তপশিলি উপজাতির ধারণা দাও।
সংবিধানের 336 (25) নং ধারায় বলঅ হয়েছে- তপশিলি উপজাতি হল সেই উপজাতি গোষ্ঠী বা ‘Tribes’ বা তার অংশবিশেষ যা ভারতের রাষ্ট্রপতি 342(1) নং ধারা বলে Public Notification দিয়ে নির্দিষ্ট করেন।
সংবিধানের তপশিলি উপজাতি বলতে বলা হয়েছে –
- যাদের মধ্যে ‘প্রিমিটিভ’ (আদিমতা) লক্ষণগুলি আছে।
- নির্দিষ্ট সংস্কৃতির অধিকারী হবে।
- ভৌগলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন।
- অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মেলামেশায় অনিচ্ছুক।
বিভিন্ন সমাজতত্ত্ববিদ উপজাতি কথাটিকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মিশ্র (2002) তপশিলি উপজাতিদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন – তপশিলি উপজাতি বলে তাদেরই গণ্য করা হয় যারা –
- নিজেদের ভূমিপুত্র বলে মনে করে।
- সাধারণত পার্বত্য বা জঙ্গলে বাস করে।
- অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।
- ধর্ম ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।
- তীব্র দলগত ঐক্য ও সাধারণত পূর্বপুরুষদের বিশ্বাসের অনুগামী।
বস্তুতপক্ষে ‘তপশিলি উপজাতি’ মানবগোষ্ঠীর মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। প্রতিটি গোষ্ঠীর নিজস্ব উপভাষা, সামাজিক আচার-আচরণ, টোটেম-ট্যাবু বর্তমান। সাধারণভাবে সমাজের অগ্রসর অংশের মানুষের থেকে তারা দূরে থাকতে চায়। আন্দামানের গভীর বনে জঙ্গলে বসবাসকারী এইরকম ‘উপজাতি’ হল ‘জারোয়া উপজাতি’। ভারতে বংশজাত জনবসতির চরিত্র বজায় রেখে চলেছে এই রকম উপজাতিগুলি হল – কোল, ভীল, নাগা, সাঁওতাল ইত্যাদি। উপজাতির মধ্যে কোনো কোনোটির সদস্যসংখ্যা খুবই কমে এসেছে। যেমন- পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলে বসবাসকারী ‘বীরহোড় সম্প্রদায়’।
আদিবাসীদের শোষণ এবং সামাজিক বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করত এবং তাদের শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন করতে ভারতীয় সংবিধান কতকগুলি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। এ জন্য বিশেষ রণকৌশলেরও আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গোড়াতেই নেওয়া এই বিশেষ রণকৌশলের নাম ট্রাইবাল সাব প্ল্যান (TSP)। এই রণকৌশলের লক্ষ্য রাজ্য সরকারের নেওয়া আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে অর্থ জোগানো, কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক, আর্থিক ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির বিভিন্ন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেওয়া। এই কৌশলের মূল বনেদ হল বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ট্রাইবাল সাব প্ল্যানের অর্থ বরাদ্দ সুনিশ্চিত করা।
উপজাতিদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রাইবাল সাব প্ল্যান প্রণয়ন ও রূপায়ণ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রের নানা মন্ত্রক ও দফতর যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তা ছাড়াও তাপশিলি উপজাতিদের স্বার্থে উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক বেশ কয়েকটি প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়ণ করছে।