সামাজিক বহির্ভূতকরণ কি? বহির্ভূতকরণের প্রকারভেদ, শিক্ষায় বহির্ভূতকরণ, শিক্ষায় বহির্ভত করণের কারণসমূহ
সামাজিক বহির্ভূতকরণ কি?
বহির্ভূতকরণ বা Exclusion অন্তর্ভূক্তিকরণের ঠিক বিপরীত। ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন এ বলা হয়েছে – বহির্ভূতকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা দল যে সমাজে বাস করে, সেই সমাজের সামাজিক প্রক্রিয়ায় সামগ্রিক বা আংশিকভাবে অংশগ্রহণ থেকে তারা বঞ্চিত থাকে। অর্থাৎ বহির্ভূতকরণ হলো সেই ব্যক্তি বা দল যারা নানা করণে সাধারণ নাগরিক সুযোগসুবিধা এবং সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় – গোরে ও ফিগুইরেডো।
ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশনের মতে প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক অধিকার আছে এবং বৃত্তি, বাসস্থান, আরোগ্য, শিক্ষা ইত্যাদি সমাজের প্রধান কর্মসূচিতে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। বহির্ভূতকরণ ঘটে যখন ব্যক্তি বা দল এই ধরনের কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হয়।
বহির্ভূতকরণের প্রকারভেদ
অর্মত্য সেন বহির্ভূতকরণকে দুইভাগে ভাগ করেন। যথা –
সক্রিয় বহির্ভূতকরণঃ পরিকল্পিতভাবে বা আইনের মাধ্যমে বহির্ভূতকরণ, যেমন – উদবাস্তুদের রাজনৈতিক মর্যাদা না দেওয়া, অর্থাৎ সামাজিক অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা।
নিষ্ক্রিয় বহির্ভূতকরণঃ এটি সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। যেমনঃ দরিদ্রতার কারণ হলো আর্থিক সংকট যা কোনো নিয়ম আরোপ বা আইন প্রণয়নের দ্বারা হয় না।
ব্যক্তি এবং দল নানাভাবে বহির্ভূত হতে পারে। যেমন: আমাদের দেশে দলিত ও আদিবাসীরা বহু ক্ষেত্রেই আর্থিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
শিক্ষায় বহির্ভূতকরণ
2006 খ্রিস্টাব্দে UNESCO-র একটি প্রতিবেদনে শিক্ষায় বহির্ভূত করণের বিষয়টি স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে মোট ছয়টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, যার সবকয়টিই শিক্ষার বহির্ভূত করণকে বোঝায়। এগুলি হলো –
১. শিখনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবনিশক্তির অভাব
২. বিদ্যালয় অথবা কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে প্রবেশাধিকার থেকে বর্জন
৩. অনিয়মিত ও বিচ্ছিন্ন বিদ্যালয় ও শিক্ষা কার্যক্রম অংশগ্রহণ
৪. অর্থবহ শিখন অভিজ্ঞতা থেকে বর্জন
৫. অর্জিত শিখনের অস্বীকৃতি জনিত বর্জন
৬. অর্জিত শিখন নিজের গোষ্ঠী বা সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগানোর ব্যর্থতা জনিত বর্জন।
শিক্ষায় বহির্ভূত করণের কারণসমূহ
শিক্ষায় বহির্ভূত করণের উপাদানগুলি হলো –
১. ভয় এবং মানসিক নিরাপত্তাহীনতা
২. মৌলিক পরিষেবার অনধিকার
৩. ভদ্রস্থ কাজ ও চাকুরীর অভাব
৪. জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য সম্পদের অভাব
৫. জমির মালিকানা না থাকা
৬. মানবাধিকারের প্রতি অমর্যাদা
৭. বিচ্ছিন্নতা
৮. ঋণ পাওয়ার বাধা
৯. হিংসা ও নির্যাতন
১০. যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব
১১. নিরাপত্তার অভাব।