জীববিজ্ঞান

বৃক্ক কি? বৃক্কের গঠন ও কাজ কি কি? অসমোরেগুলেশন | কিডনি কি

1 min read

আজকে আমরা আলোচনা করবো বৃক্ক কি? বৃক্কের গঠন ও কাজ নিয়ে।

বৃক্ক কি

আমাদের দেহে পরিবহনের কাজ(পুষ্টি অথবা বর্জ্য) সাধারণত রক্তের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রক্তের সাথে যে বর্জ্য মিশে থাকে তা মানবদেহ থেকে অপসারণ করে মূলত বৃক্ক। বৃক্ক এই বর্জ্য পদার্থ গুলোকে আালাদা করে মূত্রের সাথে দেহ থেকে বাইরে বের করে দেয়।

মানবদেহের উদর গহব্বরের পিছনের দিকে মেরুদণ্ডের দুইপাশে দুটো বৃক্ক অবস্থান করে থাকে।

তাহলে বলা যায়, বৃক্ক বা কিডনিই হলো মেরুদণ্ডি প্রাণীদের প্রধান রেচন অংগ।যার কাজ হলো রক্তকে ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ (যেমনঃ ইউরিয়া) পৃথকীকরণ করা এবং মূত্র উৎপাদন করা।

চিত্র- ০১ঃ বৃক্কের লম্বচ্ছেদ

বৃক্ক এর গঠন কি

এটি দেখতে অনেকটা  শিমের বিচির মতাে দেখায় এবং এর রং লালচে ধরনের হয়ে থাকে। এর বাইরের দিকের পার্শ্বটি উত্তল এবং ভিতরের দিকের পার্শ্ব হয় অবতল। অবতল অংশের ভাঁজকে বলা হয় হাইলাস (Hilus) বা হাইলাম। এই হাইলামের ভিতর থেকে ইউরেটার এবং রেনাল শিরা বের হয়ে আসে এবং রেনাল ধমনি বৃক্কের ভিতর প্রবেশ করে। এই দুটি বৃক্ক থেকে দুটি ইউরেটর বের হয়ে সরাসরি মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত যে অংশ থাকে তাকে রেনাল পেলভিস বলে।

বৃক্ক সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তন্তুময় আবরণ দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, একে বলা হয় রেনাল ক্যাপসুল । ক্যাপসুল-সংলগ্ন যে অংশ থাকে তাকে কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশকে বলা হয় মেডুলা। কর্টেক্স এবং মেডুলা এই উভয় অঞ্চলই যােজক কলা এবং রক্তবাহী নালি দিয়ে গঠিত হয়। মেডুলায় সাধারণ ভাবেই ৮-১২ টি রেনাল পিরামিড থাকে। এই রেনাল পিরামিডের অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে রেনাল প্যাপিলা (Papilla) গঠন করে। এসব প্যাপিলা সরাসরি পেলভিসে গিয়ে উন্মুক্ত হয়। প্রতিটি বৃক্কেই বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে, যাকে ইউরিনিফেরাস নালিকা বলে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রতিটি ইউরিনিফেরাস নালিকাই আবার ২টি প্রধান অংশে বিভক্ত-

১. নেফ্রন (Nephron) এবং

২. সংগ্রাহী নালিকা (Collecting tubule)

১. নেফ্রন কি

বৃক্কের গঠন ও কার্যিক একক কে নেফ্রন বলে। এটি বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকা ক্ষরনকারী একটি অংশ। মানবদেহের প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০-১২ লক্ষ নেফ্রন থাকে এবং এই প্রতিটি নেফ্রন ই মূলত বৃক্কের গঠন এবং এর কাজের জন্য দায়ী৷

চিত্র- ০২ঃ  নেফ্রন

নেফ্রন ২ টি অংশে বিভক্ত।যথা-

১. রেনাল করপাসল বা মালপিজিয়ান অংগ

২. রেনাল টিউব্যুল

১. রেনাল করপাসল

নেফ্রনের অগ্রের দিকে যে প্রান্ত থাকে তাকে রেনাল করপাসল বলে। এটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-

i) বোমান্স ক্যাপসুল

ii) গ্লোমেরুলাস

i) বোমান্স ক্যাপসুল: বোমান্স ক্যাপসুলই মূ্লত গ্লোমেরুলাসকে বেস্টন করে রাখে। বোমান্স  ক্যাপসুল সাধারনত দুই স্তরবিশিষ্ট পেয়ালার মতো একটি প্রসারিত অংশ।

ii) গ্লোমেরুলাস: গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৌশিক জালিকা দিয়ে তৈরি একটি অংশ। গ্লোমেরুলাসে ২টি ধমনির সৃষ্টি হয় যা হলো-

