আজকে আমাদের প্রধান আলোচনার বিষয় হলো পরিপাক কাকে বলে?মানবদেহে পাকস্থলীতে কিভাবে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাক হয় সে সম্পর্কীয় যাবতীয় ধারনা।
শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক কাকে বলে
মুখগহ্বরে খাদ্য পরিপাক কাকে বলে?
আমরা যখন কোনো খাবার খাই বা গ্রহন করি তখন আমাদের মুখের গহ্বরে শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান টি পরিপাক হয়। আমাদের মুখের অভ্যন্তরে দাঁত, জিহ্বা ও লালা গ্রন্থি রয়েছে।
মুখ গহ্বরে অবস্থিত লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে টায়ালিন ও মল্টেজ নামক এনজাইম শর্করা পরিপাকে অংশ গ্রহন করে।
দাঁত খাদ্যকে ছোট ছোট খন্ডে পরিণত করে আর জিহ্বা খাবার কে উল্টে পাল্টে দেয়।
কিন্তু মুখগহ্বরে আমিষ, স্নেহ জাতীয় খাদ্যের কোনরূপ পরিবর্তন হয় না।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiODyALpx4TnMjBKxP_YWc6AZWnF2Sja17KhIB9fGIDJsokwc8LzAE-icOLntc2ANPk39Y3P08gKeE0jiJc7c62uMkPhBQcrMGO12wGKvwAUOuD-PeTI3kYMVRyatedAIEIGnvKQ_AHLfEMfI2cz_DZ7nLGUevItxRPSUppOjebYcgcrOAcxCv2LjOXtB4/s1600/photo_2022-02-11_18-02-09-300x181.jpg)
আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাক কাকে বলে?
পাখস্থলীতে খাদ্য পরিপাক কাকে বলে?-
আমাদের গৃহীত খাদ্যদ্রব্য মুখগহ্বর থেকে পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়ায় অন্ন নালীর মধ্যে দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। পাকস্থলীতে খাদ্য আসার পর অন্তঃপ্রাচীর এ গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস নিসৃত হয়।
গ্যাস্ট্রিক রসের দুইটি প্রধান উপাদান থাকে। যথা-
১. হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCL)
২. পেপসিন।
হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের মধ্যে কোন অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে, নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিন এ পরিণত করে এবং পাকস্থলীর পেপসিন এর সুষ্ঠ কাজের জন্য অম্লীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে।
নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেন →HCL→ সক্রিয় পেপসিন
পেপসিন এক ধরনের এনজাইম যা আমিষকে ভেঙ্গে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি যৌগ গঠন করে, যা পলিপেপটাইড নামে পরিচিত।
আমিষ→পেপসিন→ পলিপেপটাইড
পাকস্থলীতে খাদ্য দ্রব্য পৌঁছানো মাত্রই হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন রস গুলো নিঃসৃত হয়। পাকস্থলীর অনবরত সংকোচন-প্রসারণ এবং এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে খাদ্য মিশ্র মন্ডে পরিণত হয়। একে পাকমন্ড বা কাইম বলে। এই মন্ড অনেকটা সুপের মত এবং কপাটিকা ভেদ করে ক্ষুদ্রান্ত প্রবেশ করে।
কেন পাকস্থলীতে শর্করা ও স্নেহ পরিপাক হয়না ?
খাবার পরিপাকের জন্য পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। এসব এনজাইম আমিষ জাতীয় খাদ্য কে ভেঙ্গে পলিপেপটাইড এ পরিণত হয়। কিছু শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্য সাধারণত পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না। কারণ শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য পাকস্থলীতে কোন এনজাইম থাকে না।
ক্ষুদ্রান্তে খাদ্য পরিপাক কাকে বলে?
পাকস্থলী থেকে পাকমন্ড ক্ষুদ্রান্তের ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এসময় অগ্ন্যাশয় থেকে একটি ক্ষারীয় পাচকরস ডিওডেনামে আসে, এই পাচকরস খাদ্য মন্ডের অম্ল ভাব কে প্রশমিত করে। পাচক রসের এনজাইম দিয়ে শর্করা এবং আমিষ পরিপাক এর কাজ চলতে থাকে এবং এখানেই স্নেহ পদার্থের পরিপাকও শুরু হয়।
স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাক কাকে বলে?
স্নেহ বিশ্লেষক লাইপেজ স্নেহপদার্থ কে ভেঙে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারলে পরিণত করে।
স্নেহপদার্থ→লাইপেজ→ফ্যাটি এসিড+ গ্লিসারোল
আংশিক পরিপাককৃত আমিষ ক্ষুদ্রান্তের ট্রিপসিন এর সাহায্যে ভেঙে অ্যামাইনো এসিড এবং সরল পেপটাইড এ পরিণত হয় ।
পলিপেপটাইড→ট্রিপসিন→ অ্যামাইনো এসিড+সরল পেপটাইড
অ্যামাইলেজ শ্বেতসারকে সরল শর্করায় পরিণত করে।
শ্বেতসার→ অ্যামাইলেজ→গ্লুকোজ
ক্ষুদ্রান্তে সব ধরনের খাদ্যই সম্পূর্ণভাবে নির্দিষ্ট এনজাইমের ক্রিয়ায় পরিপাক হয়ে সরল, শোষণ যোগ্য খাদ্য উপাদানে পরিবর্তিত হয়।
ক্ষুদ্রান্তের কাজ
১. শোষণ: পানি, ভিটামিন, খনিজ লবন এবং পাচিত সরল খাদ্য সমূহ এখানে শোষিত হয়। শর্করা ও প্রোটিনের সরল অংশ রক্তবাহে এবং ফ্যাটের সরল অংশ লসিকাবাহে প্রবেশ করে।
২. খাদ্যবস্তু গ্রহণ: পাকস্থলী থেকে অর্ধপাচ্য খাদ্য পাকমন্ডকে গ্রহন করে নিয়ে যায়।
৩. আন্ত্রিকরস ক্ষরণ: ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে আন্ত্রিকরস ক্ষরিত হয়। আন্ত্রিকরস খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়।
৪. পরিপাক: ক্ষুদ্রান্তে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট পাচিত হয়। এখানে আন্ত্রিক রসে অবস্থিত উৎসেচক অ্যামাইলোজ, মলটেজ, ল্যাকটেজ, সুক্রেজ, লাইপেজ থাকে।
৫. রেচন: ক্ষুদ্রান্ত্র গুরু ধাতু, উপক্ষার অপসরন করে রেচনে সহায়তা করে।
৬. বিচলন: ক্ষুদ্রান্ত্রে বিচলনের ফলে খাদ্যের সঙ্গে উৎসেচকের মিশ্রণ, পাচিত খাদ্যের শোষণ এবং অপাচ্য খাদ্যের নিন্মগতি সহজ হয়।
বৃহদান্ত্র
এটি মূলত মল তৈরি করে ও জমা রাখে। ৫% খাবার, ভিটামিন ও পানি শোষণ করে। প্রয়োজন অনুসারে মল ত্যাগ করে এবং মিউকাস নিঃসরণ করে মলত্যাগে সহায়তা করে।
আশা করছি আজকের পরিপাক কাকে বলে? বিস্তারিত আলোচনায় সকলেই উপকৃত হবেন এবং নিজেরা উপকৃত হয়ে নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।