১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বল বা নেতিবাচক দিক ও সবল বা ইতিবাচক দিক

১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বল বা নেতিবাচক দিক ও সবল বা ইতিবাচক দিক

১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের (নেতিবাচক) দুর্বল দিক

নিম্নে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বলদিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. শ্রমাগারে মানবেতর জীবনযাপন : ১৮৩৪ সালে রয়াল কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পৃথক পৃথকভাবে শ্রমাগার ও দরিদ্রাগার নির্মাণের কথা বলা হলেও বাস্তবে শুধু শ্রমাগার নির্মাণ করা হয়। এ শ্রমাগারে সব শ্রেণীর দরিদ্রদের একত্রে বসবাস করতে হয়। ফলে রোগগ্রস্ত, বৃদ্ধ, অক্ষম ও শিশুরা একই শ্রমাগারে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়।

২. পারিবারিক ভাঙন : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন বাস্তবায়নের ফলে দরিদ্রদের পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়। পিতামাতা, ছেলেমেয়ে, ভাইবোনদের শ্রমাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করতে হতো। তারা নির্ধারিত সময় ব্যতীত পরস্পরের সাথে দেখা করতে পারত না। তাছাড়া মায়েরা নির্ধারিত সময় ছাড়া তাদের শিশু সন্তানদের সাথে দেখা করতে ও সন্তানদের আদরযত্ন করতে পারত না। এসব কারণে দরিদ্রদের মাঝে পারিবারিক ভাঙন দেখা দেয়।

৩. কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করা : সক্ষম ও অক্ষম উভয় প্রকার দরিদ্রদেরকেই শ্রমাগারে জেলখানার কয়েদিদের মতো কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। ফলে তাদের জীবন হয়ে উঠে কয়েদিদের জীবনের মতো। তারা এ কারণে শ্রমাগারকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। অনেকে শ্রমাগারকে সুদৃঢ় দুর্গ বা ‘Bastil’ বলে আখ্যায়িত করত।

৪. সামাজিক শ্রেণীভেদ সৃষ্টি : সাহায্যার্থী দরিদ্ররা সমাজের সবচেয়ে কম বেতনভুক্ত শ্রমিকের চেয়েও কম অর্থ পেত এটা তাদেরকে সমাজের সবচেয়ে নিচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে একটা পরিচিতি এনে দেয়। এটা একদিকে যেমন নতুনত্ব একটি ‘সাহায্যার্থী শ্রেণী হিসেবে সমাজে আখ্যায়িত হয় তেমনি এর প্রেক্ষিতে তাদের মাঝে একটা অসন্তোষও সৃষ্টি হয়।

১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনের (ইতিবাচক) সবল দিক

১৮৩৪ সালের দরিদ্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা লাভ করে। এ আইনের ফলে ১৮৩৪ সাল থেকে ১৮৩৭ সালের মধ্যে দরিদ্র সাহায্যের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে যায়। আইনের বাস্তবায়নকল্পে দু’শত শ্রমাগার (Workhouses) নির্মিত হয় এবং পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করা হয়। নিজেদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণকল্পে সক্ষম দরিদ্র ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে শ্রমাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা লাভ ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন সামাজিকভাবে সফল হয় নি। একারণে ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, “১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন সংস্কার হলো ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের কঠোর ও নির্যাতনমূলক প্রয়োগ। এটি দরিদ্র সাহায্যের অর্থ কমায় ঠিকই, কিন্তু শ্রমাগারের জীবনকে এতই অসহনীয় করে তোলে যে দরিদ্ররা শুধু তখনই সাহায্য চাইত যখন, তাদের বেঁচে থাকার অন্য কোন উপায় থাকত না।”

Similar Posts