একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য পাওয়া যায় E.H. Chamberlin এর The Theory of Monopolistic Competition’ গ্রন্থে। অধ্যাপক মার্শাল অবশ্য এ ধরনের বাজার সম্পর্কে সীমিত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ‘বাজারব্যবস্থার জটিলতা’ শীর্ষক কিছু উপদেশ প্রদান করেন যা Sraffa, Harrod, Chamberlin এবং Joan Robinson এঁদের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের আলোচনা থেকে আমরা এ বাজারব্যবস্থার যেসব বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই তা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১. অসংখ্য ক্রেতা বিক্রেতা : একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অসংখ্য ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতি থাকে। এক্ষেত্রে ফার্ম উৎপাদন ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র একটি একক বলে দাম বা উৎপাদনের উপর তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। আবার ক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য হওয়ায় কোন একক ক্রেতার পক্ষে ক্রয় বাড়িয়ে বা কমিয়ে দ্রব্য দাম ও পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে না।
২. অসমজাতীয় দ্রব্য : একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ফার্মসমূহ অসমজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করে। একই ধরনের ব্যবহারযোগ্য দ্রব্যসমূহ এক এক বিক্রেতার কাছে এক এক রকম। দ্রব্যসমূহ উচ্চ আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা সম্বলিত পরিবর্তক দ্রব্য এবং সম্পূর্ণ পরিবর্তক দ্রব্য নয়। দ্রব্যের অসমজাতীয়তা হতে পারে-
- ক. গুণগত মান পরিবর্তনের মাধ্যমে। রুচি ও পছন্দ অনুসারে দ্রব্যের মধ্যে গুণগত পার্থক্য করা হয়। এজন্য দ্রব্যের আকৃতি, উপাদান ব্যবহারের ভিন্নতা, স্থায়িত্ব, আয়তন, ডিজাইন, রং এবং প্যাকিং এর মধ্যে পার্থক্য করে থাকে। গুণগত মান পরিবর্তন করে বিক্রেতা বিক্রয় বেশি করার জন্য বেশি দাম দাবি করতে পারে বা দাম কম রেখে বেশি বিক্রয় করতে পারে।
- খ. বিক্রয় বেশি করার জন্য বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। যা অন্যান্য বিক্রেতা করে না। ফলে ভোক্তাদের মানসিকতা তৈরি হয় যে বিজ্ঞাপনের দ্রব্যটি অন্যান্য দ্রব্যের চেয়ে ভাল। এছাড়া দ্রব্যের দোকানের অবস্থান, বিক্রেতাদের উপস্থাপনা, দোকানের ডেকোরেশান এবং ঋণে দ্রব্য ক্রয়বিক্রয় দ্রব্যের সমজাতীয়তা শর্ত নষ্ট করে এবং একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টি করে এবং
- গ. ট্রেড মার্ক এবং প্যাটেন্ট অধিকার প্রদান করে সরকার দ্রব্যের সমজাতীয়তা শর্ত নষ্ট করতে পারে।
৩. অবাধ প্রবেশ এবং প্রস্থান : একচেটিয়া প্রতিযোগিতার একটি অন্যতম শর্ত হল উৎপাদনকারী ফার্মসমূহ অবাধে শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশ বা প্রস্থান করতে পারে না। কিন্তু পূর্ণ প্রতিযোগিতায় পারে। দীর্ঘকালে কোন সময় শিল্পের অস্বাভাবিক মুনাফা থাকলে ফার্ম শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশ করবে এবং ক্ষতি হলে বেড়িয়ে যাবে। এখানে কোনরূপ বাধা বা শর্ত নেই।
৪. চাহিদারেখার প্রকৃতি : একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ফার্ম উৎপাদনের একটি ক্ষুদ্র অংশ যোগান দিয়ে থাকে। কাজেই দাম সামান্য বৃদ্ধি করলে কিছু ভোক্তা তার দ্রব্য ক্রয় ছেড়ে দেয় বলে ফার্মের চাহিদা অনেক কমে, তবে চাহিদা শূন্য হবে না। কারণ কিছু কিছু ভোক্তা তার দ্রব্যে এবং বিক্রেতার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়। তাই দাম বৃদ্ধি পেলেও বিক্রয় শূন্যে পৌঁছে না। অন্যদিকে, দাম হ্রাস করলে বিক্রয় অনেক বেড়ে যায়। কারণ নিজ ভোক্তাসমূহ ছাড়াও অনেক ভোক্তা দ্রব্যটি ক্রয়ে এগিয়ে আসে। তাই উৎপাদনকারী ফার্মের চাহিদারেখা বাম থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হবে। তবে চাহিদারেখার স্থিতিস্থাপকতা এক এক বিক্রেতার এক এক রকম হতে পারে। চাহিদারেখার ঢাল নির্ভর করে ফার্মের দ্রব্যগুলো অন্যান্য উৎপাদনকারীর দ্রব্যের সাথে কতটুকু পরিবর্তক এবং শিল্পের উৎপাদনে ফার্মের শেয়ার কতটুকু তার উপর।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সাধারণত উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়।