অর্থনীতি পরিচয় (Introduction of Economics)

অর্থনীতি পরিচয়

Introduction of Economics


অর্থনীতি পরিচয়

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে। মানুষ আজীবন নানাবিধ বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলে। মানুষের চলার পথের সমস্যা বা বাধা অতিক্রম করতে অর্থনীতি বিষয় নানাভাবে সহায়তা করে। মানুষ, সমাজ বা দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে অর্থনীতি বিষয় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতি বিষয় সম্পর্কে জানা বা শেখা সেজন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ; প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা; অর্থনীতির সংজ্ঞা ও নীতি; আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।

 

আশা করা যায় যে এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

􀀀 অর্থনীতির উৎপত্তি ও এর বিকাশ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করতে পারব

􀀀 দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাবের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব

􀀀 অর্থনীতির ধারণা বর্ণনা করতে পারব

􀀀 অর্থনীতির প্রধান দশটি নীতি বর্ণনা করতে পারব

􀀀 বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিচয় বর্ণনা করতে পারব

􀀀 বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক সুবিধা ও অসুবিধা মূল্যায়ন করতে পারব

অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ

আজকের যে অর্থনীতি আমরা পড়ি তা পূর্বে এতটা গোছালো ছিল না। সনাতন বা আদিম সমাজে মানুষের জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সহজসরল। খাবার-দাবার, কাপড়-চোপড় এবং বাড়িঘর – এসবই ছিল মানুষের মৌলিক চাহিদা। দ্রব্য-সামগ্রী বিনিময়ের রীতি ছিল খুব সীমিত। মূলত মানুষের কায়িক পরিশ্রম ছিল উৎপাদনের একমাত্র উপকরণ। মুসা নবীর সময়ে অর্থাৎ ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্ব হিব্রু (Hebrew) সভ্যতার যুগে ধর্মগ্রন্থে বা দর্শনের বইয়ে অর্থনীতি বিষয়ে অগোছালোভাবে কিছু আলোচনা হয়। আয়, ধর্ম, নৈতিকতা, দর্শন অর্থনীতি তখন একসঙ্গে আলোচিত হতো। অর্থনীতি বিষয়ের আলাদা কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

 

বর্তমান ইউরোপীয় সভ্যতার মূল ভিত্তি হলো গ্রীক চিন্তাবিদদের চিন্তা ভাবনা, রোমান আইন এবং খ্রীষ্টধর্ম। গ্রীসে প্রথম এরিস্টটলসহ অন্যান্য গ্রীক দার্শনিক ব্যক্তিমালিকানার ধারণাটি গ্রহণ করেন এবং ভূমির উপর ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রীক সভ্যতার ইতিহাসে এরিস্টটলকে প্রথম অর্থনীতিবিদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। শ্রমবিভাজন, ব্যবসা এবং অর্থের ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রীক সভ্যতা মূলত নগররাষ্ট্র ভিত্তিক সভ্যতা। দাসপ্রাথা ছিল সে যুগের একটা স্বীকৃত বিষয়। শহরের অধিবাসীরা ছিল মূলত ব্যবসায়ী এবং মিস্ত্রি। অর্থনীতির ইংরেজি শব্দ Economics গ্রীক শব্দ Okonomia থেকে এসেছে। Okonomia অর্থ গৃহস্থালীর ব্যবস্থাপনা (Management of the Household)। প্লেটো (৪২৭ – ৩৪৭ খ্রীষ্টপূর্ব) এবং এরিস্টটল (৩৮৪ – ৩২২ খ্রীষ্টপূর্ব) ছিল গ্রীক সভ্যতার বিখ্যাত দুই চিন্তাবিদ। এ দুজন চিন্তাবিদ ব্যক্তিগত সম্পত্তি, শ্রমিকের মজুরি, দাসপ্রাথা ও সুদসহ অর্থনীতির অনেক মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

রোমানরা সামরিক এবং সফল রাষ্ট্র পরিচালক হিসেবে অধিক পরিচিত। রোমানরা মূলত গ্রীকদের দেওয়া অর্থনৈতিক চিন্তাধারাকে নিজের করে নেয়। রোমান সমাজে কৃষিকে অত্যন্ত মহৎ এবং সম্মানজনক পেশা হিসেবে মনে করা হতো। রোমান দার্শনিকরা টাকা লগ্নি করাকে বা টাকা সুদে খাটানোকে খুনের সমান অপরাধ বলে মনে করতেন।

 

