Modal Ad Example
Health

জাম এর উপকারিতা কি কি? ব্যাধি দূর করতে জাম।

1 min read

জাম

জাম আমাদের দেশের গ্রীষ্মকালীন রসালো একটি ফল৷ এবং এটি এশিয়া মহাদেশের সুপরিচিত মৌসুমী একটি ফল।

এই ফল মূলত জুন-জুলাই মাসে পাওয়া যায়৷ আমাদের দেশে এটি জাম নামে পরিচিত হলেও বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে।

যেমন: ব্ল্যাক প্লাম‚ জাম্বুল‚ জাম্বোলান‚ জাম্বাস‚ মালাবার প্লাম‚ রজামান‚ নেরেডু‚ কালা জামুন‚ নাভাল‚ জামালি‚ জাভা প্লাম ইত্যাদি।

জাম একটি সুস্বাদু  পুষ্পের মতো ফল যা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ এবং এতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন।

এর  রঙ অনেকটা বেগুনি কালো ধরনের এবং স্বাদ বেশিরভাগ মিষ্টি ও সামান্য টক হয়ে থাকে। অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি স্বাস্থ্যকর এবং এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুনাগুন।

জাম এর উপকারিতা

বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনে জামের ব্যবহার হয়ে আসছে।

হেকিমী, আয়ুর্বেদী এবং ইউনানী চিকিৎসাতেও জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, ডেক্সট্রোজ, ফ্রক্টোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেটসহ অসংখ্য উপাদান। যা স্বাস্থ্যের বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে এবং সুস্বাস্থ্য গঠন করে।

এর উপকারিতা নিম্নরূপ-

১. ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূরীকরণ:

জামে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি আর এর ফলে এই ফল ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া-

  • মুখের দুর্গন্ধ রোধ করা,
  • দাঁত মজবুত করা,
  • মাড়ি শক্ত করা এবং মাড়ির ক্ষয়রোধেও জাম সাহায্য করে।

এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠাণ্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে রেয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

জামে ক্যালোরির পরিমান খুবই কম থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত।

তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্য তালিকায়  জাম রাখা আবশ্যক ।

৩. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি:

জাম ফলটি ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

জামে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লৌহ  হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে।

তাই হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা প্রয়োজন।

৪. সংক্রমন রোধে:

জামে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকায় এটি দাঁত ও মাড়ির সংক্রমন রোধ করতে সাহায্য করে।

জামে ম্যালিক এসিড, অক্সালিক এসিড, ট্যানিন ইত্যাদি এন্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিইনফেক্টিভ উপাদান গুলো থাকায় এটি সংক্রমণ রোধে অধিক কার্যকরী।

৫. রক্তাল্পতা ও অ্যানিমিয়ায় জামের উপকারিতা:

জামে পর্যাপ্ত পরিমান আয়রন থাকে। এই আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।

তাই যারা রক্তাল্পতায় ভুগে তারা যদি জাম খায় তবে তাদের দেহে হিমোগ্লোবিন এর পরিমান বা লোহিত রক্তকনিকার পরিমান বৃদ্ধি পাবে।

৬. জাম পরিপাকে সাহায্য করে:

জামে রয়েছে যথেষ্ট পরিমান ফাইবার। আর এই ফাইবার যকৃত কে সক্রিয় করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

যাদের হজমের বা অম্বলের সমস্যা থাকে জাম খাওয়া তাদের জন্য অধিক উপকারী।

৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে জাম:

কয়েকটি গবেষণায় জামের কেমো প্রটেক্টিভ (chemo protective) বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে অনেক তদন্ত করা হয়েছে।

জে. সি. জ্যাগেটিয়া এবং তার কলিগ-দের একটি গবেষণা অনুযায়ী এই ফলের নির্যাসে প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে। আর এই বৈশিস্ট্য প্রমাণ করে যে জামের নির্যাস ক্যান্সার হওয়া থেকে দেহকে রক্ষা করে থাকে। এটি ফ্রি রেডিক্যালস-কেও নষ্ট করে দেয়।

৮. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

জাম দেহে ইমিউন সিস্টেম (immune system) কে আরো বৃদ্ধি করে তোলে।

এতে থাকা প্রচুর ভিটামিন-সি এর কারণে হাই লেভেল ও সাধারণ সিজনাল সমস্যাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম কে আরো শক্তিশালী করে তোলে।

এই ফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ থাকায়, এটি স্কিন-এর জন্য ভাল এবং অকাল বার্ধক্যজনিত যে কোন কিছুতে এটি বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে।

৯. হার্টের সুস্থ্যতা বজায় রাখে:

জামে রয়েছে অ্যালজিনিক এসিড বা অ্যালজিট্রিন, অ্যান্থোসিয়ানিন এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস -এর  মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।

তাছাড়া এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অক্সিডেশন  প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সুস্থ্য রাখতে  অসামান্য অবদান রাখে।

এছাড়াও এটি পটাসিয়াম-এর একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার যা-

  • উচ্চ রক্তচাপ  প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
  • হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকি হ্রাস্ব করে।

অবশেষে বলা যেতে পারে যে জামের উপকারিতা অন্তহীন। এর উপকারিতা এবং কার্যকারিতা বলে শেষ করা যায় না। জাম খুব বেশি লোভনীয় মুখরোচক ফল না হলেও এর উপকারের কাছে হার মেনে যায় এর স্বাদ। অর্থ্যাৎ যেকোনো ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ে জামের ভূমিকা অতুলনীয়।

5/5 - (28 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x