ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস

ঘূর্ণিঝড়ের ইংরেজি প্রতিশ্বদ Cyclone। এটি গ্রিক শব্দ Kyklos থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যার অর্থ কুণ্ডলি পাকানো সাপ। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস কুণ্ডলি পাকানো সাপের আকার ধারণ করে বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। বিজ্ঞানী হেনরি পিডিংটন ১৮৪৮ সালে প্রথম এ শব্দটি ব্যবহার করেন। সাধারণত এপ্রিল – মে এবং অক্টোবর – ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির একটি আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির একটি আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সমূহের মধ্যে কোনো কোনোটি মারাত্মক ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্র পৃষ্ঠে সাধারণত ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ এবং চারপাশে উচ্চচাপ বিরাজ করে। এসময় উচ্চচাপযুক্ত বায়ু প্রবলবেগে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগে যেখানে নিম্নচাপ থাকে সেদিকে ধাবিত হয়। এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়। এটি উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠে উৎপত্তি লাভ করে মহাদেশীয় মূলভাগের দিকে অগ্রসর হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলে। এটি দেখতে অনেকটা মানুষের চোখের মতো। বিগত অর্ধশতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানে। এর মধ্যে ১৯৭০, ১৯৮৮, ১৯৯১, ২০০৭, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় অন্যতম। জীবনহানির দিকে থেকে সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ১৯৭০ এব্ং ১৯৯১ সালে সংঘটিত হয়। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক, ১৯৯১ সালে ১.৪০ লক্ষ, ২০০৭ সালে ১০ হাজার এবং ২০০৯ সালে ৭ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় জেলাসমূহ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা প্রভৃতি।

ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত জলোচ্ছ্বাস। ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তির পর যখন প্রবলবেগে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয় তখন সমুদ্রের জলরাশি ফুলে ওঠে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূ-খণ্ডে আঘাত হানে। এরূপ উঁচু জলরাশিকে জলোচ্ছ্বাস বলে। এসময় জলরাশির উচ্চতা ১৫-৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় যদি অমাবস্যা বা পূর্ণিমা থাকে তাহলে পানি আরো বেশি ফুলে ওঠে এবং ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ভোলায় প্রায় ৪০ ফুট, ২০০৭ সালে পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চলে প্রায় ২০ – ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও ভূমিকম্পের ফলেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মানুষসহ জীবজন্তু ও সহায় সম্পদ পানিতে ভেসে চলে যায় এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল সমুদ্রের সাথে মিশে যায়। যেমন – ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে পরবর্তীতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বহুমুখী পদক্ষেপ ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে যথাক্রমে সিডর ও আইলায় জীবনহানির পরিমাণ সহনীয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Similar Posts