Banking

চেক কাকে বলে? চেক কত প্রকার ও কি কি?

1 min read

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো চেক কি বা চেক কাকে বলে, চেক কত প্রকার ও কি কি, চেক লেখার নিয়ম বা কিভাবে চেক লিখতে হয় এই সম্পর্কে।

বর্তমানের ব্যাংকিং সিস্টেম গুলো ইন্টারনেট মাধ্যমে সচল হলেও প্রত্যেকটি ব্যাংকের নিজস্ব কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো কখনো পরিবর্তন করা যায় না।

আর এমনই একটি সিস্টেম হলো চেক (cheque). বর্তমান সময়ে চেকের ব্যবহার কমে গেলেও চেকের গুরুত্ব কিন্ত কম হয়নি।

আপনি যেহেতু চেক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, সেহেতু নিশ্চয়ই আপনার কোনো না কোনো ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে।

আমাদের সবাই ব্যাংকে একাউন্ট থাকলেও আমরা সবাই কিন্ত টাকা উত্তলন করার জন্য চেক ব্যবহার করি না।

বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম চালু হওয়ায় আমরা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সাথে সাথে চেকের পরিবর্তনে এটিএম কার্ড (ATM Card) ব্যবহার করি।

চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তলন করার জন্য নিদিষ্ট ব্যাংকে যেতে হয়। আর এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তলন করার জন্য যেকোনো জায়গার এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়।

যাই হোক আজকের আলোচনার বিষয় হলো চেক কি বা চেক কাকে বলেচেক কত প্রকার ও কি কি?

প্রথমে আমরা জানবো Cheque কি?

চেক কি? (What is cheque)

চেক হলো এমন একটি হস্তান্তর যোগ্য দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংকের আমানতকারি লিখিত ও শর্তহীন ভাবে ব্যাংকে চেকের বাহক কে নিদিষ্ট পরিমানে অর্থ প্রদান করতে নির্দেশনা দেয়।

আপনি যদি চেক লিখেন তাহলে আপনি চেকের আদেষ্টা। আদেষ্টা চেকে টাকার পরিমান, তারিখ সব বিভিন্ন বিবরণ লিখে স্বাক্ষর করে ব্যাংককে আদেশ দেয়।

আদেশ দেওয়া ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিবৃতি অর্থ পরিশোধ করে। তবে, মনে রাখবেন আদেষ্টাকে অবশ্যই আদিষ্ট ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে।

বাংদেশের বলবৎ ১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিলের ৬ ধারায় বলা হয়েছে – চেক হলো এমন এক ধরনের বিনিময় বিল যা কোনো ব্যাংকের উপর কাটা হয় এবং যা চাহিবা মাত্র পরিশোধ্য।

চেক হলো এমন একটি হস্তান্তর দলিল যা প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং এর মাধ্যমে আমানতকারী ব্যাংকে রক্ষিত তার আমানত থেকে কোন নিদিষ্ট ব্যাক্তি বা তার আদেশে কোনো ব্যাক্তিকে নিদিষ্ট পরিমানে অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রতি শর্তহীন লিখিত আদেশ প্রদান করে। যা চাহিবা মাত্র পরিশোধ্য।

চেক কাকে বলে?

চেক হলো একটি আর্থিক দলিল বা ডকুমেন্ট। এর মাধ্যমে কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার নিদিষ্ট ব্যাংকের একাউন্ট থেকে অন্য কোনো ব্যাক্তি বা ব্যাংকের একাউন্টে নিদিষ্ট পরিমানে অর্থ প্রদানের আদেশ দিয়ে থাকে।

যার কাছে অর্থ পাঠানোর আদেশ ব্যাংকে দেওয়া হয়, সেই ব্যাক্তি বা কোম্পানির নামে চেকটি ইসূ বা লিখতে হয়।

চেকের মাধ্যমে সকল ব্যাংক গুলো সুরক্ষিত এবং নিরাপদ ভাবে অর্থ লেনদেন সম্পূর্ন করে থাকে। বলা যায় চেক নিরাপদ হিসেবে কাজ করে।

চেক ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের সময় হার্ড ক্যাশের ব্যবহার জড়িত থাকে না। সেক্ষেত্রে চুরি বা ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

এখনো প্রচুর সংখ্যাক মানুষ ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে। বলা যায় চেক হলে ব্যাংকিং জগতের মেরুদণ্ড এর মতো কাজ করে।

প্রত্যেকটি চেকের মধ্যে একটি করে চেক নাম্বার, MICR কোড ও IFSC কোড থাকে।

আশাকরি সহজে বুঝতে পারছেন চেক বলতে কি বুঝায়

চেক কত প্রকার ও কি কি?

