আমাদের গ্রাম রচনা
আসসালামু আলাইকুম আজ আমরা আপনাদের সাথে আমাদের গ্রাম রচনা সম্পর্কে আলোচনা করব।আমাদের গ্রাম রচনা রচনা এমন একটি বিষয় যা আমরা প্রত্যেকে পড়তে ভালোবাসি। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ গ্রাম কে ভালোবাসে। আবার অনেকে আছে যাদের গ্রামকে ভালোবেসে তারা অনেক কাজ করেছে গ্রামকে উন্নতি করার জন্য। তাহলে চলুন আজ আমরা আপনাদের সাথে আমাদের গ্রাম রচনা সম্পর্কে আলোচনা করি।
ভূমিকা:
সবুজে শ্যামলে ভরা আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্থান জুড়ে রয়েছে গ্রাম। আমাদের এই গ্রাম গুলো যেন সবুজের লীলাভূমি। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি যেকোনো মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে দেয়। গ্রামের শান্ত পরিবেশ মানুষের সকল ক্লান্তি দূর করে। গ্রামেই হচ্ছে এদেশের প্রাণ।
‘বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনা দেশ ভালোবেসে,
ভাসানের গান শুনে কতবার ঘোড়ার ঘর গেল দেশে।
মাথুর পালা বেঁধে কত বার ফাঁকা হল ঘোড়ার ঘর।’’
——– জীবনানন্দ দাশ।
এদেশের গানের দেশ, কবিতার দেশ, সবুজের দেশ। বাংলার নিসর্গ ছবি, গাছের ফুল, প্রকৃতি শ্যামল, ফসলের মাঠ, পাখি কল- কাকলি, কলকাকলি রাখালের সুরধ্বন, নদীর কলতান, প্রভৃতি মানুষ কে মুগ্ধ করে। কবি মনে দোলা দেয় ।গ্রামের স্নেহ প্রেম ভালোবাসা আসে আসে সৌন্দর্য শ্যামলিমা, আছে সরল প্রাণের চঞ্চলতা। কবি ভাষায়-
’ আমাদের দেশের রাঙ্গামাটির
আকুল করা গ্রাম
ছুটিয়ে নয় গায়ের পথ
ঘুরিয়ে দিতে প্রাণ।’’
আবহমান গ্রাম বাংলা:
গ্রামের আম, জাম,কাঠাঁল এর ছায়ায় সুনিবিড় পথে বাউল মন উদাস হয়ে ফিরে। এখানে যেন চিরন্তন বাংলাদেশের হৃদয় স্পর্শ মেলা। তার অবিরাম প্রসন্ন আকাশ, দিগন্ত প্রান্তর শস্য, দোয়েল- খঞ্জনা- শালিক- বউ কথা কও পাখির কূজন যেন এক সপ্না লোকের ইন্দ্রজাল রচনা করে দেয়। তার বোনের পত্র মর্মরে এবং স্নেহ শালিনী নদীর কল গুঞ্জনে, মায়ের স্নেহ সম্ভাষণ এর মত যেন জড়িয়ে আছে এক মায়াময় স্নিগ্ধ শ্রী রূপ শ্রী।
গ্রামের আকর্ষণ:
চারিদিকে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, মাঝখানের সবুজ দ্বীপের মতো স্বপ্নমাখা এখানে গ্রাম। প্রভাত কাকলির মধ্যে প্রতিদিন উঠে আসে রক্তিম সূর্য।আমাদের গ্রাম রচনা গরু ছড়া এবং প্রসন্ন আকাশ পূর্ণ করে বাড়তে থাকে রাখালিয়া বাঁশি। আঁকা বাঁকা মেঠো পথে হেটে আসে নিঃসঙ্গ পথিক। আম– কাঁঠাল- নিম -অর্জুন- শিরীষের ছায়া- দিঘির কলমিলতা- বনতুলসী- ফুলের ঘ্রাণ আর দোয়েল- শ্যামা- শালিক- অঞ্জনার কল কাকলি তাকে গ্রামের অন্তঃপুরে আমন্ত্রণ জানায়। পথের দু’ধারে শাখা পেলব বহুতে পথিকের গলা জড়িয়ে প্রশ্ন ধারায়।
‘’ হে বন্ধু, আছো তো ভালো?
