সমাজসেবা হল সামাজিক উন্নয়ন এবং নীতির সাথে সম্পৃক্ত একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি কল্যাণ রাষ্ট্রই সমাজসেবার প্রতি সর্বোত্তম গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। কেননা সমাজসেবা ছাড়া কোন সমাজের সার্বিক কল্যাণ কখনও নিশ্চিত করা যায় না। শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগে সমাজের কল্যাণসাধনের জন্য সমাজসেবাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হতো। তখনকার সমাজে আর্তমানবতার সেবায় পরিচালিত যে কোন প্রকারের কর্মকাণ্ডকে সমাজসেবা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমান যুগেও সাধারণ জনগণ সমাজসেবা বলতে বুঝে থাকে দুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবায় গৃহীত কর্মকাণ্ডকে। আর এজন্যই আধুনিক সমাজকল্যাণে সমাজসেবাকে এত বেশি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়।
সমাজসেবা কি
সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুসংগঠিত উপায়ে সমাজের সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণে পরিচালিত যাবতীয় উন্নয়ন বা কল্যাণমূলক প্রচেষ্টার সমষ্টিকে সমাজসেবা বলা হয়।
বিভিন্ন মনীষীগণ সমাজসেবার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হল।
সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিকশনারী প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজসেবা হল সমাজকর্মী এবং অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত সুসংগঠিত কার্যক্রম, যা মানুষের কল্যাণে ও স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে নিয়োজিত। এসব কার্যক্রম মানুষকে অধিক স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে; পরনির্ভরশীলতা প্রতিরোধ করে পারিবারিক সম্পর্ক শক্তিশালী এবং ব্যক্তি, পরিবার, দল বা সমষ্টির সদস্যদের সফল সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।”
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কমিশন প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী, “Social services is an organized activity that aims at helping towards a mutual adjustment of individuals and their environment.” অর্থাৎ ব্যক্তি ও তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করার লক্ষ্যে সংগঠিত কার্যক্রমের সমষ্টি হল সমাজসেবা।
ম্যারি এম. ক্যাশডি এর মতে, “Social services are those organized activities that are primarily and directly concerned with the conservation, the protection and the improvement of human resources.”, অর্থাৎ, সমাজসেবা বলতে সেসব সংগঠিত কার্যাবলির সমষ্টিকে বুঝায়, যেগুলো প্রাথমিক ও প্রত্যক্ষভাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও প্রতিরোধের সাথে সংশ্লিষ্ট।
সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজসেবা হল সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত সেসব কার্যাবলির সমষ্টি যা মানুষের কল্যাণ, উন্নতি ও প্রগতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। সমাজসেবামূলক কার্যাবলির মধ্যে সামাজিক সাহায্য, সামাজিক বীমা, শিশুকল্যাণ, সংশোধনমূলক কার্যক্রম, মানসিক স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন, শ্রমকল্যাণ, গৃহসংস্থান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।