সালোকসংশ্লেষণ
সালোকসংশ্লেষণ শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ ”photos”( আলোক) এবং synthesis( সংশ্লেষণ বা তৈরী করা) এর সমন্বয়ে গঠিত। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়- সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রাসায়নিক সংশ্লেষ।
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ কোষ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, পরিবেশ থেকে গৃহীত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মূল দ্বারা শোষিত পানির মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্যের সংশ্লেষ ঘটায় এবং গৃহীত কার্বন ডাই অক্সাইড এর সমপরিমান অক্সিজেন হিসেবে নির্গত করে তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।
চিত্র -০১ঃ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষন
সালোকসংশ্লেষণ প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
১. সূর্যের আলো
২. কার্বন-ডাই- অক্সাইড
৩. পাতার ক্লোরোফিল
৪. পানি, খনিজ উপাদান
সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন –
১. শর্করা বা গ্লুকোজ
২. অক্সিজেন
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার রাসায়নিক বিক্রিয়াঃ
6CO2 + 12H2O + তাপ→ C6H12O6 + 6H2O + 6O2
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ২ টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।
যথা-
১. আলোকনির্ভর পর্যায়
২. আলোক নিরপেক্ষ/ অন্ধকার পর্যায়
সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন হয় মূলত- উদ্ভিদের সবুজ অংশে অর্থ্যাৎ পাতায়। যেহেতু পাতায় ক্লোরোফিল এর পরিমান বেশি কিন্তু কাণ্ড বা মূলে ক্লোরোফিল নেই তাই উদ্ভিদের পাতাতেই সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয় এবং বয়স্ক পাতার তুলনায় কচি পাতায় সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়।
তাছাড়া লাল আলোতে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয় এবং হলুদ বা সবুজ আলোতে কম হয়।
এই প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবে নির্গত হয় কার্বন- ডাই- অক্সাইড।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব:
১. শক্তি সংরক্ষণ:
সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত শক্তি উদ্ভিদ সর্বপ্রথম রাসায়নিক শক্তি হিসেবে নিজের মধ্যে জমা রাখে৷ পরবর্তীতে উদ্ভিদ এই রাসায়নিক শক্তিকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে এবং খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্রহণ করে। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি ধারণে সালোকসংশ্লেষণ প্রধান ভূমিকা পালন করে।
২. উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি:
উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রধান উৎস হচ্ছে এই প্রক্রিয়া। সবুজ উদ্ভিদ এর মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে এবং সে খাদ্য দিয়ে তার যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে৷
৩. প্রাণীর খাদ্য তৈরি:
প্রাণীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল কারণ একমাত্র উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। আর প্রাণীজগত সে খাদ্য গ্রহন করে।
৪. বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করা:
উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে প্রতিনিয়ত নানান রকম জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে থাকে। আর এই জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়৷ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে এই শক্তি সরবরাহ করে। অর্থ্যাৎ এই প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করে৷
৫. জ্বালানি উৎপাদন:
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যের কিছুটা খরচ করে সিংহভাগ নিজের জন্য সঞ্চিত রাখে৷ উদ্ভিদ মারা যাওয়ার পর এই সঞ্চিত খাদ্যগুলো জ্বালানিতে রূপান্তরিত হয়। কয়লা, পেট্রোল, তেল এই জ্বালানিগুলো সাধারণত উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।
৬. উদ্ভিদের শারীরিক বর্ধন:
উদ্ভিদ দেহে বিপাক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে উদ্ভিদ পুষ্টি লাভ করে। এই পুষ্টি উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৭.বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা:
উদ্ভিদ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে৷ এটি সম্ভব হয় শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কারণে।
অন্যদিকে শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি ও অক্সিজেন গ্রহণ করি৷ শুধুমাত্র শ্বসন প্রক্রিয়া থাকলে দেখা যেত বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতো৷
কেবলমাত্র, এই প্রক্রিয়ার কারণে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় আছে।
তাহলে আমরা বলতে পারি যে আমাদের পরিবেশের নানান দিক বিবেচনায় এবং ভারসাম্য রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণের ভূমিকা অপরিসীম।