গ্রামের সৌন্দর্য:
গ্রামের পল্লবঘন, আম্রকানন, রাখালের স্বপ্ন ময় খেলা, আরে স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল এর নিষিদ্ধ- শীতল স্নেহময় অন্তর্লোকের আনন্দ দুয়ারে যেন খুলে দেয়। তার শাপলা দিঘিতে হাঁসেরা খেলা করে। ঝুলন্ত সজিনার ডালে বকের ধ্যানমগ্ন তাই, হিজল মাছরাঙ্গার মৎস্য তপস্যায়, ঘুঘুর কান্নায়, শঙ্খচিলের মর্মবিদারী আত্মবিলাপ, ভিড় প্রবাহিণী নদীর কোল গুঞ্জনে, তার আজানে ডাকের সৌন্দর্য ভিখারি মন চুরি হয়ে যায়। আর এজন্যই কবি জীবনানন্দ দাশ বলেন-
’ তোমার যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পরে রয়ে যাব।’’
গ্রামের কর্মব্যস্ততার রূপ:
গ্রামের চাষিরা হাল- বলদ নিয়ে মাঠে চাষে, বীজ বোনে, পাকা ফসল তোলে। জেলেরা মাছ ধরে, কুমারের হাড়ি- কলসি তৈরি করে, কামারের জিনিসপত্র বানায় লোহা, তাঁতি তাঁত বুনে। আর গ্রামের মেয়েরা নিত্য ছন্দে ঢেঁকিতে ধান ভানে। এইভাবে গ্রামের জীবন ছন্দ প্রতিদিন বিচিত্র ভাঙ্গিয়ে বিকশিত হয়ে ওঠে।
গ্রামের অর্থনৈতিক জীবন:
গ্রামের অর্থনৈতিক জীবন সচ্ছল নয়। কিন্তু একটি আশ্চর্য আত্মতৃপ্তির ভাবলেই ঘিরে আছে গ্রামের অধিবাসীদের চোখে মুখে। আমাদের গ্রাম রচনা দৈন্য আছে, অভাব-অনটন আছে, আজকের রাতের জালা। কিন্তু তাই সব নয়। আর্থিক অসচ্ছলতায় মুখে মুখর হয়ে ওঠে কপারের প্রাণপ্রাচুর্য। তার বিনিময় কেন্দ্র হচ্ছে হাট। মহাজন’ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা গ্রামের পণ্যসম্ভার দূরে শহরে, গঞ্জে কিংবা রেলস্টেশন চালান দেয়। গ্রামের প্রচুর পরিমাণে জমিজমা নেই। যা আছে তা দিয়েই কিংবা বর্গাচাষ কয়দিন পরে।
গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন:
যুগ যুগ ধরে পূজা-পার্বণ উৎসব অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন বিকাশের উঠেছে। ঈদ, নানা পূজা-পার্বণ, আচার অনুষ্ঠান, নববর্ষ ইত্যাদি উৎসব তো লেগেই আছে । এইসব আচার-অনুষ্ঠানের গ্রামকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়। যখন গ্রাম কে অনুষ্ঠানগুলো সাজানো হয় তখন গ্রামকে আরো সুন্দর দেখায় এবং মনে হয় যে এটা মনে হয় গ্রামের অন্য আরেক রূপ।
গ্রামের অতীত ও বর্তমান:
আমাদের গ্রাম রচনা হরিতে- হরিণে, সবুজে- শ্যামলী, সুজলা সফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। যার মূল ভিত্তি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি। প্রায় 99 হাজার গ্রাম( বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী) নিয়ে গঠিত এই দেশের শতকরা 85 জন লোক গ্রামে বাস করে। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা গ্রুপ নিয়ে কোভিদ কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন
মাটির তলায় এর ছড়ানো রত
কিন্তু পল্লীর সে সুন্দর্য এখন আর দেখা যায় না, আমাদেরঅবহেলার কারণে পল্লীগ্রাম গুলো আজ শ্রী হীন হয়ে পড়েছে। মানুষ কেবল-
‘ ইটের পর ইট মাঝে মানুষ কীট
নেইকো ভালোবাসা নেইকো মায়া,
