সমাজ কাকে বলে? সমাজের উপাদানগুলো কি কি? সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? সমাজের প্রয়োজন কেন? সমাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

সমাজ কাকে বলে?

মানুষ যখন একত্রিত হয়, মেলামেশা করে এবং কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত হয় তখন তাকে সমাজ বলে।

সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস বলেন, “সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলতি হয়েছে।”
মনের ভাব প্রকাশের জন্য এবং আদান – প্রদানের সহজাত প্রবৃত্তির বশে মানুষ একত্রে বসবাস করতে শিখেছে। গিডিংসের ভাষায় একত্রিত হওয়ার মূল কারণ হলো “সাধারণ চেতনাবোধ”। মানুষ এই চেতনাবোধ থেকে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পরিবার, সংঘ, সম্প্রদায় প্রভৃতি গঠন করেছে। এরূপ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে উঠেছে সমাজ।
ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ মানুষের বহুবিধ সম্পর্কের এক বিচিত্র রূপ।”
সমাজ একটা অমূর্ত ধারণা। সমাজের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। সমাজ ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। এমনকি বিশ্বব্যাপীও হতে পারে। যেমন, রেডক্রস সমাজ।
অধ্যাপক লিক্ক বলেন, “সমাজের সঙ্গে ভূখণ্ডের সম্পর্ক নেই”। সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে এবং সমাজ তাকে লালন করে। ম্যাকাইভার তার সমাজ নামক গ্রন্থে সমাজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের একটি জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।”

মাজের উপাদান

সমাজ হল পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের সম্বন্ধযুক্ত মনুষ্যগােষ্ঠী। অর্থাৎ যখন বহু ব্যক্তি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তােলে তখন ঐ জনসমষ্টিকে সমাজ বলে। এখন প্রশ্ন হল কী কী উপাদান দ্বারা সমাজ গঠিত ? সমাজ বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। যথা

সংঘবদ্ধ মানুষ :

সমাজের প্রধান উপাদান হল সংঘবদ্ধ মানুষ। মানুষ ছাড়া সমাজের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা :

পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতা না থাকলে সমাজস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। সুতরাং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সচেতনতাকে সমাজ গঠনের অন্যতম উপাদান হিসেবে অভিহিত করা যায়।

সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য :

সমাজ গঠন করতে যেমন কতগুলাে মানুষের প্রয়ােজন তেমনি ঐ সব মানুষের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তত সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকতে হয়। আর এ সম্বন্ধে তাদের মধ্যে অল্পবিস্তর চেতনা থাকাও জরুরি। সামাজিক সম্পর্কহীন মনুষ্যগােষ্ঠীকে সমাজ বলা যায় না। কেবলমাত্র সমাজের মধ্যে সাদৃশ্যই থাকবে, এটা ঠিক নয়। যেসব মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত, সেসব মানুষের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

সহযােগিতা :

সহযােগিতা হল সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ সহযােগিতা ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। পারস্পরিক সহযােগিতা হল সমাজের ভিত্তি।

পরপর নির্ভরশীলতা :

পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজের আরেকটি উপাদান। সমাজের মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ মানুষ একা বাঁচতে পারে না। সমাজে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাহায্য-সহযােগিতা ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে না।

সুতরাং উপরের আলােচনায় দেখা যায় যে, সমাজ গঠন করতে যেমন দরকার সমাজবদ্ধ মানুষ, তেমনি প্রয়ােজন মানুষদের মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং সহযােগিতা। এগুলাে না হলে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর সামাজিক সম্পর্ক না হলে কোনাে মনুষ্যগােষ্ঠীকে আমরা সমাজ বলতে পারি না।

সমাজের উপাদানগুলো কি কি?

সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?

সমাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

সমাজ দর্শন কাকে বলে?

সমাজ বন্ধু কাকে বলে?

সমাজের প্রয়োজন কেন?

Similar Posts