ফুসফুস এর গঠন ও কাজ কি কি?
আমাদের আজকের লিখার প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অংগ ফুসফুস এর অবস্থান, কাজ এবং এর গঠন নিয়ে।
আশা করি আজকের ইনফরমেশন আপনাদের কাজে লাগবে।
ফুসফুসঃ
ফুসফুস হলো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রধান শ্বসন অঙ্গ, যা আমাদের নিশ্বাস ও প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
ফুসফুস একধরনের রক্তজালিকা বা রক্তঝিল্লী বিশিষ্ট অঙ্গ ;
যা রক্তে অক্সিজেনের প্রবেশ ঘটায় এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটায় । যা নাসারন্ধ্র পথে দেহ হতে বাইরে বেরিয়ে যায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যাক্তি যখন বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে তখন তিনি মিনিটে প্রায় ১২-২০ বার নিশ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
চিত্রঃ ফুসফুস
ফুসফুস এর অবস্থানঃ
মানব দেহে ফুসফুসটি মূলত হৃদপিন্ডের দুইপাশ ঘেঁষে বড় খাঁচার ন্যায় অস্থিসমূহ দ্বারা আবৃত বক্ষ গহ্বরে অবস্থান করে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যার ফুসফুসের ওজন প্রায় ১০০০ গ্রাম এবং আয়তন প্রায় ৬০০০মি.লি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷
ফুসফুস এর গঠনঃ
এটি স্পঞ্জের মতো নরম , তুলতুলে এবং হালকা লালচে খয়েরী রঙের হয়ে থাকে।
ডান দিকের ফুসফুস তিনটি খণ্ডে এবং বাম ফুসফুসটি দুই খণ্ডে বিভক্ত।
ফুসফুস দুই ভাঁজবিশিষ্ট একটি পর্দা দিয়ে আবৃত যেটি প্লুরা নামে পরিচিত।
দুই ভাঁজের মধ্যে এক ধরনের রস নির্গত হয়। ফলে শ্বাসক্রিয়া চলার সময় ফুসফুসের সাথে বক্ষগাত্রের কোনো প্রকার ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় না।
ফুসফুসে অসংখ্য বায়ুথলি, রক্তনালী ও অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শ্বাসনালী থাকে। এই বায়ুথলিগুলোকে সাধারণত বলা হয়ে থাকে অ্যালভিওলাস ।
বায়ুথলিগুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুক্লোম শাখা প্রান্তে মৌচাকের ন্যায় অবস্থিত।
এই নাসাপথ দিয়ে বায়ু সরাসরি বায়ুথলিতে প্রবেশ করতে পারে।
বায়ুথলি একটি পাতলা আবরণে আবৃত কৈশিকনালিকা দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে।
বায়ু প্রবেশ করার পর এগুলো নিজে নিজে ফুলে ওঠে ও সংকুচিত হয়।
বায়ুথলি ও কৈশিক নালিকা গাত্র খুবই পাতলা তাই এর ভিতর দিয়ে খুব সহজেই গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।
ফুসফুস এর কাজঃ
মানব দেহে ফুসফুসের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় সম্পন্ন হয়ে থাকে।
গ্যাসীয় বিনিময়ে বলতে মূলত অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বিনিময়কেই বোঝায়।
মানুষের ক্ষেত্রে এটি মূলত বায়ু ও ফুসফুসের রক্তনালির ভিতরে ঘটে এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
গ্যাসীয় বিনিময় দুটি পর্যায়ে ঘটে। যথা-
১. অক্সিজেন শোষণ
২. কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ।
চিত্রঃ গ্যাসীয় বিনিময়
১। অক্সিজেন শোষণ:
ফুসফুসের অ্যালভিওলাস ও রক্তের চাপের পার্থক্যের কারণে অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে।
ফুসফুস থেকে ধমনির রক্তে অক্সিজেন প্রবেশের পর রক্তে অক্সিজেন দুইভাবে পরিবাহিত হয়ে থাকে।
১) সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন যুক্ত রক্ত রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে তারপর পরিবাহিত হয়।
