সবুজ বিপ্লব কাকে বলে?
সবুজ বিপ্লব কাকে বলে?
ভারতবর্ষে স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা যেত। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভারতে পুরনো পদ্ধতিতে কৃষিকাজ। তাই ফসলের উৎপাদন ছিল খুব কম যা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম ছিল না। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভারত সরকারকে একটা বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো অর্থাৎ খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীল ছিল।
তাই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা, যা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, এটি ভারতের ইতিহাসে সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত।
সবুজ বিপ্লব (Green Revolution) বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার এবং সেচের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে গম, ধান, ভুট্টা প্রভৃতির উৎপাদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতি দ্রুত যে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে ‘সবুজ বিপব’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে বিপ্লব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুত পরিবর্তন অর্থে। এ পরিবর্তন এসেছে প্রচলিত (Conventional) পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে অধিক উৎপাদনক্ষম নতুন প্রযুক্তির চাষাবাদে রূপান্তরের মাধ্যমে। এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে নিরবে-নিভৃতে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্যে।
সবুজ বিপ্লবের জনক কাকে বলে?
মার্কিন কৃষিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী নরম্যান আর্নেস্ট বোরলগকে বলা হয় সবুজ বিপ্লবের জনক।
মার্কিন কৃষিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী নরম্যান আর্নেস্ট বোরলগ |
সবুজ বিপ্লব কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
সবুজ বিপ্লব প্রথম কোথায় হয়েছিল?
সবুজ বিপ্লবের সুফলসমূহ
সবুজ বিপ্লবের সুফল প্রধানত দুটি, কিন্তু এর গুরুত্ব অপরিসীম।
১) সবুজ বিপ্লবের প্রধান এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুফল হল ভারতের খাদ্য সংকট-এর অবসান হওয়া। স্বাধীনতার পর ভারত যখন চরম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন দেশে লোকসংখ্যা ছিল হয়ত ৪০ কোটি বা তার কাছাকাছি। বর্তমানে লোকসংখ্যা প্রায় তিনগুণ, কিন্তু দেশে এখনও খাদ্য সংকট বলতে যা বোঝায়, তা নেই।
২) সবুজ বিপ্লবের ফলে আমরা ধানের যে নতুন জাত পেলাম, তা হল সময়বদ্ধ শ্রেণীর। বীজ ফেলা থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তে ধান কাটা যায়। এই জাতের ধানের তিনটি শ্রেণী আছে –
- স্বল্পমেয়াদী – বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১০০-১২০ দিন।
- মধ্যমেয়াদী – বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১২০-১৩০ দিন।
- দীর্ঘমেয়াদি – বীজ ফেলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সময় লাগে ১৩০-১৬০ দিন।
রবিখন্দের জন্যে কখন জমি খালি করতে হবে, সেই সময়টি মাথায় রেখে তিনটি শ্রেণী থেকে যে কোন জাত বেছে নিয়ে তার সময়কাল হিসাব করে পিছিয়ে এসে বীজতলাতে বীজ ফেললে নির্দিষ্ট সময়েই জমি ফাঁকা হবে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণে রাখতে হবে – রবিখন্দে অধিকাংশ ফসলের বীজ বপনের আদর্শ সময় হল কার্ত্তিক মাস। বপনে বিলম্ব হলে প্রত্যাশা মত ফলন পাওয়া যাবে না।
বর্তমানের জনপ্রিয় দীর্ঘমেয়াদী জাতের পরিবর্তনের কথাও ভাবতে হবে। একেবারে নয়, বিকল্প জাত দেখে বুঝে নিয়ে তারপর পর্যায়ক্রমে পুরানো জাতকে ছাড়তে হবে। তাতে বিঘা প্রতি দু মণ ধান কম হলেও ক্ষতি নেই। দীর্ঘমেয়াদী শ্রেণীর ধান কেটে চটজলদি জমি তৈরি করতে সমস্যা হয়। সময় মতো রবিশস্যের বীজ বপন হয় না, ফলন মার খায়। কাজেই, মধ্যমেয়াদী শ্রেণী থেকে জাত বেছে নিতে হবে।
আগে যে ধরণের ধানের জাত ছিল, তা হলের ‘ঋতুবন্ধ’ শ্রেণীর। অর্থাৎ বীজ যখনই বপন করা হোক না কেন, এই ধানে কার্ত্তিক মাসের মাঝামাঝি শীষ বের হত এবং অঘ্রাণ মাসের মাঝামাঝি পাকত। ধান কাটতে কাটতে পৌষ মাস এসে যেত। তখন রবিশস্য করার মত কোনও সময় থাকত না। এর পাশে এখন নানা রকমের রবিশস্যের চাষ করা যাচ্ছে। প্রকৃত প্রস্তাবে এখন এসেছে প্রকৃত শস্য বৈচিত্র্য। জমিতে এখন এক বা দুই ফসলের পরিবর্তে বহুফসলি চাষ ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।