Modal Ad Example
মনোবিজ্ঞান

স্মৃতি কাকে বলে? স্মৃতির উপাদান, ধৃতি, পুনরুদ্রেক, প্রত্যভিজ্ঞা, স্থান – কাল নির্দেশ

1 min read

স্মৃতি কাকে বলে? (What is memory?)


অতীত প্রত্যক্ষ (perception) বা অভিজ্ঞতার প্রতিরূপগুলো (images) অবিকলভাবে পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতাকে স্মৃতি বলে। এবং এই পুনরুৎপাদন করবার ক্রিয়াকে বলা হয় স্মরণ (remembering)।

স্মৃতির উপাদান


স্মৃতি কতকগুলো অঙ্গ বা অংশ নিয়ে গঠিত। স্মৃতির অঙ্গ প্রধানত চারটি, যথাঃ ধৃতি, পুনরুৎপাদন, প্রত্যভিজ্ঞা এবং স্থান-কাল নির্দেশ।

ধৃতি

সংবেদন, প্রত্যক্ষ, শিখন প্রভৃতি মনের সংগ্রাহক বৃত্তি। এদের সহায়তায় মন নতুন নতুন জ্ঞান আহরণ করে। এই আহৃত জ্ঞান অর্জিত হবার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলে জ্ঞানের বিকাশ বা বৃদ্ধি সম্ভব হত না। এটি মনে সংরক্ষিত থাকে বলেই, এর ভিত্তিতে উচ্চতর জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়। অবশ্য আহৃত জ্ঞানের সবটাই সব সময় সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে সংরক্ষিত থাকে না। ধৃতি মনের এই সংরক্ষণমূলক শক্তি। চেতনাকে স্পর্শ করে, তাই প্রতিরূপের আকারে মনে সংরক্ষিত থাকে।

পুনরুদ্রেক

কিন্তু প্রতিরূপ মনে সংরক্ষিত থাকলেই এদের স্মরণ হয় না। নানা অভিজ্ঞতার ফলে নানা প্রতিরূপই তো মনে হয়েছে। যে বিষয়টি স্মরণ করতে হবে, তার প্রতিরূপগুলোকে এদের অব্যক্ত অবস্থা থেকে ব্যক্ত করা দরকার। মনে সংরক্ষিত অব্যক্ত প্রতিরূপ ব্যক্ত করাকে বলে পুনরুদ্রেক।

পুনরুদ্রেক সম্ভব হয় কোনো উদ্দীপক সূত্র বা অভিভাবের সাহায্যে। উদ্দীপক প্রতিরূপগুলোকে অতীত অভিজ্ঞতার ক্রম, সম্বন্ধ, বিন্যাস প্রভৃতি অনুযায়ী পুনরুপস্থাপিত করে। প্রতিরূপগুলোর মধ্যে যে সম্ভন্ধের ফলে উদ্দীপক এদের পুনরুস্থাপিত করতে পারে একে বলা হয় অনুষঙ্গ।

প্রত্যভিজ্ঞা

শুধু পূর্ব-অভিজ্ঞতালব্ধ প্রতিরূপের ধারণ এবং পুনরুৎপাদন স্মরণের পক্ষে যথেষ্ট নয়। যে বিষয়টি পূর্ব অভিজ্ঞতার জ্ঞান হয়েছিল, পুনরুৎপন্ন প্রতিরূপ বলে চিহ্নিত করা বা পুনরায় জানা চাই। যে বিষয়টি পূর্বে জ্ঞানা হয়েছিল, তাই যে পুনর্বার জ্ঞাত হচ্ছে, এইরূপ জ্ঞানকে প্রত্যভিজ্ঞা বলা হয়।

পুনর্জ্ঞান বা প্রত্যভিজ্ঞা ছাড়া স্মরণক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হয়তো পূর্বজ্ঞাত বিষয়টির সঠিকভাবেই পুনরুৎপাদন হল, অথচ একে পূর্বজ্ঞাত বলে চিনতে পারা গেল না। কিংবা যে বস্তু বা বিষয়টি পূর্বে জেনেছিলাম, সেই বস্তু বা বিষয়টিকেই পুনরায় জানাচ্ছি বা স্মরণ করছি, এই প্রকারের প্রত্যভিজ্ঞতা ঘটল না। এইরূপ ক্ষেত্রে পূর্বজ্ঞান বিষয়ের পুনরুৎপাদন হওয়া আর না হওয়া সমান।

সুতরাং পুনর্জ্ঞান বা প্রত্যভিজ্ঞা স্মৃতির অপরিহার্য অঙ্গ।

স্থান – কাল নির্দেশ

কোনো বস্তুর বা বিষয়ের প্রত্যভিজ্ঞতায় এর প্রতিরূপটি যে প্রতিরূপ, এই প্রকার বোধ অনিবার্য। প্রতিরূপের স্থান-কাল নির্দেশ না হলে, এই প্রকারের প্রত্যভিজ্ঞা সম্ভব হয় না। শুধু সংরক্ষিত বস্তুর বা বিষয়ের পুনরুৎপাদন হলেই হল না। বস্তুটি বা বিষয়টি কোথায়, কবে বা কখন জ্ঞাত হয়েছিল, সেই স্থান-কাল জ্ঞানেরও পুনরুৎপাদন হওয়া চাই। স্থান-কাল নির্দেশসহ বস্তুর বা বিষয়ের পুনরুৎপাদন না ঘটলে এর পরিচিতিবোধ, যাকে টিশনার প্রত্যভিজ্ঞার প্রাণরূপে আখ্যায়িত করেছেন, তা ঘটে না। দূর থেকে একটি লোককে দেখে তাকে যেন চিনি বা জানি বলে মনে হয়। কিন্তু এই সংশয়মিশ্রিত জ্ঞান প্রত্যভিজ্ঞা নয়। প্রত্যভিজ্ঞা হয় তখনই, যখন ওই লোকটিকে কোন স্থানে কবে বা কোন সময় দেখেছিলাম, এই স্থান-কাল-নির্দেশ ঘটে।

সুতরাং স্মৃতি বলতে বোঝায় সেই স্মরণ করবার ক্ষমতা, যা পুর্ব – অভিজ্ঞতালব্ধ প্রতিরূপের সংরক্ষণ, পুনরুৎপাদন, প্রত্যাভিজ্ঞা এবং স্থান-কাল-নির্দেশের ফলে ঘটে। এবার স্মৃতির অঙ্গগুলির বিশ্লেষণ ও আরও কয়েকটি আনুষঙ্গিক বিষয় আলোচনা করলে স্মৃতি-প্রক্রিয়া বুঝতে আমাদের বিশেষ সুবিধা হবে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x