প্রাচীন ভারতে চতুর্থ  খ্রীষ্টপূর্বে কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি ও সামরিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত (১৫৯০-১৭৮০) ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইতালিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যে প্রসার ঘটে তাকে ‘বাণিজ্যবাদ’ (Mercantilism) বলা হয়।

দেশের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্য উদ্বৃত্তকরণের লক্ষ্যে ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বেশি রপ্তানি করত এবং খুব সামান্যই আমদানি করত। ইংল্যান্ডের উৎপাদিত পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করে মূল্যবান ধাতু (সোনা, রূপা, হীরা ইত্যাদি) আমদানি করা হতো। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ফরাসীরা সে দেশের ধনী মানুষের বিলাসী জীবনযাপন, অতিরিক্ত করারোপ এবং ইংল্যান্ডের বাণিজ্যবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভূমিবাদ (Physiocracy) মতবাদ প্রচার করেন। ভূমিবাদীদের মতে, কৃষিই (খনি ও মৎসক্ষেত্রসহ) হলো উৎপাদনশীল খাত। অন্যদিকে শিল্প ও বাণিজ্য উভয়ই অনুৎপাদনশীল খাত হিসেবে মনে করা হতো।

এভাবেই প্রাচীন এবং মধ্যযুগে অগোছালোভাবে অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনা হয়। অর্থনীতি একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় যখন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে তার বিখ্যাত বই “An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” রচনা করেন। আজকের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো স্মিথের এ বই।

 

দুটি প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা : দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব

মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না। এই না পাওয়ার নাম অভাব। মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই। উদাহরণ দিয়ে বলি, তুমি একজন শিক্ষার্থী। ধরো, তোমার কাছে এক হাজার টাকা আছে। তোমার সার্ট, প্যান্ট এবং ভালো জুতা দরকার। এভাবে দেখা যাবে তোমার অনেক কিছু দরকার। কিন্তু তোমার আছে মাত্র এক হাজার টাকা। তোমার প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকার পরিমাণ অনেক কম। অর্থনীতিতে এটাকে ‘সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা’ বলে। দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে। পছন্দ করার প্রয়োজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়োজন থাকত না।

দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব (Scarcity and Unlimited Wants)

চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়াই মানুষের মূল সমস্যা। যে কোনো দ্রব্য (যেমন: বই) বা সেবাসামগ্রী (চিকিৎসা সেবা) উৎপাদন করতে সম্পদ দরকার হয়। কিন্তু “সম্পদ সীমিত”। সীমিত সম্পদ দিয়ে সীমিত দ্রব্য বা সেবা পাওয়া সম্ভব।

সে জন্যই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সব অভাব পূরণ হয় না। দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই। অভাব কম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতো না। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এল. রবিন্স বলেন “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন সংক্রান্ত মানবীয় আচরণ বিশ্লেষণ করে।”

 

অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসনের মতে সম্পদ সীমিত বলেই সমাজে সম্পদের সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহারের প্রশ্নটি গুরুত্ব পায়। সূর্যের আলো, বাতাস ইত্যাদি প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক। কিন্তু এগুলো পেতে আমাদেরও তেমন কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাধারণত অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু মানুষের অভাব অনেক এবং সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সকল অভাব পূরণ হয় না। মানুষ অনেক অভাবের মধ্য থেকে কয়েকটি অভাব পূরণ করে। অভাবের গুরুত্ব বিবেচনা করে মানুষ এ অভাবগুলো পূরণ করে। অতিপ্রয়োজনীয় অভাবগুলো মানুষ অগ্রাধিকারভিত্তিতে পূরণ করে। এটাই হলো অভাব নির্বাচন বা বাছাই।

অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়?

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে অর্থনীতি বিষয়ের পরিধিও অনেক বেড়েছে। অতীত ও বর্তমান অর্থনীতি বিষয়ের সমন্বয়ে অর্থনীতি বিষয় এখন অনেক উন্নত বা সমৃদ্ধ। প্রথমে যারা অর্থনীতি বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন এদের মধ্যে এ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো, জন স্টুয়ার্ট মিল অর্থনীতিকে সম্পদের বিজ্ঞান বলে মনে করেন। এদের মধ্যে এ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়। অর্থনীতির এই ধারা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত।

 

এ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞাঃ “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের সম্পদের ধরন ও কারণ অনুসন্ধান করে।” ‘সম্পদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি গড়ে ওঠে। তাই সম্পদ আহরণই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য।

স্মিথের সংজ্ঞার দুর্বলতা হলোঃ

১. অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাবকে কীভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে মেটাবে, এই সংজ্ঞায় তার উল্লেখ নেই।

