জীববিজ্ঞান

মস্তিষ্ক কি? মস্তিষ্ক এর গঠন ও কাজ

1 min read

মস্তিষ্ক কি

মস্তিষ্ক আমাদের স্নায়ুতন্ত্র পরিচালনা করে।

সুষুম্নাকান্ডের শীর্ষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত বা মোটা অংশ করোটিকার মধ্যে অবস্থান করে তাকে মস্তিষ্ক  বলে।

ভ্রূণীয় বিকাশের সময় এক্টোডার্ম থেকে সৃষ্ট নিউরাল টিউবের সামনের অংশ স্ফীত হয়ে মস্তিষ্ক গঠন করে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, গড় ওজন প্রায় ১.৩৬ কেজি এবং প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে।

মস্তিষ্ক কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

যেমন-

১. অগ্রমস্তিষ্ক

২. মধ্যমস্তিষ্ক

৩. পশ্চাৎ মস্তিষ্ক

চিত্রঃ মস্তিষ্কের লম্বচ্ছেদ

অগ্র মস্তিষ্ক

এটি মস্তিষ্কের প্রধান অংশ গঠন করে৷ একে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে –

১. সেরেব্রাম

২. থ্যালামাস

৩. হাইপোথ্যালামাস

১. সেরেব্রাম

মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ যা মস্তিষ্কের প্রায় ৮০% গঠন করে এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশকে ঢেকে রাখে। দুটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার সমন্বয়ে সেরেব্রাম গঠিত।

খণ্ডদুটি ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালােসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত। প্রতিটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার ৫টি খণ্ডে বিভক্ত। যথা- ফ্রন্টাল লােব, প্যারাইটাল লােব, অক্সিপিটাল লােব,টেম্পােরাল লােব ও লিম্বিক লােব।

সেরেব্রামের কাজ

বাকশক্তি, স্মৃতি শক্তি, চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তি, সৃজনশীলতা, ইচ্ছা শক্তি, সহজাত প্রবৃত্তি, কর্মপ্রেরণা প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং সর্বোপরি মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

২. থ্যালামাস

সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের নিচে দুটি ক্ষুদ্র ও ডিম্বাকৃতির থ্যালামাস থাকে যা ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত।

থ্যালামাসের কাজঃ

সংবেদী-উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং রিলে করে সেরেব্রামে পাঠায়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক আচরণের প্রকাশ ঘটায়। ঘুমন্ত মানুষকে হঠাৎ জাগিয়ে তােলা ও পরিবেশ সম্পর্কে সতর্ক করে তােলে।

৩. হাইপােথ্যালামাস

এটি থ্যালামাসের ঠিক নিচে ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত। এটি অন্ততঃ এক ডজন পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত থাকে।

হাইপােথ্যালামাসের কাজঃ

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, রাগ, ভাল লাগা, ভীতি, আবেগ প্রভৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। পিটুইটারী গ্রন্থিও বিভিন্ন হরমােন নিঃসরণ করে।

মধ্য মস্তিষ্ক

হাইপােথ্যালামাসের নিচে ছােট অংশটি মধ্যমস্তিষ্ক। পৃষ্ঠীয় দিকে দুটি গােলাকার খণ্ড এবং অঙ্কীয় দিকে দুটি নলাকার ও পুরু স্নায়ুরজ্জ্ব নিয়ে গঠিত। প্রথম দুটি সেরেব্রাল পেডাংকল এবং শেষের দুটি কর্পোরা কোয়াড্রিজেমিনা।

অর্থ্যাৎ পশ্চাৎ মস্তিষ্কের উপরের অংশ হলো মধ্য মস্তিষ্ক যা  অগ্রমস্তিষ্ক পশ্চাৎ মস্তিষ্ক সংযুক্ত করে রাখে।