এমনকি কৃত্রিম সুখের অন্বেষণে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ কৃষিনির্ভর এই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, যদি গ্রামের উন্নয়ন না হয়। গ্রামের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি।
প্রাচীন- পল্লী:
’ চাষী ক্ষেতে চালাইছে হাল ,
তাঁতি বসে তাঁত বুনে, জেলে ফেলে জাল-
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার।
তারি পরে ভার দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।’’
——— রবীন্দ্রনাথ।
প্রাচীনপল্লীর এই ছিল রূপ। আদিকাল থেকেই পল্লীগ্রাম ছিল দেশের প্রাণকেন্দ্র। পল্লীবাসী মানুষের ছিল গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, গলায় গলায় গানের সুরঃ, কুটির শিল্পের, প্রচলন। ঢাকার মসলিন কাপড় ও জামদানি শাড়ির মোগল বাদশাহ দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, কুমিল্লার হুক্কা, খদ্দর কাপড়, ময়নামতির ছিট কাপড়, পল্লীর নকশী কাঁথা ঐতিহ্য বহন করেছিল।
বর্তমান পল্লী:
‘ বড় দুঃখ,বড় ব্যথা সম্মুখেতে কষ্টে সংসার,
বড়ই দরিদ্র, বড় শূন্য, বড় ক্ষুদ্র, বড় অন্ধকার।
অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, স্বাস্থ্য তাই, আনন্দ উচ্ছল, পরমায়ু।
কবি রবীন্দ্রনাথেরএই আবেদন বিনোদনের ধরা পড়ে যে পল্লীর অতীত ঐতিহ্য এখন আর নেই। পল্লীর আনন্দ উৎসব আনন্দ-উৎসব সুখ শান্তি সব হারিয়ে শ্রীহীন হয়েছে । গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, গান গলা ভরা, মাঠে প্রান্তে রাখালের বাঁশির সুর এখন আর শোনা যাচ্ছে না। দুঃখ দৈন্য, অভাব-অনটন, অশিক্ষা কুশিক্ষা অশিক্ষা-কুশিক্ষা জর্জরিত। এই শিল্পের প্রসার, অন্নসংস্থান, চতুর্দিকে শুধু ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের গ্রাম রচনা তাই কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে-
‘ সোনার বাংলা-
সোনার বাংলা- কবি কল্পনা তার-
দিকে দিকে শুধু খদ্দের হাহাকার।’
মনি করে গ্রামবাসী বিলীন হয়ে যাচ্ছে দুর্দশার প্রগাঢ় অন্ধকার এ।
‘ god made the country, man made the town’’
অথচ বিধাতার এই গ্রামকে দেখার মত আজ যেন কেউ নেই।
উপসংহার:
আমাদের গ্রাম রচনা ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় হলোগ্রাম। স্বাধীনতার পর তিনটি দশকে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক ও সার্বিক কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল উৎস হচ্ছে গ্রাম। গ্রাম ব্যতীত দেশের সর্বমুখী ও সর্বজনীন কল্যাণ সম্ভব নয়। গ্রামের অবস্থান ও উন্নয়ন এর উপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই গ্রামকে স্বয়ংসম্পূর্ণ আত্মনির্ভর করে তুলতে হবে।
তাই পরিশেষে বলা যায় যে আমাদের গ্রাম রচনা সম্পর্কে আপনারা যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তবে আপনারনিজের মতন করে আমাদের গ্রাম রচনা কে উপস্থাপনা করতে পারবেন। এবং সুন্দর সুন্দর পয়েন্ট গুলো আপনারা তুলে ধরতে পারবেন।