২. এই সংজ্ঞায় সম্পদের উপর অধিক জোর দেওয়া হলেও মানুষ ও তার কাজ-কর্মকে অবহেলা করা হয়েছে।

৩. সম্পদ আহরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও কী উপায়ে সম্পদ যোগাড় করা হবে তা বলা হয়নি।

৪. এই সংজ্ঞায় সম্পদ বলতে দ্রব্যকেই বোঝানো হয়েছে কিন্তু সেবা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

 

অধ্যাপক মার্শাল কর্তৃক প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা

মার্শাল সম্পদের চেয়ে মানবকল্যাণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, “অর্থনীতি মানব জীবনের সাধারণ কার্যাবলি আলোচনা করে।” অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় মানুষের অর্থ উপার্জন এবং অভাব মোচনের জন্য সেই অর্থের ব্যয়। অর্থাৎ অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন।

মার্শাল শুধু মানুষের বাস্তব কল্যাণ সাধন করা নিয়েই আলোচনা করেছেন। বর্তমানে স্বল্পতার সমস্যাই অর্থনীতির মূল সমস্যা। মার্শালের সংজ্ঞায় মানুষের এ মৌলিক সমস্যাটি বিবেচনা করা হয়নি।

অধ্যাপক এল. রবিন্স প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা

অধ্যাপক এল. রবিন্স অর্থনীতির অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তার মতে, “অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যাবলি আলোচনা করে।” এ সংজ্ঞার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

 

১. মানুষের অভাব অসীম এবং অভাবের প্রকৃতি ও পরিমাণ বিভিন্ন রকমের।

২. অভাব পূরণকারী সম্পদ ও সময় খুবই সীমিত।

৩. অসীম অভাবকে কীভাবে সীমিত সম্পদ দ্বারা সমন্বয় সাধন করা যায় তা অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।

৪. সম্পদের যোগান সীমিত বলে একই সম্পদ দ্বারা আমাদের বিভিন্ন অভাব পূরণের চেষ্টা করতে হয়।

৫. অভাবের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা পূরণ করতে হয়। এসব কারণে এ সংজ্ঞাটিকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়।

রবিন্সের সংজ্ঞাটির সমালোচনা : 

১. রবিন্স অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন।

২. মানুষ তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এমন কিছু পছন্দ করে যা অর্থনীতিতে আলোচনা হয় না।

৩. অর্থনৈতিক কাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য যে মানব কল্যাণ তার উল্লেখ নেই।

৪. রবিন্সের সংজ্ঞায় অর্থনীতির সামাজিক অবস্থাকে আলোচনা করা হয়নি।

৫. আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক উনড়বয়ন তার সংজ্ঞায় আসেনি।

৬. রবিন্স অর্থনীতিকে শুধু মূল্য নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু জাতীয় আয়, নিয়োগ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ ইত্যাদি আলোচনা করেননি। সবশেষে বলা যায় রবিন্সের সংজ্ঞা অপেক্ষাকৃত জটিল। অর্থনীতিতে কোনো তত্ত্বই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তাই ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরেও রবিন্সের সংজ্ঞাটি অধিক গ্রহণযোগ্য।

 

অর্থনীতির দশটি নীতি

১। মানুষ দেওয়া-নেওয়া করে (People Face Trade-Offs)

পছন্দমতো কোনো কিছু পেতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই পছন্দের অপর একটি জিনিস ত্যাগ করতে হয়। উদাহরণ দিয়ে বলি, তুমি যদি অর্থনীতি বিষয় পড়তে সব সময় ব্যয় কর তবে বাংলা বা ইংরেজি বিষয়ে পড়া থেকে তোমাকে বিরত থাকতে হবে। এরূপ তুমি যদি টিভি দেখ তবে খেলাধুলার পেছনে সময় ব্যয় করতে পারবে না। সরকার যদি বাজেটে সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করে তবে শিক্ষাখাতসহ অন্যান্য বেসামরিক খাতে ব্যয় কমায়। অর্থাৎ সমাজে মানুষ একটি দেওয়া-নেওয়ার (Trade offs) বিকল্প অবস্থা বেছে নেয়।

২। সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost)

তুমি যদি স্কুলে লেখা পড়ার জন্য সময় ব্যয় কর তবে তুমি তোমার বাড়িতে তোমার বাবার কাজে সাহায্য করতে পারবে না। অথচ তুমি বাড়িতে কোনো একটি অর্থনৈতিক কাজ করলে তা থেকে তোমাদের পরিবার আর্থিকভাবে উপকৃত হতে পারত। কিন্তু সে সময় তুমি স্কুলে লেখাপড়া করছো। এখানে লেখাপড়া করার জন্য বাড়িতে কাজ করতে না পারা লেখাপড়ার সুযোগ ব্যয়।

**

৩। মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে (Rational People Think at the Margin)

মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে। বিয়েবাড়িতে খাওয়া শেষে তোমরা কেউ কেউ ভাবো আরো একটু খেতে পারতাম, আবার কেউ কেউ ভাবো আর একটু কম খেলে ভালো হতো। এই অল্প একটু বেশি বা অল্প একটু কম খাওয়া হচ্ছে প্রান্তিক খাওয়া। ধরো, তুমি একটি বিষয়ে A পেলে, তোমার মনে হবে আরেকটু পড়লেই A+ পেতে। মানুষ প্রান্তিক সুবিধা-অসুবিধার কথাও ভাবে। ধরো, তুমি পর পর তিনটি কলা খেলে। ৩ নম্বর কলাটি হলো প্রান্তিক কলা। প্রান্তিক কলা খেয়ে তুমি যে তৃপ্তি পেলে তার নাম প্রান্তিক উপযোগ। প্রান্তিক বা ৩ নম্বর কলাটি পেতে তুমি যত টাকা ব্যয় করলে তার নাম প্রান্তিক ব্যয়। যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে তুমি তখনই প্রান্তিক কলাটি খাবে যখন প্রান্তিক উপযোগ প্রান্তিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি হবে।

৪। মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয় (People Respond to Incentives)

প্রতিটি কাজের জন্য উৎসাহ বা প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ প্রণোদনা পায় বলে কাজটি অধিকতর যত্নের সাথে করে। তোমার বাবা যদি বলেন তুমি পরীক্ষায় সোনালী A+ পেলে তিনি তোমাকে একটি সাইকেল কিনে দেবেন। নিশ্চয়ই তোমার ভেতরে পড়াশোনা করার উৎসাহ আরো বেড়ে যাবে। তেমনি অর্থনীতিতে শ্রমিক প্রণোদনা পেলে বেশি উৎপাদন করে।

৫। বাণিজ্যে সবাই উপকৃত হয় (Trade can Make Everyone Better-Off)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড এবং জাপানের টয়োটা বিশ্বে গাড়ি ব্যবসায়ের জন্য অধিক পরিচিত দুটি কোম্পানী। কোম্পানী দুটির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। কোম্পানী দুটি সাধারণ ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দাম যথাসাধ্য কমিয়ে বাজার দখল করতে চায়। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়; অন্য দিকে মানুষও কম দামে গাড়ি কেনার সুযোগ পায়।

৬। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য বাজার একটি উত্তম পন্থা (Markets are Usually a Good Way to Organize Economic Activities)

অর্থনৈতিক কাজকর্ম সংগঠিত হয়ে থাকে বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফার্ম ও পরিবারসমূহের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলেই কোনো দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। ফার্মের মালিকরা বাজারের চাহিদা দেখে দ্রব্য সরবরাহ করে এবং অসংখ্য পরিবার তাদের আয় ও প্রয়োজন অনুসারে এ সমস্ত দ্রব্য ও সেবাসামগ্রী ক্রয় করে।

৭। সরকার কখনো কখনো বাজার নির্ধারিত ফলাফলের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে (Governments Can Sometimes Improve Market Outcomes)

বাজার ব্যবস্থা ‘অদৃশ্য হাতের’ ইশারায় চলে। কিন্তু সব সময় ব্যাপারটি সঠিকভাবে হয় না। নানা কারণে অদৃশ্য হাত সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে অপারগতা, পরিবেশ দূষণ এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের দরকার হয়।

৮। একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষমতার উপর (A Country’s Standard of Living Depends on Its Ability to Produce Goods and Services)

যেসব দেশের মানুষের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করার ক্ষমতা বেশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। উন্নত দেশসমূহের মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি বলে তাদের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৭,৫০০ মার্কিন ডলার এবং জাপান ৩৫,২০০ মার্কিন ডলার। ফলে তারা উন্নত খাবার গ্রহণ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত নাগরিক সুবিধা লাভ করে। শ্রমিকদের কর্মক্ষমতাও বাড়ে।

৯। যখন সরকার অতি মাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায় (Prices Rise When the Government Prints Too Much Money)

মুদ্রা ছাপানোর ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি অধিক মাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্যস্তর বাড়ে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে অর্থের মান বা মূল্য কমে যায়। ধরো, তুমি ৫০০/- টাকা খরচ করলে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেয়ে যাও। কিন্তু টাকার মান কমে যাওয়ায় ঐ সামগ্রী পেতে তোমাকে ৬৫০/- টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যা পূর্বের ৫০০/- টাকার চেয়ে (৬৫০/- – ৫০০/-) = ১৫০/- টাকা বেশি।

১০। সমাজ মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের মধ্যে স্বল্পকালীন দেওয়া-নেওয়ার মুখোমুখি হয় (Society Faces a Short Run Trade Off between Inflation and Unemployment)

দ্রব্য সামগ্রীর মূল্যস্তর বেড়ে যাওয়ার অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। আর কোনো শ্রমিক বাজার মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু কাজ পায় না – এরা হলো বেকার। মূল্যস্ফীতি কমলে বেকারত্ব বাড়ে। আবার বেকারত্ব কমলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে।

বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা 

অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করে দেশের কল্যাণ বাড়ানো বিশ্বের সব দেশেরই কাম্য। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে যে অর্থনৈতিক বিধি-বিধান, দর্শন, নিয়ম-কানুন ও যে পরিবেশে অর্থনৈতিক কার্য-কলাপ পরিচালিত হয় তাকে বোঝায়। পৃথিবীতে বিভিনড়ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। যেমনঃ

ক. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা, খ. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা, গ. মিশ্র অর্থব্যবস্থা এবং ঘ. ইসলামী অর্থব্যবস্থা।

 

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (Capitalistic Economy)

এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থাকে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমগ্র ইউরোপে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সূত্রপাত ঘটে। ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথ ও তাঁর অনুসারীগণ এ ব্যবস্থা সমর্থন করেন।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Capitalistic Economy)

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :

১। সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ বা উৎপাদনের উপকরণগুলো ব্যক্তিমালিকানায় থাকে। ব্যক্তি এগুলো হস্তান্তর ও ভোগ করে থাকে।

২। ব্যক্তিগত উদ্যোগ : ধনতন্ত্রে অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন: উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। এসব উদ্যোগে সরকারের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

৩। অবাধ প্রতিযোগিতা : এ ব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনে অনেক ফার্ম অবাধে প্রতিযোগিতা করে। ফলে দ্রব্যের দাম কম হয় এবং নতুন নতুন আবিষ্কার সম্ভব হয়।

 

৪। স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা : ধনতন্ত্রে বাজারে চাহিদা ও যোগান স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করে।

৫। মুনাফা অর্জন : ধনতন্ত্রে উৎপাদক সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য উৎপাদন করে।

৬। ভোক্তার স্বাধীনতা : প্রত্যেক ভোক্তা তার নিজস্ব পছন্দ, ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী অবাধে দ্রব্য ক্রয় ও ভোগ করতে পারে। ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনকারী দ্রব্য সরবরাহ করে।

৭। আয় বৈষম্য : ধনতান্ত্রিক সমাজে বিত্তবান ও সাধারণ জনগণের আয়ের মধ্যে বৈষম্য বেশি থাকে।

৮। সরকারের ভূমিকা : এ ব্যবস্থায় সরকার আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা, দেশরক্ষা, সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত থাকে।

অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেউ নিঃস্বার্থভাবে নয়, বরং প্রত্যেকে নিজ নিজ স্বার্থে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে।

 

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বা নির্দেশমূলক অর্থনীতি (Socialistic or Command Economy)

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানের উপর রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত থাকে। অধিকাংশ শিল্প কারখানা ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার এবং সেগুলো সরকারি নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন কোন দ্রব্য, কী পরিমাণে, কীভাবে এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে তা সরকার নির্ধারণ করে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Socialistic Economy)

১। সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অধিকাংশ সম্পদ (জমি, কলকারখানা, খনি ইত্যাদি) ও উৎপাদনের উপাদানগুলোর মালিক হলো সরকার।

২। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা : সরকার দেশের উৎপাদন ও বণ্টনসহ অন্যান্য সব কাজ করে থাকে। সব পরিকল্পনা কেন্দ্র বা সরকার গ্রহণ করে থাকে।

৩। ভোক্তার স্বাধীনতার অভাব : সমাজতন্ত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তারা সরকার-নির্ধারিত উৎপাদিত দ্রব্যাদি ভোগ করে থাকে। কোনো ভোক্তা ইচ্ছাকৃত অর্থ ব্যয় করে কোনো কিছু ভোগ করতে পারে না।

