বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন এই ওমিক্রন (Omicron) ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে। আাজকে জানবো এই ওমিক্রন (Omicron) সম্পর্কে।
করোনা(Covid-19)
ভ্যাক্সিন, সামাজিক দূরত্ব, ব্যাক্তিগত সুরক্ষাবিধির মাধ্যমে করোনা কে কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা গেলেও রয়ে গেছে মিউটেশনের ভয়।
কয়েক মাস পরপরই নতুন রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের সামনে।
আর সেই নতুন রূপ কে প্রতিহত করতে আমরা ক্লান্ত প্রায়। তবে কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ মিউটেশন ই নির্বিশ বলে প্রমানিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার সার্স কোভ-২ বিবর্তন সংক্রান্ত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি।
তাদের প্রধান কাজ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নামকরন এবং মিউটেশন পর্যালোচনা।
ওমিক্রন (Omicron) কী?
পূর্বের ভ্যারিয়েন্ট গুলোর মধ্যে ডেল্টা নিয়েই ছড়িয়েছিলো খুব বেশি আতঙ্ক।
কিন্তু সম্প্রতি বতসোয়ানা তে আবিস্কৃত হয়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট, যার মিউটেশন ছাড়িয়ে গেছে আগের সকল আতঙ্ক কে।
৯ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে কোভিড আক্রান্ত রোগীর দেহে এই জীবানুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
সাংকেতিক ভাবে এর নাম দেওয়া হয়েছিলো B.1.1.529। দক্ষিন আফ্রিকা তে এর বিস্তার প্রবল ভাবে লক্ষ্য করা যায়।
উক্ত দেশ টির স্বাস্হ্য বিভাগ প্রথম ২৪ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার কাছে এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তথ্য প্রদান করেন।
২৬ তারিখেই কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি সভায় বসে।
সাধারন ভাবেই করোনা ভাইরাসের নামকরনে গ্রিক বর্নমালার অক্ষর বেছে নেওয়ার প্রথা।
সেই হিসেবে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট এর নামকরন করা হয় ওমিক্রন(Omicron)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা ওমিক্রন (Omicron) কে variant of concern বলে চিন্হিত করেন।
দক্ষিন আফ্রিকা বতসোয়ানা ছাড়াও হংকং এবং বেলজিয়ামেও প্রথম ওমিক্রন (Omicron) শনাক্ত করা হয়েছিলো।
মনে করা হয়ে থাকে যারা করোনা থেকে সেরে উঠতে ব্যর্থ এরকম রোগীর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
আফ্রিকার পর যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডসেও একাধিক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
ইসরায়েল এবং ডেনমার্কেও অন্তত একজন করে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ধীরে ধীরে এশিয়া এবং ইউরোপেও এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে।
দক্ষিন আফ্রিকার জীববিজ্ঞানীদের মতে এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের (Omicron) ৫০ টি মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে অন্তত ৩০ টি স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বলে ধারনা করা হয়েছে।
করোনার ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন খুবি গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর মাধ্যমেই করোনা মানবদেহে যুক্ত হয় এবং বংশবিস্তার করে।
ওমিক্রন (Omicron) কতোটা সংক্রামক?
যেকোনো করোনা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ৩টি বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করে থাকেন।
প্রথম বিষয় হলো ভ্যারিয়েন্ট কতোটা সংক্রামক, দ্বিতীয় বিষয় হলো ভ্যারিয়েন্ট থেকে সৃষ্ট রোগের প্রকোপ কেমন এবং তৃতীয় মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফাকি দেওয়ার সক্ষমতা এই ভ্যারিয়েন্টের কতটুকু যাকে বলা হয় immune escape.
সংক্রমনের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে যদিও কিছুদিন হলো এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে তারপরও খুব দ্রুত এই ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠি।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশিস ঝা এখন অবধি প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লষন করে জানিয়েছেন করোনার আগের ভ্যারিয়েন্ট গুলো ছড়াতে বেশ কয়েক মাস সময় নিলেও ওমিক্রন সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিন আফ্রিকার বেশিরভাগ করোনা আক্রান্ত রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
অধ্যাপক ঝা এর মতে এতো দ্রুত ওমিক্রন দক্ষিন আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করেছে যা খুবই উদ্বেগজনক।
এর প্রধান ফ্যাক্টর হতে পারে উক্ত দেশের মাত্র ৩৬% জনগোষ্ঠী টিকাপ্রাপ্ত।নতুন করে টিকাপ্রাপ্তের অনীহা ও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয় ওমিক্রনের পুনঃসংক্রমন ক্ষমতা নিয়েই বিশ্বস্বাস্হ্য সতর্ক করেছে।
ওমিক্রন (Omicron) এর প্রভাব
সর্বশেষ ব্যাপার ওমিক্রনের মানবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্য।প্রচলিত ভ্যাক্সিন এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের ওপর কতোটা কাজ করবে সেটি জানার জন্য এটি খুব প্রয়োজনীয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে যতই মিউটেশন হোক ওমিক্রনের বিরূদ্ধে টিকা একবারে অকার্যকর হবে না৷
তবে যেহেতু অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের থেকে ওমিক্রনের মিউটেশন অনেক বেশি এবং এর স্পাইক প্রোটিন ভ্যাক্সিন কে অনেকটা অকার্যকর করে দিতে পারে তাই এটি কিছুটা উদ্বেগজনক ও।
কারন এটি ভ্যাক্সিনের ক্ষমতা অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার মতে নতুন করে ইউরোপ ওমিক্রনের কেন্দ্রস্থল হয়ে যেতে পারে। তবে ভ্যাক্সিন কোম্পানি গুলো অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের প্রাক্তন করোনা বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্ল্যাভিটের মতে অনুমোদিত ভ্যাক্সিনের কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধন করে একে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য অধিকতর উপযোগী করা সম্ভব।
মর্ডানা এবং ফাইজার জানিয়েছে এই বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এটি প্রায় ১০০ দিনের মধ্যেই সম্ভব।
তবে নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে এবং ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি পেতে পেতে প্রায় শীতকাল পার হয়ে যাবে।
তাছাড়াও আরেকটি উপায় হতে পারে টিকার ডোজ বাড়িয়ে দেওয়া। ওমিক্রনের জন্য বিশেষায়িত বুস্টার এক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
যাই হোক না কেনো একথা মাথায় রাখতে হবে যে করোনার মহামারি একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে এলেও যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে পারে। কাজেই টিকা গ্রহন এবং সুরক্ষার সকল উপায় মেনে চলা জরুরি।