মধ্য মস্তিষ্ক এর কাজ

১. বিভিন্ন  কাজের সমন্বয় সাধন ও  ভারসাম্য রক্ষা করে।

২. দর্শন ও শ্রবণ এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

৩.  এটি অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে।

পশ্চাৎ মস্তিষ্কঃ

এটি মস্তিষ্কের পিছনের অংশ এবং ৩টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা-

১. সেরেবেলাম,

২.  মেডুলা অবলংগাটা

৩. পনস।

১. সেরেবেলাম

পনসের পৃষ্ঠভাগে অবস্থিত পশ্চাৎ মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশটিকে সেরিবেলাম বলে । এর বাইরের দিকে ধূসর পদার্থের আবরণ ও ভেতরের দিকের শ্বেত পদার্থ থাকে।

সেরেবেলামের কাজঃ 

দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। ঐচ্ছিক চলাফেরাকে নিয়ন্ত্রণ করে। পেশির টান ও দেহভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করে।

২.পনস

মধ্য মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত বল আকৃতির অংশকে পনস  বলে। এটি মেডুলা অবলংগাটা এবং মধ্য মস্তিষ্কের মাঝখানে অবস্থিত। এটি একগুচ্ছ স্নায়ুর সমন্বয়ে তৈরি।

পনস কাজঃ

এটি সেরেবেলাম ও মেডুলাকে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করে। স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. মেডুলা অবলংগাটা

মস্তিষ্কের সবচেয়ে পেছনের অংশকে মেডুলা অবলংগাটা বলে। এর সামনের দিকে পনস পেছনের দিকে সুষুম্নাকান্ডের উপরিভাগের সাথে যুক্ত থাকে।

মেডুলা অবলংগাটা কাজ

এটি সুষুম্মাকাণ্ড ও মস্তিষ্কের মধ্যে যােগসূত্র সৃষ্টি করে। এটি পৌষ্টিক নালির পেরিস্টালসিস, রক্তনালির সংকোচন-শ্লথন, হৃদস্পন্দন, ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণ, লালাগ্রন্থির ক্ষরণ, মলমূত্র ত্যাগ, বমি ইত্যাদি শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার উপায়

তাই যেহেতু আমাদের দেহের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ ব্রেইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় যেমন- আমাদের ক্ষুধা, নিদ্রা, হাটা,চলা সমকিছু। সেজন্য আমাদের শরীর কে চাংগা রাখতে হলে ব্রেইন কে চাংগা রাখা জরুরি। আমাদের ব্রেইন কে প্রানোবন্ত রাখার জন্য  আমাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ঘুম খুবই জরুরি একটি বিষয়।

খাবারের দিকে নজর দিতে গেলে প্রথমেই আমাদের মনে পড়ে ব্রেইন  কে ঠান্ডা করে এমন পানীয়। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে যখন আমাদের ব্রেইন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন কিছু পানীয় গ্রহনের মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের ক্লান্ত ব্রেইন কে আরাম দিতে পারি। পানীয় গুলোর মধ্যে অন্যতম-

১. গ্রীন টিঃ সবুজ চা কে ব্রেইনের জন্য উপকারী পানীয় বলা হয়ে থাকে। গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি চা হওয়ায় এতে ক্যাফেইন রয়েছে কিন্তু চা ও কফির তুলনায় কম তাই এর ক্যাফেইন কেও উপকারী হিসেবে ধরা হয়। গ্রিন টি’র ক্যাফেইন অ্যাডিনোসিন কে নিয়ন্ত্রন করে ব্রেইন কে সতেজ রাখে।

২. হলুদের চাঃ হলুদ বলতে আমরা কেবল মসলা কেই বুঝি৷ কিন্তু এই হলুদ এর পানীয় আমাদের ব্রেইন এর জন্য অত্যন্ত উপকারী। হলুদ এর চা হতাশা রোধে এবং স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়াও অ্যালজাইমার মতো মস্তিষ্কের রোগ সারাতেও এর জুড়ি নেই।৩. হট চকলেটঃ পছন্দের তালিকায় চকলেট নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। এক গবেষনায় জানা গেছে হট ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

5/5 - (31 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x