শ্বসন কাকে বলে ? শ্বসন এর প্রকারভেদ এবং প্রভাবক সমূহ কি কি?

আজকে আমরা আলোচনা করবো শ্বসন কাকে বলে ? শ্বসন এর প্রকারভেদ নিয়ে।

শ্বসন কাকে বলে :

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু বা শ্বসন বস্তু মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় তাকে শ্বসন (Respiration) বলে ।

শ্বসন আবিষ্কার:

১৭৮০ খৃষ্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে  প্রথম শ্বসন কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন ।

জৈবিক প্রয়োজনে জীবদেহে প্রতিনিয়ত নানাপ্রকার জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তির প্রয়োজন হয় ।

আর এই শক্তি অর্জনের জন্য জীব খাদ্য গ্রহন করে ।

খাদ্যস্থিত স্থৈতিকশক্তি যা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত হয়, তা শ্বসন নামক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গতিশক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।

এই গতিশক্তি বা তাপশক্তির দ্বারা জীব খাদ্যগ্রহন, বৃদ্ধি, চলন, রেচন, জনন, প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে ।

জীব দেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করাই স্বাসকার্যের তথা শ্বসনের একমাত্র উদ্দেশ্য ।

শ্বসনের বৈশিষ্ট্য:

১. এটি একটি অপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া।

২. এর ফলে জীবের শুস্ক ওজন হ্রাস পায়।

৩. এটি একটি তাপমোচী প্রক্রিয়া।

৪. শ্বসনে শক্তির মুক্তি ঘটে।

শ্বসন অপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া কেনো?

এই প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু (জৈব যৌগ) বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল উপাদানে (অজৈব যৌগ) পরিণত হয় ।

এতে কোষের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায় ও শক্তির মুক্তি ঘটে , তাই শ্বসনকে অপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া বলে ।

শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে কেনো?

শ্বসনে কোষস্থ খাদ্য বস্তুতে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তির কিছু অংশ উচ্চ শক্তিধর জৈব যৌগ ATP -এর মধ্যে রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয় যা জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।

বাকি অংশ আলোকশক্তি, তাপশক্তি, বৈদুতিক শক্তিরূপে মুক্ত হয়। শ্বসনে উৎপন্ন শক্তির বেশ কিছু অংশ তাপ শক্তিরূপে মুক্ত হয় বলে শ্বসনকে তাপমোচী বিক্রিয়া বলে ।

শ্বসন এর প্রকারভেদঃ

শ্বসন ২ প্রকার। যথা-

১. সবাত শ্বসন

২. অবাত শ্বসন

১. সবাত শ্বসন কাকে বলে :

যে  পদ্ধতিতে বায়ুজীবী জীবকোষে শ্বসন বস্তু মুক্ত অক্সিজেন উপস্থিত সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে পানি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড পরিণত হয় এবং শ্বসনবস্তু সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে।

সবাত শ্বসন সংঘটনের স্থান:

এককোষী প্রাণী অ্যামিবা থেকে শুরু করে উন্নত শ্রেণীর বহুকোষী উদ্ভিদ এবং প্রাণীদেহে প্রতিটি সজীব কোষে এই ধরণের শ্বসন সংঘটিত হয়।

এই ধরণের শ্বসনে কোষস্থ খাদ্য প্রধানত গ্লুকোজ কোষের সাইটোপ্লাজমে অক্সিজেন এর উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে কতগুলি উৎসেচকের সহায়তায় আংশিক ভাবে জারিত হয়ে পাইরুভিক অ্যাসিড এ পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে EMP পাথওয়ে বলা হয়।

1 গ্রাম অনু গ্লুকোজ থেকে 686 কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।

২. অবাত শ্বসন কাকে বলে :

যে  পদ্ধতিতে অবায়ুজীবী জীব কোষে মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসনবস্তু অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেন কর্তৃক জারিত  হয়ে কার্বন ডাই  অক্সাইড ও পানিতে পরিণত হয়  এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্তশক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে তাকে অবাত শ্বসন বলে।

অবাত শ্বসন সংঘটনের স্থান:

এটি ডিনাইটিফাইং ব্যাকটেরিয়া, সালফার ব্যাকটেরিয়া, মিথেন ব্যাকটেরিয়া তে দেখা যায়।

এই প্রক্রিয়ায়  1 গ্রাম অনু গ্লুকোজ থেকে 50 কিলোক্যালোরি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এটি কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে।

শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকসমূহ:

এই প্রক্রিয়ার প্রভাবক ২ প্রকার।যথা-

১. বাহ্যিক ও

২. অভ্যন্তরীণ প্রভাবক।

১. শ্বসন এর বাহ্যিক প্রভাবক কাকে বলে :

বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ হলো- তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পানি, আলো, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি।

তাপমাত্রা: ২০ সেলসিয়াস এর নিচে এবং ৪৫ সেলসিয়াস এর উপরের তাপমাত্রায় শ্বসনের হার কমে যায়।

শ্বসনের জন্য উত্তম তাপমাত্রা ২০ সেলসিয়াস।

অক্সিজেন: সবাত শ্বসনে পাইরুভিক এসিড জারিত হয়ে পানি ও অক্সিজেন  উৎপন্ন করে। কাজেই অক্সিজেনের অভাবে এই প্রক্রিয়া কোনোক্রমেই চলতে পারে না।

পানি: পরিমিত পানি সরবরাহ শ্বসন ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু অত্যন্ত কম কিংবা অতিরিক্ত পানির উপস্থিতিতে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

আলো: শ্বসন কার্যে আলোর প্রয়োজন পড়ে না সত্যি কিন্তু দিনের বেলা আলোর উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খোলা থাকায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও অক্সিজেন  ত্যাগ করা সহজ হয় বলে শ্বসনের হার একটু বেড়ে যায়।

কার্বন ডাই অক্সাইড: বায়ুতে এর ঘনত্ব বেড়ে গেলে শ্বসনের হার কিঞ্চিত কমে যায়।

২. শ্বসন এর অভ্যন্তরীণ প্রভাবক কাকে বলে :

অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ হলো- খাদ্যদ্রব্য, উৎসেচক, কোষের বয়স, অজৈব লবণ, কোষমধ্যস্থ পানি প্রভৃতি।

খাদ্যদ্রব্য: এই প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য (শ্বসনিক বস্তু) ভেঙ্গে শক্তি, পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত করে তাই কোষে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণ ও ধরন শ্বসনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।

উৎসেচক: এই প্রক্রিয়ায় বহুবিধ এনজাইম বা উৎসেচক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। কাজেই এনজাইমের ঘাটতি শ্বসনের হার কমিয়ে দেয়।

কোষের বয়স: অল্পবয়স্ক কোষে বিশেষ করে ভাজক কোষে প্রোটোপ্লাজম বেশি থাকে বলে বয়স্ক কোষ অপেক্ষা কম বয়সী কোষে শ্বসনের হার বেশি হয়।

অজৈব লবণ: কোনো কোনো লবন শ্বসনকে  ব্যাহত করলেও কোষের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কাজের জন্য এবং স্বাভাবিক  প্রক্রিয়ায় শ্বসনকে  পরিচালনার জন্য কোষের অভ্যন্তরে অজৈব লবণ থাকা বাঞ্চনীয় ।

কোষমধ্যস্থ পানি: বিভিন্ন শ্বসনিক বস্তু দ্রবীভূত করতে এবং এনজাইমের কার্যকারিতা প্রকাশের জন্য পানির প্রয়োজন।

Similar Posts