নদীভাঙন, নদীভাঙনের কারণ, নদীভাঙনের প্রভাব
নদীভাঙন, নদীভাঙনের কারণ, নদীভাঙনের প্রভাব
নদী ভাঙন (Riverbank Erosion) : সাধারণভাবে নদীর পানি প্রবাহের ফলে নদীর তীর বা পাড়ের ভাঙনকে নদীভাঙন বলে। বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত দৃশ্য নদীভাঙন। এ সময় নদীতে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে নদীভাঙন দেখা দেয়। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অসংখ্য শাখানদী ও উপনদী দ্বারা দেশের প্রায় ১০০টি উপজেলা কমবেশি ভাঙনের শিকার হয়। নদীভাঙনপ্রবণ জেলাসমূহের মধ্যে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, মাদারীপুর, নারায়নগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, শেরপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, বরিশাল, গোপালগঞ্জ এবং উপকূলীয় অঞ্চল অন্যতম।
নদীভাঙনের কারণঃ নদীভাঙন সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও দায়ী।
নদীভাঙনের প্রাকৃতিক কারণসমূহ হলো –
- বর্ষা মৌসুমে অত্যধিক বৃষ্টিপাত।
- নদীর গতিপথ অধিক আঁকাবাঁকা হওয়া।
- পলি জমা হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া।
- বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া।
- নদীগর্ভে নরম ও ক্ষয়িষ্ণু শিলার উপস্থিতি।
- নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি।
- পার্বত্য এলাকায় বরফ গলনের মাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
নদীভাঙনের মানবসৃষ্ট কারণসমূহ হলো –
- নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন করা।
- নদী তীরের গাছপালা নিধন করা।
- নদী তীর এবং তলদেশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন।
- নদী তীর দখল করে নদীর গতিপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা।
- নিয়মিত নদী খনন না করা।
- নদীতে বা নদী তীরে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করা।
- অপরিকল্পিত ও অধিক পরিমাণে নৌযান চালানো ইত্যাদি।
নদীভাঙনের প্রভাবঃ নদীভাঙনের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অসংখ্য লোক ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা এবং ভূমিহীন হয়ে পড়ে। নদীভাঙনের অন্যান্য প্রভাবসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উদ্বাস্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্রতা বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন হ্রাস, কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস, পুষ্টিহীনতা, শহরে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি, রোগ-ব্যধির বিস্তার ইত্যাদি।