পড়াশোনা

শিখন কাকে বলে? শিখনের বৈশিষ্ট্য | শিখনের শর্ত

1 min read

শিখন কাকে বলে?

প্রতিটি প্রাণী কিছু সহজাত আচরণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনশীল ও জটিলতর পরিবেশে সামঞ্জস্য বিধান করে চলার জন্যে যথেষ্ট নয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বৈচিত্র্যময় পরিবেশে সাফল্যের সাথে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন কৌশল রপ্ত করে নিতে হয়।

জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রাণীর অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবং অনুশীলন পদ্ধতির মাধ্যমে উপযোগী কৌশল আয়ত্ত করাকে শিখন বলে।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী শিখনের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।
সি.টি মর্গান ও আর.এ.কিং বলেছেন, “অতীত অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তনকে শিখন বলে।”
ওয়ার্টসন ও বার্নার্ড এর মতে, “শিখন হলো আচরণের পরিবর্তন।”
ম্যাকগোয়েক এর মতে, “শিখন হলো অভ্যাসের ফলে ক্রিয়ার পরিবর্তন।”
শিখনের ফলে প্রাণী নতুন পরিবেশে নতুন আচরণ সম্পন্ন করার দক্ষতা অর্জন করে। কোনো না কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য প্রাণীরা শেখে, অর্থাৎ সব রকমের শিখনই উদ্দেশ্যমূলক। প্রাণীর মধ্যে কোনো নতুনতর চাহিদা সৃষ্টি হলে সেই অনাকাঙ্খিত বস্তু পাওয়ার জন্য প্রাণীরা সচেষ্ট হয় এবং চেষ্টা বা অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে শিখন সম্পন্ন হয়।

শিখনের বৈশিষ্ট্য

১) আচরণের পরিবর্তনঃ পুরাতন আচরণের পরিবর্তন এবং নতুন আচরণ সম্পাদনই শিখন।

২) নতুন অভিজ্ঞতাঃ নতুন আচরণ সম্পাদনের মাঝেই ব্যক্তি বিশেষ নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

৩) আচরণের স্থায়ীত্বঃ নতুন আচরণের স্থায়ীত্ব না থাকলে তাকে শিখন বলা যাবে না। আজকে শিখে আগামীকাল ভুলে গেলে তাকে শিখন বলা যাবে না।

৪) আচরণের উৎকর্ষতাঃ শিখনের ফলে আচরণের শুধ পরিবর্তন নয় উন্নত আচরণ আশঅ করা যায়।

৫) অনুশীলন/অভ্যাসঃ পুরাতন আচরণের পরিবর্তে নতুন আচরণ আয়ত্ত করতে বার বার চেষ্টা ও অনুশীলন অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়া শিখন হয় না। নতুন অংক শিখতে বা টাইপ করতে বার বার অনুশীলন করতে হয়।

৬) পরিণমনঃ শিখনের একটি অপরিহার্য শর্ত। দৈহিক এবং মানসিকভাবে পরিপক্ক না হলে ব্যক্তি বিশেষকে বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখানো যায় না। লেখা শিখতে গেলে হাতের আঙ্গুলগুলোর সে ধরনের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

৭) প্রেষণাঃ শেখার জন্য চাহিদা বা আগ্রহ না থাকলে কাউকে শেখানো যায় না।

৮) সমস্যাঃ সমস্যা থাকলেই প্রাণী তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে। এভাবেই সে নতুন আচরণ বা শিখন আয়ত্ত করে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে, শিখন প্রক্রিয়ার রয়েছে তিনটি স্তর সমস্যা প্রত্যক্ষণ, উপযোগী আচরণের উদ্ভাবন ও সেই আচরণ আত্মীকরণ।

৯) বর্ধন ক্রিয়াঃ সকল শিখনেই প্রয়োজন বলবর্ধনকারী বস্তুর। প্রচেষ্টার পর প্রাণী তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলে শিখন সংঘটিত হবে না। প্রেষণার উপযুক্ত বর্ধনক্রিয়া শিখনের একটি অপরিহার্য উপাদান।

১০) সংযোগ বা অনুসঙ্গঃ শিখনের একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো সংযোগ। সংযোগ অর্থ দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক যোগাযোগ তৈরি হওয়া। এই সংযোগ প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে।

শিখনের শর্ত

শিখনের প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে অনুশীলন, দৈহিক ও মানসিক পরিণমন বা পরিপক্কতা, প্রেষণা এবং বলবৃদ্ধি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অনুশীলনের মাধ্যমে শিখন অপেক্ষাকৃত স্থায়ী ও ফলপ্রসূ হয়।

দৈহিক ও মানসিক পরিণমন শিখনের অপরিহার্য শর্ত। বিশেষ বিশেষ শিখনের জন্য নির্দিষ্ট দৈহিক ও মানসিক পরিণমন রয়েছে। তা হবার আগে শিক্ষক যতই চেষ্টা করুন না কেন শিখন সম্ভব নয়।

প্রেষণা হলো শিখনের একটি অতি প্রয়োজনীয় শর্ত। প্রাণী এ আচরণটি করতে শিখে,যা দিয়ে সে তৃপ্তি পায়। প্রেষণা হলো তৃপ্তির পূর্বশর্ত।

প্রেষণা না থাকলে তৃপ্তি লাভের প্রশ্নই আসে না। এছাড়া পর্যবেক্ষণ, মনোযোগ, আগ্রহ ও অনুরাগ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও ফল লাভের জ্ঞান শিখনের জন্য অপরিহার্য বিষয়।

  • শিক্ষার্থী যদি শিখনের প্রয়োজনীয়তা এবং স্থায়ী শিখনের পদ্ধতি ও কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারে তবে পরবর্তী জীবনে তার উপযোগিতা দিয়ে এর যথার্থতা প্রমাণ করতে পারবে বিশেষ করে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে। **
  • ব্যক্তির শিখনের কিছু কৌশল রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা শিখে থাকি। যেমনঃ

ক) তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে

খ) কোন কিছুর সাহায্যে

গ) অনুকরণের মাধ্যমে এবং

ঘ) মডেলিং বা নমুনার মাধ্যমে।

উপরোক্ত বিষয়সমূহ শিক্ষণের সময় শিক্ষকের মাথায় না থাকলে শিক্ষার্থীদের শিখনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

 

  •  শিখন তখনই কার্যকর হবে যখন শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তু অর্থ বুঝে পাঠ গ্রহণ করবে। অর্থাৎ শিখন তখনই অর্থপূর্ণ হবে যখন শিক্ষার্থীরা পাঠের হিতকর বা উপকারী দিক দেখতে পাবে।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x