উৎপাদন কার্যপরিচালনা এবং ঝুঁকি বহনের জন্য সংগঠক বা উদ্যোক্তা যে পারিশ্রমিক পায় তাকেই অর্থনীতিতে মুনাফা বলা হয়। মুনাফাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : মোট মুনাফা ও নীট মুনাফা। আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে এদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ। মোট মুনাফা এবং নীট মুনাফার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করার পূর্বে প্রথমে এদের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। নিম্নে এদের সংজ্ঞা প্রদান করা হল।
মোট মুনাফা (Gross profit) বলতে কি বুঝায়
মোট বিক্রয়লব্ধ আয় হতে মোট উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে মোট মুনাফা বলা হয়। মোট মুনাফার মধ্যে উদ্যোক্তার বিভিন্ন আয়ের সংমিশ্রণ থাকে। যেমন- কোন কোন উদ্যোক্তার মুনাফার মধ্যে নিজস্ব পরিশ্রমের মজুরি, নিজস্ব মূলধনের সুদ এবং নিজস্ব জমির খাজনা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের আয় থাকতে পারে। এসব আয়ের সমষ্টিকেই মোট মুনাফা বলা হয়।
নীট মুনাফা (Net profit) বলতে কি বুঝায়
মোট মুনাফা হতে উদ্যোক্তার নিজস্ব জমির খাজনা, নিজস্ব মূলধনের সুদ এবং নিজস্ব পরিশ্রমের মজুরি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নীট মুনাফা বলা হয়। নীট মুনাফা হল মোট মুনাফার একটি অংশ। সংক্ষেপে বলা যায়, নীট মুনাফা = মোট মুনাফা – অন্যান্য ব্যয়। অর্থনীতিতে মুনাফা বলতে নীট মুনাফাকে বুঝায়।
মোট মুনাফা ও নীট মুনাফার মধ্যে পার্থক্য
উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, মোট মুনাফা ও নীট মুনাফার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে এদের পার্থক্য নির্দেশ করা হল।
- ১. মোট বিক্রয়লব্ধ আয় হতে মোট উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই উদ্যোক্তার মুনাফা। পক্ষান্তরে, মোট বিক্রয়লব্ধ আয় হতে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই উদ্যোক্তার নীট মুনাফা।
- ২. মোট মুনাফার মধ্যে উদ্যোক্তার অন্যান্য উপাদানের আয় সংমিশ্রিত থাকে। কিন্তু নীট মুনাফার মধ্যে কোন উপাদানের আয় মিশ্রিত থাকে না। উৎপাদন কার্য পরিচালনা ও ঝুঁকি বহনের জন্য উদ্যোক্তা যে পুরস্কার পায় তাই হচ্ছে নীট মুনাফা।
- ৩. মোট মুনাফার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার দক্ষতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করতে হয়। কিন্তু নীট মুনাফার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার দক্ষতাই একমাত্র বিবেচ্যবিষয়। অর্থাৎ, মুনাফা উদ্যোক্তার দক্ষতা পরিমাপের একমাত্র চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়।
- ৪. মোট মুনাফা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। কিন্তু নীট মুনাফা উৎপাদনের উপাদানসমূহের মধ্যে বণ্টিত হয় না। নীট মুনাফা হল মোট মুনাফার একটি অংশবিশেষ যা উদ্যোক্তা ঝুঁকি বহনের জন্য পেয়ে থাকে।
উপরিউক্ত পার্থক্যসমূহ মোট মুনাফা এবং নীট মুনাফার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে পার্থক্য আমরা নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যেও প্রকাশ করতে পারি।
- ক. মোট মুনাফা = মোট বিক্রয়লব্ধ – আয় প্রকাশিত ব্যয়
- খ. নীট মুনাফা = মোট বিক্রয়লব্ধ আয় – (প্রকাশিত ব্যয় + অপ্রকাশিত ব্যয়)।