সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জনক Karl Marx, তিনি ১৮৫৩ সালে সর্বপ্রথম ‘Zur Kritikder Politischen Oekonomie’ তে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন, যা পরবর্তীতে Das Kapital এর প্রথম খণ্ডে স্থান পায়।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলতে কি বুঝ
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলতে সে অর্থনীতিকে বুঝানো হয়, যেখানে সম্পদ বা উপকরণের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকে। এখানে ব্যক্তির কোন সম্পদ থাকে না। সেখানে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা উৎপাদকের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয় না। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভোগ, উৎপাদন ও বণ্টনসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজ পরিচালিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোক্তার
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জনক Karl Marx, তিনি ১৮৫৩ সালে সর্বপ্রথম ‘Zur Kritikder
Politischen Ockonomic’ তে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন, যা পরবর্তীতে Das Kapital এর প্রথম খণ্ডে স্থান পায়।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যে প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে তুলে ধরা হল।
১. রাষ্ট্রীয় মালিকানা : সমাজতান্ত্রিক সমাজে সম্পদ বা উপকরণের মালিকানা ব্যক্তির হাতে না থেকে সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ভূমি, শ্রম, মূলধন, মুনাফা এবং সংগঠনের একমাত্র মালিক ও ব্যবহারকারী সরকার। এখানে ব্যক্তির কোন অধিকার থাকে না । রাষ্ট্র কর্তৃক সব অধিকার সংরক্ষিত। সামাজিক মালিকানাই সমাজতন্ত্রের মূলভিত্তি।
২. উৎপাদক ও ভোক্তার সার্বভৌমত্ব হরণ : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত নয়। ভোক্তা ইচ্ছা করলেই যে কোন দ্রব্য ভোগ করতে পারে না এবং উৎপাদক ইচ্ছা করলেই যে কোন দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যে কোন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। অবশ্য সরকার জনগণের প্রয়োজনের দিকে নজর রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
৪. পরিকল্পনা: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশন সেখানে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন পরিচালিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ উৎপাদন ও ভোগকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে তাই পরিকল্পিত অর্থনীতিও বলে।
৫. বাজারের গুরুত্ব : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বাজারের তেমন গুরুত্ব নেই। প্রত্যেকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যই সরকার রেশন প্রদান করে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অর্থের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
৬. দাম ব্যবস্থা : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রিত দাম ব্যবস্থা প্রচলিত। সরকার কর্তৃক এখানে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৭. জাতীয় আয়ের বণ্টন : জাতীয় আয় বা উৎপাদনকে সমভাবে বণ্টনের নীতি সমাজতন্ত্রে প্রচলিত। তাই সমবণ্টনের নীতিকে সমাজতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়। এ নীতিতে বলা হয় যে, সমাজের এক একজন ব্যক্তি তার যোগ্যতা অনুসারে কাজ করে এবং তার কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী পারিশ্রমিক পায়। এ আয় বণ্টন নীতি অনুসরণ করা হলে দক্ষতা ও সমতার নীতি অর্জিত হয় বলে সমাজতন্ত্রের অনুসারীরা মনে করেন।
৮. বৈদেশিক বাণিজ্য : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য সাধারণত পণ্য বিনিময় পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। অর্থের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। যে পরিমাণ পণ্য দেশ রপ্তানি করে তার সম পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়। এতে লেনদেন ভারসাম্য ও বাণিজ্য ভারসাম্য অর্জিত হয়। এছাড়া বাণিজ্য চক্র সমাজতান্ত্রিক সমাজে লক্ষ্য করা যায় না।
৯. মুনাফার অবদান : সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কোন ব্যক্তিগত মুনাফা থাকে না। সব উৎপাদন যেহেতু সরকারের আওতায়, তাই সরকার সব মুনাফার অংশীদার। এ মুনাফা জনকল্যাণে অথবা সামাজিকীকরণে ব্যয়িত হয়।
১০. রাজনৈতিক ব্যবস্থা : সমাজতান্ত্রিক দেশে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। যারা সব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় উচ্চপদসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে। এমন দেশে সরকারের বিরোধিতা অথবা রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করা কঠিন।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা একটি নির্দেশিত অর্থব্যবস্থা। যেখানে রাষ্ট্র সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে বিশুদ্ধ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নেই বললেই চলে। এমনকি সমাজতন্ত্রের সূতিকাগার সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে গিয়ে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটেছে।