কারক কাকে বলে ? কতো প্রকার ও কি কি

আজ আমরা জানবো কারক কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি

কারক কাকে বলে

বাক্যে ক্রিয়ার সাথে বিশেষ্য বা সর্বনামের সম্পর্ককে কারক বলে।কারক শব্দের অর্থ ক্রিয়া সম্পাদন করা।

কারক এর প্রকারভেদ

কারককে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়।

১. কর্তৃ কারক

২. কর্ম কারক

৩. করণ কারক

৪. সম্প্রদান কারক

৫. অপাদান কারক

৬. অধিকরণ কারক

ঊদাহরণঃ সম্রাট আকবর বঙ্গের কোষাগার থেকে প্রতিদিন চাকরদের দ্বারা প্রজাদের অর্থ বিলি করতেন।

এখানে,

সম্রাট আকবর- কর্তৃ কারক

অর্থ – কর্ম কারক

চাকরদের দ্বারা- করণ কারক

প্রজাদের- সম্প্রদান কারক

কোষাগার থেকে- অপাদান কারক

প্রতিদিন- অধিকরণ

কর্তৃ কারক কাকে বলে

বাক্যে উপস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। সহজ ভাষায় বাক্যে  যে কাজ সম্পাদন করে সেই কর্তৃকারক।

মেয়েরা ফুল তোলে। এখানে মেয়েরা কর্তৃকারক।

তারা স্কুলে যায়। এখানে তারা কর্তৃকারক।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের ভিত্তিতে কর্তৃকারক ৪ প্রকার

  • মূখ্যকর্তা
  • প্রযোজক কর্তা
  • প্রযোজ্য কর্তা
  • ব্যতিহার কর্তা

মূখ্যকর্তাঃ

যে কর্তা নিজেই ক্রিয়া বা কাজ সম্পাদন করে তাকে মূখ্যকর্তা বলে।

যেমনঃ ছেলেরা বল খেলে। এখানে ছেলেরা নিজেরাই কাজ করছে।  তাই ছেলেরা মূখ্যকর্তা।

প্রযোজক কর্তাঃ

যে কর্তা অন্যকে দিয়ে কাজ করায় তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

যেমনঃ মালিক চাকরকে বাজারে পাঠালেন। এখানে মালিক চাকরকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। তাই মালিক প্রযোজক কর্তা।

প্রযোজ্য কর্তাঃ

যে কর্তা অন্যের কাজ করে বা প্রযোজক কর্তা যাকে দিয়ে কাজ করায় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে।

যেমনঃ মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। এখানে শিশু প্রযোজ্য কর্তা।

ব্যতিহার কর্তাঃ

বাক্যে উপস্থিত দুই কর্তা যখন একই সময়ে একই কাজ সম্পাদন করে, তবে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে।

যেমনঃ  রাজায়- রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত। এখানে রাজায়-রাজায় ব্যতিহার কর্তা।

কর্ম কারক কাকে বলে

বাক্যে কর্তা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে বা কর্তা যে কাজ করে তাকে কর্মকারক বলে। যেমনঃ তারা ক্রিকেট খেলে। এখানে ক্রিকেট কর্ম কারক।  কর্মকারক প্রধানত দুই প্রকার।

  • মুখ্য কর্ম
  • গৌণ কর্ম

উদাহরণঃ সোহান আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছে।

এখানে আমাকে গৌণ কর্ম, কলম মুখ্য কর্ম।

মুখ্য কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয় না। গৌণ কর্মে যুক্ত হয়।

কর্ম কারক চার প্রকার

১. সকর্মক ক্রিয়ার কর্মঃ ছেলেরা বল খেলছে।

২.  প্রযোজক ক্রিয়ার কর্মঃ শিশুটিকে খাইয়ে দাও।

৩. সমধাতুজ কর্মঃ খুব এক খানা খেয়েছি।

৪. উদ্দেশ্যে এবং বিধেয়কর্মঃ রাতকে(উদ্দ্যেশ্য কর্ম) মোরা রাত্রি(বিধেয় কর্ম) বলি।

করণ কারক কাকে বলে

করণ শব্দের অর্থ সহায়ক বা উপায়। বাক্যে কর্তা যার দ্বারা বা সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে করণকারক বলে।

যেমনঃ সে কলম দিয়ে লিখছে। এখানে কলম এর সাহায্যে লিখছে। তাই কলম করণকারক।

টাকায় সব মেলে। এখানে টাকায় করণকারক।

সম্প্রদান কারক কাকে বলে

যাকে স্বত্ব বা দাবি ত্যাগ করে কোনকিছু দান বা সাহায্য করা হয় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমনঃ অন্নহীনে অন্ন দাও। এখানে অন্নহীন সম্প্রদানকারক। জীবে দয়া করো। এখানে জীবে সম্প্রদান কারক।

অপাদান কারক কাকে বলে

যা কিছু হতে, থেকে বা চেয়ে কোনকিছু আরম্ভ, বিচ্যুত, দূরীভূত  বা গৃহীত হয় তাকে অপাদান কারক বলে।

যেমনঃ দুধ থেকে দই হয়। এখানে দুধ থেকে অপাদান কারক। জমি থেকে ফসল হয়। এখানে জমি থেকে অপাদান কারক।

অধিকরণ কারক

ক্রিয়া সংঘটনের সময়, স্থান  বা আধারকে অধিকরণ কারক বলে।

যেমনঃ ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়া চালিল।  এখানে ঘোড়ায় অধিকরণ কারক।

অধিকরণ কারক ৩ প্রকার

  • কালাধিকরণ
  • আধারাধিকরণ
  • ভাবাধিকরণ

কালাধিকরণ

ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কালাধিকরণ বলে। যেমনঃ বসন্তে ফুল ফোটে। এখানে বসন্ত  কালাধিকরণ।

আধারাধিকরণঃ

ক্রিয়া সংঘটনের আধার বা বিষয়বস্তুকে আধারাধিকরণ বলে।

আধারাধিকরণ ৩ প্রকার

 ঐকদেশিক

বিশাল স্থানের নির্দিষ্ট এক অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক অধিকরণ বলে। যেমনঃ সাগরে মাছ আছে। ঘাটে নৌকা বাধা আছে।

অভিব্যাপক

বিশাল স্থানের বা ছোট স্থানের সবটা জুড়েই যদি ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকে অভিব্যাপক অধিকরণ বলে।

যেমনঃ পুকুরে পানি আছে। তিলে তৈল আছে।

বৈষয়িক

কোন বিশেষ বিষয়ে কারও গুণ বা দোষ থাকলে তাকে বৈষয়িক অধিকরণ বলে। যেমনঃ স্বর্ণা অংকে কাচা কিন্তু বাংলায় ভালো।

ভাবাধিকরণ

যদি কোন ক্রিয়াবাচক নাম অন্য ক্রিয়ার কার্যক্রম নির্দেশ করে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। যেমনঃ হাসিতে মুক্তা ঝরে।

কান্নায় শোক কমে।

কারক মনে রাখার সহজ উপায়

কে, কারা কর্তৃ

কি, কাকে কর্ম

দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক করণের ধর্ম

স্বত্ব ত্যাগে যাকে দান সেই হয় সম্প্রদান

জাত, বিচ্যুত, গৃহীত অপাদানে রক্ষিত

স্থানভেদে কাল অধিকরণ চিরকাল