শেখ হাসিনা অনুগত আদালত ব্যবহার করে মামলায় ঘায়েল রাখতে চায় বিরোধী দলকে

Mithu Khan
5 Min Read

শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে মামলাকে অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়েরের পাশাপাশি পুরাতন মামলা সচল করা হচ্ছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের মামলা গুলোতে চার্জশীট দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। চার্জশীট দিলেই মামলা শুনানী করার তালিকায় চলে আসছে।

ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় ঘোষণা করে আটক রাখা হয়েছে। এখন আবার এই রায়কে আওয়ামী আপিল বিভাগ থেকে চুড়ান্তরুপ দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত একটি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে লিভ টা আপিল আবেদন করেছিলেন। আওয়ামী দুর্নীতি প্রটেকশন কমিশন খ্যাত দুদক ইতোমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার আপিলটি শুনানীর জন্য আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী দুদক এই উদ্যোগ নিয়েছে। যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনা এখন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড আপিল বিভাগেও চূড়ান্ত করতে চায়।

এই মামলায় জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দ্রুত শুনানী করে বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড দ্বিগুণ করে দিয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ থেকে।

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের নামে নানা কিসিমের মামলা দেয়া হয়েছে গত ১৩ বছরে। এর আগে জরুরী আইনের সরকার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনেক গুলো বানোয়াট গায়েবী মামলা দিয়েছিল। যে মামলা গুলোর অনেক অভিযোগ গায়েবী বলা চলে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে নিজের মামলা গুলো অনুগত আদালতের মাধ্যমে খারিজ করে নিয়েছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জরুরী আইনের কোন মামলাই খারিজ হচ্ছে না। বরং বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেকের মামলা শুনানী করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, যে মামলায় হাইকোর্ট বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছে সেই মামলাটি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া আপিলটি দায়ের করেছেন। এই আপিল শুনানীর উদ্যোগ নিবে দুদক।

উল্লেখ্য, আপিল বিভাগে যারা আছেন তাদের সকলেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি একজন আওয়ামী লীগার হিসাবে পরিচিত। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তাঁর নিজ এলাকায় কুষ্টিয়া জেলা বার এসোসিয়েশনে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আনুগত্যের কথা প্রকাশ্যেই বর্ণনা করেছিলেন।

আপিল বিভাগের তালিকায় দ্বিতীয় হলেন মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে তত্ত্ববধায়ক সরকার নিয়ে সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনীর বৈধতার বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানী গ্রহণে তিনিও ছিলেন একজন বিচারক হিসাবে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এতে সরকারের বিরাগভাজন হন তিনি। এতে আপিল বিভাগে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট কোন মামলায় তাঁকে বিচারকের আসনে রাখা হয় ন। যেমন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনেক মামলায় তাকে বিচারক হিসাবে রাখা হয়নি। তাঁকে সুপারসিড করেই প্রধান বিচারপতি করা হয়েছে সৈয়দ মাহমুদ হাসান এবং পরবর্তীতে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে। যদিও ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার তাঁকে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দিয়েছিল। আপিল বিভাগেও নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন আর তাঁকে বিশ্বাস করেন না শেখ হাসিনা।

আপিল বিভাগে তালিকার ৩ নম্বরে রয়েছেন নুরুজ্জামান। তিনিও বিচারক হওয়ার আগে সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেয়। বর্তমানে তিনি আপিল বিভাগে আছেন।

তালিকার চতুর্থ নম্বরে রয়েছেন ওবায়দুল হাসান শাহিন। তিনি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাঁর ছোট ভাই দীর্ঘ দিন প্রধান মন্ত্রীর  (শেখ হাসিনা) একান্ত সচিব ছিলেন। তিনি নিজে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

তালিকার পঞ্চম নম্বরে আছেন বোরহান উদ্দিন। তিনি সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

তালিকার ষষ্ঠ নম্বরে রয়েছেন ইনায়েতুর রহিম। তিনি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এবং নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর ছোট ভাই ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী লীগের মনোনীত জাতীয় সংসদের হুইপ। ইনায়েতুর রহিম নিজে বাকশাল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী ফোরাম থেকে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনে সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইনায়েতুর রহিমকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।

সপ্তম নম্বরে আছেন কৃষ্ণা দেব নাথ। নামের সাথেই তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জড়িত। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনার শতভাগ অনুগত বিচার বিভাগকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার চেষ্টা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মীকে বানোয়াট মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সব মামলা আবার সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্রঃ আমার দেশ uk

Share This Article
Leave a comment