সাধারণত একটি ব্যাংকে অনেক ধরনের চেক থাকে। তবে, আপনি কোন ভাবে চেক ব্যবহার করতে চান সেটা সম্পূর্ন আপনার ও যেই ব্যাক্তিকে আপনি টাকা পাঠাবেন তার উপর নির্ভর করে।

এখানে আপনি হচ্ছেন চেক ড্রয়ী এবং যার কাছে টাকা পাঠাতে চাচ্ছেন তিনি হলেন Payee. এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমরা অনেক ধরনের চেক দেখতে পায়।

একটি চেকের মেয়াদ থাকে ১৮০ দিন বা ৬ মাস পর্যন্ত। মানে চেকে যে তারিখ থাকে তার থেকে ১৮০ দিন বা ৬ মাস পর্যন্ত চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করা যায়।

আপনি যদি ১৮০ দিন বা ৬ মাস পরে চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করেন তাহলে সেটা অর্থ পরিশোধ করার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হবে না।

মনে রাখবেন, আপনি প্রয়োজন এবং ব্যবহারের চাহিদা অনুযায়ী চেক বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। নিচে কয়েক প্রকার চেকের উল্লেখ করা হয়েছে।

(১) বাহক চেক কাকে বলে?

চেকে যখন বাহককে (or bearer) লেখা থাকে তখন সেই চেককে বাহক চেক বলে। বাহক চেক নিয়ে যেকোনো ব্যাক্তি ব্যাংকে উপস্থিত হলে ব্যাংক তাকে টাকা দিতে বাধ্য থাকে।

তাই বাহক চেকে অনেক বেশি ঝুঁকি থাকে। আশাকরি বুঝতে পারছেন “বাহক চেক কি”?

(২) দাগকাটা চেক কাকে বলে?

কোনো চেকের উপর যখন সমান্তরাল ভাবে দুইটা দাগ দেওয়া হয় এবং & CO, or account payee, or not negotiable লেখা তাকে তখন তাকে দাগকাটা চেক বলে।

দাগকাটা চেক সাধারণত দুই প্রকার হয়। যথা –

  • সাধারণ দাগকাটা চেক
  • বিশেষ ভাবে দাগকাটা চেক

(৩) হুকুম চেক কি?

যখন কোনো চেক তার বাহককে কেটে দেওয়া হয় এবং কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয় তখন সেই চেককে হুকুম চেক বলে।

(৪) স্টেল বা বাসি চেক

যখন কোনো চেকের উল্লেখিত তারিখের ১৮০ দিন বা ৬ মাস পরে ব্যাংকে উপস্থিত করা হয় তখন সেই চেককে স্টেল বা বাসি চেক বলা হয়। মনে রাখবেন এই চেকে আপনি কোনো টাকা পাবেন না।

(৫) এন্টি ডেটেড চেক

ব্যাংকে চেক যেদিন উপস্থাপন করা হয় এবং চেকের তারিখ যদি তার পূর্বের হয় তখন তাকে এন্ট্রি ডেটেড চেক বলা হয়।

(৬) পোস্ট ডেটেড চেক

যখন কোনো চেকে ভবিষ্যতের তারিখ দেওয়া হয় তখন সেই চেককে পোস্ট ডেটেড চেক বলা হয়। এই ধরনের চেক গুলোকে তারিখ না আসা পর্যন্ত ব্যাংক টাকা পরিশোধ করে না।

চেক এর বৈশিষ্ট্য

চেক হলো এক ধরনের মুদ্রিত কাগজ, যা ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের হিসাবের বিপরীতে ইস্যূ করা হয়। একটি চেকের কত গুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

(১) লিখিত: প্রত্যেকটি চেক লিখিত হতে হবে। কোনো ফাঁকা চেক অর্থ পরিশোধের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। তাই চেকে তারিখ, স্বাক্ষর, প্রাপক, টাকার অংক লেখা থাকতে হবে।

(২) চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য: চেক চাহিবামাত্র হস্তান্তরযোগ্য একটি দলিল। তাই ব্যাংকে উপস্থিত হওয়া মাত্র ব্যাংক আপনাকে টাকা দিতে বাধ্য।

(৩) শর্তহীন: চেক সর্বদা শর্তহীন আদেশ বহন করে। শর্তরোপ করলে কোন চেক অর্থ পরিশোধের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় না।

(৪) ব্যাংকের উপর আদেশ: চেকের মাধ্যমে সব সময় একটি ব্যাংককে আদেশ প্রদান করা হয়। চেকের মাধ্যমে ব্যাংক ছাড়া অন্য কাউকে আদেশ প্রদান করা যায় না।

উপরের বৈশিষ্ট্য গুলো ছাড়াও ব্যবহারের ভেদে চেকের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

শেষ কথা

আজকে আমরা জানলাম চেক কি বা চেক কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কি কি এর সম্পর্কে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন এবং ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।

4.9/5 - (47 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x