রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি
উত্তরঃরাষ্ট্র সম্পর্কিত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের নিম্নোক্ত চারটি উপাদান বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। রাষ্ট্র হতে হলে এই চারটি বৈশিষ্ট্যই অপরিহার্য। এর যে কোনটির অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র রাষ্ট্ররূপে আখ্যায়িত হতে পারে না।
১। জনসমষ্টি : জনগণকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গঠিত হয়। সংগঠিত জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা, অবস্থান ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল বর্ণিত হয়। জনগণহীন বিরাট এলাকায় রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। জনসমষ্টি হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান।
২। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড : রাষ্ট্র অপরিহার্যরূপে একটা ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমা রাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট বলয়ে আবদ্ধ করেছে। রাষ্ট্র একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। এজন্য রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ড অপরিহার্য।
রাষ্ট্রের জনগণের বসবাসের জন্য একটা ভূখণ্ডের সুবন্দোবস্ত করতে হয়। তবে রাষ্ট্রের সীমারেখা বা আয়তন কত হবে তার কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা নিয়ম নেই।
৩। সরকার : রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম উপাদান হচ্ছে সরকার। জনসমষ্টি আর সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকলে রাষ্ট্র গঠন করা যায় না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার অপরিহার্য। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকরী হয়।
সরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন করে, যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিভিন্ন কার্যসম্পাদন করে। সরকার গঠিত হয় আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের সমন্বয়ে ।
৪। সার্বভৌমত্ব ঃ সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা উপাদান। অধ্যাপক বার্জেস এর মতে, “সার্বভৌমত্ব হচ্ছে প্রত্যেক প্রজার ও প্রজাদের সকল প্রকার সংঘের উপর মৌলিক, চরম, অসীম ও সর্বাত্মক ক্ষমতা।”
সার্বভৌমত্ব ব্যতীত রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও স্বরূপ বহুলাংশে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃতি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই এই সার্বভৌম ক্ষমতার অধীন।
রাষ্ট্র কি? রাষ্ট্র কাকে বলে ?
রাষ্ট্র বলতে আমরা সাধারণত কোন রাজ্য বা দেশ বুঝে থাকি। কিন্তু রাজনীতি শাস্ত্রে ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
যে কোন রাজ্য বা দেশকে রাষ্ট্র বলা চলে না। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্র হল একটি সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। সমাজের প্রতিটি দিক সুন্দরভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ভার থাকে এই রাষ্ট্রের উপর ।
নিম্নে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেনঃ
(i) এরিস্টটল এর মতে, “কতিপয় গ্রাম ও পরিবারের সম্বন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত এবং পূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠাই এর উদ্দেশ্য।”
(ii) উড্রো উইলসন বলেছেন, “কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত একটি জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।”
(iii) অধ্যাপক গার্নার-এর মতে, “রাষ্ট্র এরূপ একটি জনসমষ্টি, যারা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বাস করে, যারা বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণ হতে স্বাধীন, যাদের একটি সুসংহত সরকার আছে যাকে তথাকার অধিবাসীদের অধিকাংশ স্বভাবত মানা করে চলে।” এই সংজ্ঞাটিই সবচেয়ে স্পষ্ট।
সুতরাং, রাষ্ট্র হল সেই জনসমষ্টি যারা কোন এক ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যারা একটি সংগঠিত সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে এবং সর্বপ্রকার বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত থাকে ।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।