এলার্জি কি? এলার্জি কেন হয় ও কিভাবে দূর করা যায়?
আজকে আমরা আলোচনা করবো এলার্জি কি ? এলার্জি কেন হয় ও কিভাবে দূর করা যায়।
আজকালকার যুগে আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি এলার্জি জনিত সমস্যায় ভুগি। আমরা কেও কেও হয়তো এলার্জির উপসর্গ দেখে বুঝতে পারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এই সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা রাখি না বা বুঝতেই পারি না যে আমরা এলার্জি জনিত সমস্যায় ভুগছি। তাই এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা থাকা জরুরি৷
আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটিতে এলার্জি কি? এই আলোচনা দ্বারা আশা করছি আপনারা সকলে উপকৃত হবে। তো চলুন শুরু করা যাক।
এলার্জি কি ?
গ্রিক শব্দ “Allos” এবং “Ergos” এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয় এলার্জি। যার অর্থ হলো- পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া।
আমাদের শরীর সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে যেমন- পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, এবং ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
আবার কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় অ্যালার্জি ।
কারো কারো ক্ষেত্রে এ সমস্যা খুবই সামান্য একটি সমস্যা আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।
এলার্জি কেন হয়?
এলার্জি বিভিন্ন কারনে হতে পারে। তাছাড়াও শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা জনিত সমস্যার ও প্রধান কারন এই এলার্জ। এলার্জি হতে পারে এমন কিছু কারণ নিম্নরূপ-
১। ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্রে পড়ে থাকা ধুলাবালি হাঁপানি জনিত এলার্জির অন্যতম প্রধান কারণ। ঘরে যে ধুলোবালি থাকে তাতে ‘মাইটি’ নামক এক ধরনের জীবাণু রয়েছে যা কিনা প্রায় ৬০ শতাংশ এলার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই আমরা যারা হাঁপানিজনিত সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধুলা বালি থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেষ্টা করবেন।
অর্থাৎ ঘরে ব্যবহৃত কম্বল, পর্দা, তোষক, বাড়ির আসবাবপত্র ইত্যাদিতে ধুলা জমে থাকলে তা পরিষ্কার করার সময়েও যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে যাতে ধুলাবালির ছিটেফুটাও আপনার ধারে কাছে না আসে।
২। দূষিত বাতাস, ফুলের পরাগরেনু, ধুঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, পুরাতন ফাইলের ধুলোবালি ইত্যাদি দেহে এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। হাঁপানির সাথে এলার্জির সম্পর্ক রয়েছে তাই যাদের হাঁপানি আছে তাদের এসব পরিত্যাগ করে চলা বাধ্যতামূলক।
৩। আবার ছত্রাকও আমাদের দেহে এলার্জি বা হাঁপানির সৃষ্টি করতে পারে।
৪। মাথা ব্যথা, জ্বর, ফোঁড়া, পাঁচড়া ইত্যাদির কারণে আমরা পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহন করে থাকি। আর এ পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন থেকেও শরীরে এলার্জিজনিত চুলকানি দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া অতিরিক্ত পেনিসিলিন ব্যবহারের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের কোনো ঔষধ খাওয়া যাবে না।
৫। বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমেও এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- চিংড়ি, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, হাঁসের ডিম, বেগুন, ইলিশ, পুঁই শাক, কচু ইত্যাদি। সাধারণত প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে এই সমস্যা বেশি হয়। তাই এই খাবার থেকে রোগীকে দূরে থাকতে বলা হয়। তবেই ভালো থাকা সম্ভব হয়। নইলে সমস্যা বাড়ে।
এলার্জির বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে “ভিটামিন ই” খুবই উপকারী। তাই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উত্তম। তাছাড়া গাজর ও শসার রসেও এলার্জি প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। এবং যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের অ্যালকোহল, চা-কফি পান না করা উত্তম।
এলার্জির লক্ষন কি?
বিভিন্ন ধরনের লক্ষন দেখা যেতে পারে। তবে কিছু সাধারন লক্ষন নিম্নরূপ-
১। চোখ চুলকানো, লাল হয়ে যাওয়া, পানি পড়া।
২। হাঁচি, ভরাট নাক,
৩। গলা শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
৪। কাশি, গর্জন।
৫। পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া।
৬। আমবাত।
৭। রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা বা চেতনা হারানো ইত্যাদি ।
এলার্জিজনিত রোগগুলোগুলো কি কি?