১। ইফারেন্ট ধমনী ও

২। অ্যাফারেন্ট ধমনী ।

গ্লোমেরুলাস অনেকটা ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিস্রুত তরল উৎপন্ন করে এবং রক্তের বর্জ্য পদার্থ গুলোকে আলাদা করে। এই ধাপে উৎপন্ন তরলকে আল্ট্রাফিলট্রেট বলা হয়।

২. রেনাল টিউব্যুল:

বোম্যান্স ক্যাপসুলের অক্ষীয় অঞ্চল থেকে সংগ্রাহী নালীকা পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া যে নালী থাকে তাকে বলা হয় রেনাল টিউব্যুল। গ্লোমেরুলাস হতে যে আলট্রফিলট্রেট তরল পাওয়া যায় তা রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই একই সময় এই তরলটি আরও কয়েক বার শোষণ ও নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং সর্বশেষ যে তরলটি আসে সেটিই হলো মূত্র। প্রতিটি রেনাল টিউব্যুলকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

i) নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা

ii) হেনলির লুপ

iii) প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা

i) নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা: এ নালিকাটি বোম্যান্স ক্যাপসুলের নিকট হতে হেনলির লুপ এর অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত প্যাঁচানো একটি নালিকা।

ii) হেনলির লুপ: এটি নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকার একদম শেষ প্রান্ত হতে প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। হেনলির লুপ দেখতে অনেকটা ইংরেজি “U” অক্ষর এর মতো হয়।

iii) প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা: এটি হেনলির লুপ এর একদম শেষ প্রান্ত হতে সংগ্রাহক নালিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নালিকা।

বৃক্ক এর কাজ কি

১. রক্ত থেকে প্রোটিন বিপাকের মাধ্যমে সৃষ্ট নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য (ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি) পদার্থ এই বৃক্কের মাধ্যমেই মানবদেহে থেকে অপসারিত হয়।

২. নেফ্রন অত্যন্ত একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত মূত্র উৎপাদন করতে থাকে।

৩. এটি রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৪. রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির আয়নিক গঠন বজায় রাখা ও এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৫. মানবদেহে বিভিন্ন ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন যে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ তা বৃক্কের কার্যকারীতায় মূত্রের মাধ্যমে  দেহ হতে নির্গত হয়ে যায়।

৬.  মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোন ক্ষরনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭. বৃক্ক অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

অসমোরেগুলেশনে বৃক্ক এর ভূমিকা কি

মানবদেহের অভ্যন্তরে কোষকলার মধ্যে বিদ্যমান পানি ও লবনের ভারসাম্য রক্ষার কৌশল কে অসমোরেগুলেশন বলে।

শরীরের যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য পরিমিত পরিমান পানি থাকা একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রধানত মূত্রের মাধ্যমেই শরীর থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমান পানি দেহের বাইরে বের হয়ে যায়। দেহের এই পানিসাম্যতা নিয়ন্ত্রণেই বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।

কোন কারনে দেহে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা নেফ্রনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় বেশি পরিমাণে মূত্র উৎপন্ন করে ফেলে। আবার দেহে পানির পরিমাণ যদি কমে যায় তাহলে নেফ্রন পুনঃশোষণ প্রক্রিয়া কমিয়ে দিয়ে কম পরিমাণে মূত্র উৎপন্ন করে।

বৃক্কের এইভাবে পানির সাম্যতা বজায় রাখার প্রক্রিয়াই হলো অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়া। আর এভাবেই বৃক্ক অসমোরেগুলেশনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে বৃক্ক বা কিডনি মানবদেহের প্রধান রেচন অংগ যা আমাদের দেহের বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে বাইরে বের করে দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

আশা করছি আজকে আপনাদের বৃক্ক কি? বৃক্কের গঠন ও কাজ নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছি।

5/5 - (41 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x