লিঙ্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

লিঙ্গ

আজকে আমরা জানবো লিঙ্গ কাকে বলে এবং লিঙ্গের প্রকারভেদ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

লিঙ্গ কাকে বলে?

যে সকল শব্দ দ্বারা পুরুষ জাতি, স্ত্রী জাতি, স্ত্রী-পুরুষ উভয় জাতি অথবা কোনো অচেতন পদার্থকে বুঝায়, তাদেরকে লিঙ্গ (Gender)বলে।

যেমনঃ মা, বাবা, ভাই,বোন, গরু, ছাগল, চেয়ার ইত্যাদি

লিঙ্গ কতো প্রকার ও কি কি?

প্রকারভেদ –

লিঙ্গ প্রধানত চার প্রকার। যথাঃ

(১) পুংলিঙ্গ

(২) স্ত্রীলিঙ্গ

(৩) উভয় লিঙ্গ ও

(৪) ক্লীব লিঙ্গ।

পুং লিঙ্গ  কাকে বলে?

যে সকল শব্দের দ্বারা পুরুষ জাতিকে বুঝানো হয়, তাদেরকে পুংলিঙ্গ বলে। যেমন- বাবা, কাকা,মামা, দাদা,নানা ইত্যাদি।

স্ত্রী লিঙ্গ  কাকে বলে?

যে সকল শব্দের দ্বারা স্ত্রী জাতিকে বুঝানো হয়, তাদেরকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন- মা, বোন, চাচী, খালা,মামী,দাদী,নানী ইত্যাদি।

উভয় লিঙ্গ  কাকে বলে?

যে সকল শব্দের দ্বারা স্ত্রী-পুরুষ উভয় জাতিকে বুঝানো হয়, তাদেরকে উভয় লিঙ্গ বলে। যেমন- শিশু, গরু, ছাগল, পাখি ইত্যাদি।

ক্লীব লিঙ্গ কাকে বলে?

যে সকল শব্দ দ্বারা স্ত্রী বা পুরুষ জাতি না বুঝিয়ে কোনো অচেতন পদার্থ বুঝায়, তাদেরকে ক্লীব লিঙ্গ বলে। যেমন- বই, চেয়ার, টেবিল,খাট ইত্যাদি।

লিঙ্গ পরিবর্তন করার নিয়ম

প্রধানত তিন ভাবে ‘পুংলিঙ্গ’ শব্দকে ‘স্ত্রীলিঙ্গ’ শব্দে রূপান্তরিত করা যায়। যথাঃ

(১) পুংলিঙ্গ শব্দের পরে আ, ঈ, ইকা, নী, ইনী, আনী, বতী, মতী ইত্যাদি স্ত্রী প্রত্যয় যোগ করে।

(২) পুরুষ বা স্ত্রীবাচক ভিন্ন শব্দ বসিয়ে।

(৩) স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দ আগে বসিয়ে।

১। (ক) পুংলিঙ্গের সঙ্গে “আ” প্রত্যয় যোগ করলেই স্ত্রীলিঙ্গ হয়। যেমনঃ-

পুংলিঙ্গ          স্ত্রীলিঙ্গ

সভ্য           সভ্যা

মহাশয়          মহাশয়া

প্রিয়           প্রিয়া

আর্য           আর্যা

জ্যেষ্ঠ         জ্যেষ্ঠা

বিপুল          বিপুলা

চতুর             চতুরা

দীন           দীনা

(খ) পুংলিঙ্গ এর সঙ্গে  “ঈ” প্রত্যয় যোগ করলেই স্ত্রী লিঙ্গ হয়।

যেমনঃ-

পুংলিঙ্গ      স্ত্রীলিঙ্গ

ব্রাম্মণ      ব্রাম্মণী

রজক     রজকী

সিংহ      সিংহী

গোপ     গোপী

গৌর     গৌরী

তরুন      তরুণী

নর      নারী

হংস      হংসী

(গ) অ, আ, এ, ই, ঈ-কারান্ত পুংলিঙ্গের সঙ্গে নি, আনি, ইনি, প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীলিঙ্গ করা যায়।

