিবর্তিত অপরাপর শব্দ যা অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

যেমন–

  • ফারসি : দরুন, বদলে,বনাম।

উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ দুই প্রকার।

  • নামজাত অনুসর্গ
  • ক্রিয়াজাত অনুসর্গ

১. নামজাত অনুসর্গ : ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন অনুসর্গ ছাড়া অন্যান্য অনুসর্গের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় নামজাত অনুসর্গ বলা হয়।

যেমন-

  • উপরে, অপেক্ষা ইত্যাদি।

২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ : কোনো ক্রিয়ামূলের সাথে থেকে উৎপন্ন এমন কিছু শব্দ, যেগুলো অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

যেমন–

√কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। [ভালো করে কাজ করো]

বিভক্তির সংযুক্তির বিচারে অনুসর্গ

অনুসর্গের সাথে বিভক্তি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে, অনুসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন–

  • বিভক্তিহীন অনুসর্গ
  • বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ

১. বিভক্তিহীন অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে কোনো বিভক্তি থাকে না বা বিভক্তি যুক্ত করা যায় না। যেমন–

  • দ্বারা, কর্তৃক, নাগাদ ইত্যাদি।

২. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে।

নামজাত অনুসর্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন–

  • আগ>আগে, উপর>উপরে, কারণ>কারণে

ক্রিয়ামূলজাত অনুসর্গে ‘ইয়া’ বিভক্তযুক্ত হয়ে অনুসর্গ তৈরি হয়। যা সাধু রূপে ব্যবহৃত হয়। চলিত রূপে এর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন–

  • √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে।
  • √ধর্+ইয়া=ধরিয়া>ধরে বা ধ’রে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *