বৃত্তিমূলক নির্দেশনা কাকে বলে? শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কার্যাবলি
বৃত্তিমূলক নির্দেশনা (Vocational Guidance) কাকে বলে?
শিক্ষার তিনটি স্তর যথা: প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা। মূলত মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর থেকেই শিক্ষার্থীকে বৃত্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শিল্প ও সেবার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বৃত্তির উদ্ভব হয়। বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় বৃত্তির সুযোগ তৈরি হয়। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে কোন পেশার জন্য কে উপযুক্ত তার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। যেহেতু সকল পেশার জন্য সকল শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে সমান পারদর্শী নয়, তেমনি শিক্ষার্থী ভেদে পেশার প্রতি আগ্রহ ও মনোভাবও এক রকম নয়। বৃত্তিমূলক নির্দেশনায় শিক্ষার্থীর কাজের প্রতি আগ্রহ, মনোভাব ও প্রবণতা অনুযায়ী নির্দেশনা দিলে সে উপযুক্ত পেশা নির্বাচনে সচেষ্ট হবে। এছাড়া বৃত্তিমূলক নির্দেশনার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসংস্থান সম্পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য বিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানায়। বৃত্তিমূলক নির্দেশনার আওতায় শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে নিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন বৃত্তি সম্পর্কে পরিচিত করে তোলা হয়।
শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কার্যাবলি
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কাজগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো –
প্রাথমিক স্তর (Primary Stage): শিক্ষার এই স্তরে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কাজগুলি হলো-
১) শিক্ষার্থীদের ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
২) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব দক্ষতা অনুযায়ী অনুকূল মনোভাবের বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
৩) শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য বৃত্তিগত বা পেশাগত তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
৪) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তিগত কোর্সগুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করে থাকে।
৫) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি সংক্রান্ত সঠিক মনোভাব গঠনে সাহায্য করে থাকে।
৬) শিক্ষার্থীদের বাস্তবিক জীবনের দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে থাকে।
৭) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি বা পেশার প্রতি আগ্রহ গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
৮) প্রাথমিক শিক্ষার পরে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি সংক্রান্ত কোর্স সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
৯) শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম এবং সহপাঠক্রমমূলক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণের জন্য তৈরি করে যার দ্বারা ভবিষ্যৎ জীবনে সফল কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষতা এবং মনোভাবের বিকাশ ঘটে।
১০) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত করে থাকে।
মাধ্যমিক স্তর (Secondary Stage): শিক্ষার এই স্তরে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কাজগুলি হলো –
১) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব যোগ্যতা, আগ্রহ, অভিযোজন দক্ষতা এবং অন্যান্য গুণাবলির মূল্যায়ন করে থাকে।
২) শিক্ষার্থীদের তাদের যোগ্যতা এবং স্বার্থ অনুসারে উপযুক্ত বৃত্তিমূলক কোর্স এবং ক্রিয়ালাপগুলি চয়ন করতে সহায়তা করে থাকে।
৩) শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার মূল্যায়নে সাহায্য করে থাকে।
৪) এই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে বৃত্তিসংক্রান্ত অগ্রগতির উপযোগী করে তুলতে ব্যাথা করে থাকে।
৫) এই নির্দেশনা বৃত্তি সংক্রান্ত ইতিবাচক মনোভাব বিকাশে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকে।
৬) বৃত্তির সঠিক উদ্দেশ্য গুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে থাকে।
৭) বৃত্তিমূলক নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে এবং কোর্সের বৃত্তিমূলক সুবিধাগুলিকে জানতে সাহয্য থাকে।
উচ্চমাধ্যমিক স্তর (Higher-Secondary Stage) : শিক্ষার এই স্তরে বৃত্তিমূলক নির্দেশনার কাজগুলি হলো –
১) প্রাইভেট বা সরকারি সংস্থার অন্তর্গত বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রদান করে থাকে।
২) শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তিমূলক কোর্স নির্বাচনে সহায়তা করে থাকে।
৩) শিক্ষার্থীদের উচ্চতর বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্বচ্ছ উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম করে তোলে।
৪) উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকে।
৫) ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে থাকে।
৬) বৃত্তি বা পেশার প্রতি আগ্রহ আনয়নে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে থাকে।
৭) এই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম সংক্রান্ত বিষয়গুলির বৃত্তিমূলক প্রভাবগুলি বুঝতে সাহায্য করে থাকে।