২) বেশির ভাগ অক্সিজেন মূ্লত হিমোগ্লোবিনের লৌহ নামক অংশের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে একটি অস্থায়ী যৌগ গঠন করে থাকে। যা থেকে অক্সিজেন সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
হিমোগ্লোবিন+ অক্সিজেন ————> অক্সিহিমোগ্লোবিন(অস্থায়ী যৌগ)
অক্সিহিমোগ্লোবিন————> মুক্ত অক্সিজেন+হিমোগ্লোবিন
এইভাবেই রক্ত কৈশিকনালিতে পৌঁছার পর অক্সিজেন পৃথক হয়ে যায় এবং এটি প্রথমে লোহিত রক্তকণিকার আবরণ ও তারপরে কৌশিকনালীর প্রাচীর ভেদ করে লসিকার ভিতর প্রবেশ করে।
অবশেষে অক্সিজেন লসিকা থেকে কোষের আবরণ ভেদ করে কোষের ভিতর পৌঁছে।
২। কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগঃ
খাদ্য জারন বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রথমে কোষের আবরণ ভেদ করে লসিকাতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে কৈশিকনালীকার প্রাচীর ভেদ করে রক্তরসে প্রবেশ করে।
কার্বন ডাই অক্সাইড প্রধানত সোডিয়াম বাই কার্বনেট (NaHCO3) রূপে রক্তরসের মাধ্যমে এবং পটাশিয়াম বাই কার্বোনেট (KHCO3) রূপে লোহিত রক্তকণিকার মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এরপর কৈশিকনালি ও বায়ুথলি বা অ্যালভিওলাস ভেদ করে দেহের বাইরে বের হয়ে যায়।
ফুসফুসের সমস্যা:
শ্বাসনালির প্রদাহ বা ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, হুপিং কাশি, রক্তকাশি, স্বরভাঙা, হাঁপানি, ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়া, বুকে ব্যথা, পার্শ্ব ব্যথা ইত্যাদি সাধারণ সমস্যা ছাড়াও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
অ্যাজমা:
হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যার মূল লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট ও শাঁ শাঁ শব্দ করে নিশ্বাস ত্যাগ করা । মূলত এটি একটি বংশগতীয় রোগ। অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ হাঁপানির মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। অ্যাজমা বা হাঁপানি কারও একবার হলে পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না কিন্তু যথাযথ চিকিৎসা সহ নিয়ম মেনে চললে এবং ঔষধ গ্রহন করলে রোগটি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
সিওপিডি:
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি একধরনের ফুসফুসের রোগ, যা ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহের গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়, ফলে শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা হয়। দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ মানুষই মানসিক কষ্টে ভুগেন ও উদ্বেগ নিয়ে থাকেন।
উক্ত সমস্যা গুলো প্রতিরোধে কিছু ঘরোয়া টিপস মেনে চললে কিছুটা উপকার আশা করা যেতে পারে। যেমন-
১. হলুদ গুড়ার সাথে কুসুম গরম পানি গুলিয়ে খাওয়া যেতে পারে
২. আদা চিবিয়ে বা রস করে বা চা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৩. পুদিনা পাতার রস বা চা খাওয়া যেতে পারে৷
এই সকল প্রাকৃতিক জিনিস ট্রাই করার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সর্বোত্তম। কেননা ফুসফুস এর ব্যাপারে আমাদের সকলের সতর্ক হওয়া উচিত এবং যত্নবান হওয়া উচিত।
আজকের কন্টেন্ট এখানেই শেষ করছি। আশা করছি আপনারা সকলেই উপকৃত হবেন। আমার লিখা ভালো লেগে থাকলে নিজের প্রিয়জন দের সাথে শেয়ার করে তাদের ও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