মানব প্রজননে হরমোন এর ভূমিকা কি?
আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে হরমোন এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। মানব প্রজননের ক্ষেত্রে এটি কোনো ভূমিকা রাখে কি না তাই আজ জানবো আমরা।
হরমোনঃ
জীবদেহের নির্দিষ্ট প্রকৃতির কলা কোষ থেকে বা গ্রন্থি কোষ থেকে এক বিশেষ ধরণের জৈব রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়ে সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে। জীবদেহের এই রাসায়নিক সমন্বয়কারীকে হরমোন বলে।
হরমোন একটি গ্রিক শব্দ হরম্যাসিন থেকে এসেছে ‘হরমাও’ কথার অর্থ হলো- উত্তেজিত বা জাগ্রত করা।
১৯০৫ সালে বেলিস এবং স্টার্লিং নামে দুই জন বিজ্ঞানী তারা সর্বপ্রথম জীবদেহে প্রথম হরমোনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
হরমোন কে রাসায়নিক দূত বলার কারন-
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে হরমোন বলে। এটি অতি অল্প পরিমাণে বিশেষ বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কাজ সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এরা উত্তেজক বা রোধক হিসেবে দেহের পরস্ফুিটন, বৃদ্ধি ও বিভিন্ন টিস্যুর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তির আচরণ, স্বভাব ও আবেগপ্রবণতার ওপরও হরমোনের প্রভাব অপরিসীম। এগুলো রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে উৎপত্তিস্থল থেকে দেহের দূরবর্তী কোনো কোষ বা অঙ্গকে উদ্দীপিত করে। এ জন্য হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলা হয়
হরমোন এর কাজ:
১. এটি আপনার শারীরিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নে কাজ করে।
২. মানুষের তৃষ্ণা,ঘুম ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন করে।
৩. শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে।
৫. যৌন বিকাশ এবং প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
মানব প্রজননে হরমোন:
মানব প্রজনন এ হরমোনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হরমোন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা নালীহীন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি রাসায়নিক দূত হিসেবে সরাসরি রক্তের মধ্যে প্রবেশ করে, বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশী পরিমান হরমোনের নিঃসরণ বিভিন্ন কাজের ব্যাঘাত ঘটায় এবং নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
আমাদের শরীরে নিম্নলিখিত গ্রন্থিগুলো প্রজনন সংক্রান্ত হরমোন নিঃসরণ করে থাকে। যেমন-
১. পিটুইটারি গ্রন্থি
২. থাইরয়েড গ্রন্থি
৩. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি
৪. শুক্রাশয় এর অনালগ্রন্থি
৫. ডিম্বাশয় এর অনালগ্রন্থি
৬. অমরা
পিটুইটারি গ্রন্থি:
এ গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের বৃদ্ধি উদ্দীপক এবং উৎপাদক হরমোন নিঃসৃত হয়।এ হরমোনগুলো-
১. জনন গ্রন্থি বৃদ্ধি, ক্ষরণ এবং কাজ নিয়ন্ত্রণ করে
২. মাতৃ দেহে স্তন গ্রন্থি বৃদ্ধি এবং দুগ্ধ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. জরায়ুর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি:
এই গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এ্টি-
১. দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটায়।
২. যৌন লক্ষণ প্রকাশ করে এবং
৩. বিপাকে সহায়তা করে।
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি:
এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত কিছু হরমোন-
১. যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও যৌন লক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করে।
শুক্রাশয় এর অনালগ্রন্থি:
এই গ্রন্থি থেকে টেস্টোস্টেরন ও এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলো-
১. শুক্রাণুর উৎপাদন
২. দাড়ি গোফ গজানো
৩. গলার স্বর পরিবর্তন ইত্যাদি যৌন লক্ষণ প্রকাশ করে।
ডিম্বাশয় এর অনালগ্রন্থি:
এই গ্রন্থি থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলো-
১. ডিম্বাণু উৎপাদন করে
২. মেয়েদের নারীসুলভ লক্ষণগুলো সৃষ্টি করে।
৩. ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভাবস্থায় জরায়ু, ভ্রুন, অমরা ইত্যাদি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
অমরা:
এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত গোনাডোট্রপিন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নিঃসরন হয়।এগুলো-
১. ডিম্বাশয়ের অনাল গ্রন্থি কে উত্তেজিত করে
২. স্তন গ্রন্থি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন এর প্রভাব:
সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভবসহ জননাঙ্গের সক্রিয় পরিস্ফুটন কালকে বলা হয় বয়ঃপ্রাপ্তি বা বয়ঃসন্ধিকাল ।এক কথায়, কৈশোর ও তারুণ্যের সন্ধিকালই হল বয়ঃসন্ধিকাল ।বয়সন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের দৈহিক, মানসিক ও যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে এবং প্রজননতন্ত্রের অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটতে শুরু করে হরমোনের প্রভাবে ।
বয়সন্ধিকালে ছেলেদের পরিবর্তনগুলো হলো-
১. ছেলেদের দাড়ি গোফ গজায়।
২. ছেলেদের গলার স্বর পরিবর্তন হয়।
৩. কাঁধ চওড়া হয়।
৪. প্রজনন তন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে ।
বয়সন্ধিকালে মেয়েদের পরিবর্তন গুলো হলো-
১.মেয়েদের দেহ ত্বক কোমল হয়
২. মেয়েদের চেহারার কমনীয়তা বৃদ্ধি পায়
৩. নির্দিষ্ট সময় পর পর ঋতুস্রাব হয়
৪. স্ত্রী জননতন্ত্র সাথে সম্পৃক্ত অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।
তাহলে বলা যায় যে, মানব প্রজননের ক্ষেত্রে হরমোন এর ভূমিকা অপরিসীম। হরমোনের অভাব হলে মানব প্রজননে ব্যাঘাত ঘটবে এবং প্রজনন ক্ষমতা ব্যাহত হবে।