৪। অবাধ প্রতিযোগিতার অভাব : অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে উৎপাদন পরিচালিত হওয়ায় সেখানে বহু সংখ্যক বেসরকারি উদ্যোক্তার অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে না।

৫। ব্যক্তিগত মুনাফার অনুপস্থিতি : সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিগত মুনাফার পরিবর্তে জাতীয় চাহিদা ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য উৎপাদন পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে না। কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য সবই সরকারের অধীনে থাকে বলে ব্যক্তিগত মুনাফা থাকে না।

মিশ্র অর্থব্যবস্থা (Mixed Economic System)

যে অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ বিরাজ করে তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। অর্থাৎ এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগ সম্মিলিত ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। যথা- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, বাংলাদেশ, ভারত ইত্যাদি।

 

মিশ্র অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য (Characteristic of Mixed Economy)

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিশ্র অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য আলাদা রকমের। সাধারণত মিশ্র অর্থনীতির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায়:

১। সম্পদের ব্যক্তিগত ও সরকারি মালিকানা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অবাধে ভোগ করতে পারে ও ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। পাশাপাশি গণদ্রব্য (মহাসড়ক) ও সেবা (স্বাস্থ্যসেবা) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকার পরিচালনা করে।

২। ব্যক্তিগত উদ্যোগ : মিশ্র অর্থনীতিতে উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বণ্টন ও ভোগসহ অধিকাংশ অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগঠিত ও পরিচালিত হয়।

৩। সরকারি উদ্যোগ : মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দেশের মৌলিক ও ভারী শিল্প, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকার পরিচালনা করে থাকে।

৪। মুনাফা অর্জন : মিশ্র অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে ব্যাপক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়।

৫। ভোক্তার স্বাধীনতা : এ ব্যবস্থায় ভোক্তা সাধারণ দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে।

তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে দ্রব্যের দামের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোনো দ্রব্যের উৎপাদন কিংবা ভোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন- ধূমপান, মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও ভোগ ইত্যাদি।

বিশ্বে কোথাও বিশুদ্ধ ধনতন্ত্র বা সমজতন্ত্র না থাকায় অনেকে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে একটি উন্নত অর্থব্যবস্থা বলে মনে করেন।

ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Islamic Economic System)

ইসলামের মৌলিক নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অর্থব্যবস্থাকে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বলা হয়।

ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :

ইসলামী অর্থব্যবস্থায় পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ মানব জাতির কল্যাণে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১। মানবজীবনের সামগ্রিক দিকের সাথে সম্পৃক্ত : ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানবজীবনের কোনো বিচ্ছিন্ন বা আংশিক ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা না করে মানবজীবনের সমগ্র ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করে।

২। মানুষের অধিকার ও দায়িত্বে কোনো বৈষম্য নেই : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সমাজের ব্যক্তি ও সমষ্টির অধিকার, কর্তব্য ও দায়িত্বে কোনোরূপ বৈষম্য নেই। কারণ এ ব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তিকে মর্যাদা এবং জীবন ধারণের পূর্ণাঙ্গ অধিকার দেওয়া হয়।

৩। ইসলামী শরিয়তের ভিত্তিতে পরিচালনা : ইসলামী অর্থনীতির মূল নীতিমালা ইসলামী শরিয়তের উপর নির্ভর করে। ইসলাম ধর্মের মূল দর্শন, পবিত্র কুরআনের নির্দেশ ও রাসুল (স.) এর হাদিসের বিধান মোতাবেক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

৪। মানবকল্যাণে সব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার : ইসলামী অর্থব্যবস্থায় দেশের সমগ্র প্রাকৃতিক ও মানবীয় সম্পদকে মানুষের আয়ত্তাধীন এবং তার কল্যাণে ব্যবহারের কথা বলা হয়।

৫। সম্পদের আমানতদারি মালিকানা : সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে কেবল স্রষ্টার আমানতদার হিসেবে গণ্য করে। এজন্যই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাফল্য মানুষের চরিত্রে দুর্নীতি ও লোভ সৃষ্টি করতে পারে না।

৬। সুদমুক্ত আমানত : ইসলামী অর্থনীতিতে সুদ গ্রহণের স্বীকৃতি নেই। এখানে ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদমুক্ত আমানতের ব্যবস্থা করা হয়।

৭। যাকাত ও ফিতরা : এ ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে যাকাত ও ফিতরার মাধ্যমে ধনীদের নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ করে তা দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

Similar Posts