যেমনঃ-

পুংলিঙ্গ     স্ত্রী লিঙ্গ

শিব       শিবানী

রুদ্র       রুদ্রাণী

ভব       ভবানী

গোপ      গোপিনী

বন       বনানী

মাতুল       মাতুলানী

মালি       মালিনী

ক্ষত্রিয়       ক্ষত্রিয়ী

২। ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে লিঙ্গ পরিবর্তন –

পুংলিঙ্গ       স্ত্রীলিঙ্গ

কুলি          কামিন

ভাই        বোন/ ভাবী

দেবর     ননদ/ জা

বিপত্নীক      বিধবা

খানসামা      আয়া

পুত্র        কন্যা

৩। পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগে-  কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন-

কবি – মহিলা কবি,

ডাক্তার – মহিলা ডাক্তার,

সভ্য-  মহিলা সভ্য,

কর্মী – মহিলা কর্মী,

শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী,

সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য,

পুলিশ-  মহিলা পুলিশ

৪। শব্দের শেষে পৃথক শব্দ যোগ করে :

শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচকশব্দ তৈরি করা যায়। যেমন-

বোন-পো-বোন-ঝি,

ঠাকুর-পো-ঠাকুর ঝি,

ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা ঠাকুরমা,

গয়লা গয়লা-বউ,

জেলে জেলে-বউ

বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ-

১. যেসব পুরুষবাচক শব্দের শেষে তা রয়েছে স্ত্রীবাচক বোঝাতে সেসব শব্দে ত্রী হয়। যেমন –

পুং – স্ত্রী

নেতা – নেত্রী

কর্তা – কর্ত্রী

শ্রোতা – শ্রোত্রী

২. পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত্, বান্, মান্, ঈয়ান থাকলে অতী, মতি, ঈয়সী হয়। যেমন –

পুং- স্ত্রী

সৎ – সতী

মহৎ – মহতী

গুণবান – গুণবতী

বুদ্ধিমান – বুদ্ধিমতী

গরীয়ান – গরিয়সী

৩. কোন কোন পুরুষবাচক শব্দ থেকে বিশেষ নিয়মে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন –

পুং   –   স্ত্রী

সম্রাট – সম্রাজ্ঞী

নর – নারী

দেবর – জা

শিক্ষক – শিক্ষয়িত্রী

সভাপতি – সভানেত্রী

বন্ধু – বান্ধবী

পরীক্ষায় আসার উপযোগী কিছু লিঙ্গ পরিবর্তন –

বাদশাহ শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:বেগম

শিক্ষক শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:শিক্ষিকা

সভ্য শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:মহিলা সভ্য

সভাপতি শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:সভানেত্রী

বিহঙ্গ শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:বিহঙ্গী

বৈরাগী শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:বৈরাগিনী

মহারাজ শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:মহারাণী

ধোপা শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:ধোপানী

চালক শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:চালিকা

পন্ডিত শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:পন্ডিতিনী

মোগল শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:মোগলিনী

ঘোটক শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:ঘোটকী

নাপিত শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:নাপিতানী

ইন্দ্র শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:ইন্দ্রানী

দাতা শব্দটির স্ত্রী-বাচক শব্দ:দাত্রী

এক কথায় উত্তর-

১। পুরুষ বা স্ত্রী নির্দেশক সূত্রকে ব্যাকরণে কী বলে?

উত্তর : লিঙ্গ।

২। লিঙ্গ কয় প্রকার?

উত্তর : তিন প্রকার।

৩। নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ কাকে বলে?

উত্তর : যে শব্দের কোনো পুংলিঙ্গ শব্দ নেই।

৪। স্ত্রী ও পুরুষ কিছুই বোঝায় না যে শব্দে তাকে কোন লিঙ্গ বলে?

উত্তর : ক্লীবলিঙ্গ।

৫। বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দের উদাহরণ –

উত্তর: নেত্রী

৬।  নিত্য পুংলিঙ্গ শব্দের উদাহরণ –

উত্তর-  ঢাকী

৭। ‘কুলি’ শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ কি?

উত্তর- কামিন

৮। ‘মানুষ’-এর লিঙ্গ কোনটি?

উত্তর- উভলিঙ্গ

আশা করি লিঙ্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছি।

Similar Posts