এলার্জির কারণে আমরা প্রায়শই বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারি। যেমন-
১। খাবারে এলার্জি
২। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত এলার্জি
৩। এলার্জিজনিত সর্দি বা এলার্জিক রাইনাইটিস
৪। আর্টিকেরিয়া
৫। অ্যাজমা বা হাঁপানি
৬। এলার্জিক কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস
৭। একজিমা ইত্যাদি।
১। খাবারে এলার্জি কি :
বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগী খাবার থেকে আগত অ্যালার্জি জনিত সমস্যায় ভোগে। খাবারে অ্যালার্জি থেকে অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। এমনকী প্রাণ সংশয়ও হতে পারে।
কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আমরা এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি। যেমন – ডিম, মাছ,মাংস, বাদাম, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, চকলেট, ঠান্ডা পানীয় ইত্যাদি খাবার খেলে কোন কোন ব্যাক্তির এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। খাবারে এলার্জির কারণে যেসকল লক্ষন দেখা যায় –
পেট ব্যথা, পেটে মোচড় দেওয়া
বমি বমি ভাব বা বমি
ডায়রিয়া ইত্যাদি।
২। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত এলার্জি কি :
এ এলার্জি খুবই মারাত্মক হতে পারে। এটি হতে পারে কোনো ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে বা অন্য কোনো কারণে। এর লক্ষন গুলো হলো –
১। মুখ, ঠোঁট, গলা, জিহ্বা ফুলে যাওয়া
২। নিশ্বাস এ কষ্ট হওয়া
৩। বমি হওয়া, পেটে সংকুচিত হওয়া ইত্যাদি।
৩। এলার্জিজনিত সর্দি বা এলার্জিক রাইনাইটিস
এটি দুই ধরণের হতে পারে। যথা–
১। সিজনাল ও
২। পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস
এই এলার্জির লক্ষন গুলো হলো-
১। বার বার হাঁচি আসতে থাকা, নাক চুলকানো
২। নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
৩। চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
৪। আর্টিকেরিয়া এলার্জি কি
বেশিরভাগ মানুষই কোন না কোন সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি শরীরের নির্দিষ্ট অংশে হতে পারে আবার সারা শরীরেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এর লক্ষণ গুলো হলো –
ত্বকের নানান জায়গায় চাকা চাকা হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে।
চুলকানি হতে পারে।
৫। অ্যাজমা বা হাঁপানি জনিত এলার্জি কি
অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রধান কারন হলো এলার্জি। এর কারনে নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
হাঁপানির লক্ষন গুলো হলো-
কাশি
শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়
ঘন ঘন নিশ্বাসের সাথে বাঁশির মতো শব্দ হয়
বুকে চাপ অনুভব করা
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঠান্ডা লাগে এবং নিশ্বাসের সময় সোঁ সোঁ আওয়াজ হওয়া।
৬। এলার্জিক কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস এলার্জি কি
শরীরের যেকোনো জায়গায় যদি শুকনো, খসখসে ও ছোট ছোট দানা যদি যেকোনো অ্যালার্জেনের স্পর্শে ত্বকে ব্যাথা সৃষ্টি করে তবে তাকে স্পর্শ জনিত এলার্জিক ত্বকে প্রদাহ বা এলার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস বলা হয়।
৭। একজিমা এলার্জি কি
একজিমা একধরনের বংশগত চর্মরোগ। এটি বাচ্চাদের মুখে, ঘাড়ে, হাতে এবং পায়ের দিকেই বেশি হয়।এর লক্ষন গুলো হলো –
ত্বক শুষ্ক হয়, চুলকানি এবং লালচে হয়ে যাওয়া।
এর ফলে ত্বক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়
ত্বক থেকে কখনও কখনও চুয়ে চুয়ে পানি পড়তে পারে।
এলার্জি টেষ্ট:
শরীরে এলার্জি আছে কি না বা যদি থেকেও থাকে তবে তা কোন ধরনের এলার্জি তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে। সেগুলো হলো –
রক্ত পরীক্ষা
সিরাম আইজিইর(IgE) মাত্রা
স্কিন প্রিক টেস্ট
বুকের এক্স-রে
স্পাইরোমেট্রি
এলার্জি চিরতরে দূর করার উপায়
এলার্জির যে কি যন্ত্রনা তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝেন। এলার্জিকে চিরতরে দূর করার জন্য আমরা অনেকে অনেক রকম চেষ্টা করে থাকি। ভালো ভালো খাবার সামনে রেখেও খেতে পারেন না শুধুমাত্র এই এলার্জির ভয়ে। তবে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি উপায় আছে যা মেনে চললে সারাজীবনের জন্য সহজেই এলার্জি দূর করতে পারবেন। উপায়টি হলো-
প্রথমে এক কেজি নিমপাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে । এক্ষেত্রে নিম পাতা গুলো একদম সতেজ হলে ভালো।
শুকনো পাতা পাটায় পিষে বা গ্রাইন্ডারে গুঁড়ো করে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কৌটায় ভরে তা সংরক্ষন করুন।
1 চা চামচের 3 ভাগের 1 ভাগ নিম পাতার গুঁড়া এক গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টার মতো ভিজিয়ে রাখুন।
আধাঘন্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিতে হবে।
এই পানীয় টি প্রতিদিন-
– সকালে খালি পেটে,
– দুপুরে ভরা পেটে এবং
– রাতে শোয়ার আগে
খেয়ে ফেলতে হবে।
এভাবে এক টানা 21 দিন খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।এর কার্যকারিতা শুরু হতে এক মাস লেগে যেতে পারে। আর এ উপায় মেনে চললে চিরতরে এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন আশা করা যায়।
আজকে এলার্জি কি ? এলার্জি কেন হয় ও কিভাবে দূর করা যায়।এই পর্যন্তই রইলো। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।